১৪ নভেম্বর,২০১৯
।। অনলাইন ডেস্ক।।
ফেনীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন সোনাগাজী মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস-শামস জগলুল হোসেনের আদালতে আত্মপক্ষ সমর্থনে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করেন। আত্মপক্ষ সমর্থন শেষে মামলার যুক্তি উপস্থাপনের জন্য ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত। এ মামলায় ১২ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।
ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন আদালতে অঝোরে কেঁদে বলেন, এ অভিযোগে যত বড় শাস্তিই দেন না কেন, তার চেয়ে বড় শাস্তি আমি পেয়ে গেছি। জ্ঞানত আমি কোনো অপরাধ করি নাই। আমি মুসলমান, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। আমি স্যারের কাছে ন্যায়বিচার চাই।
মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘সামাজিকভাবে এ মামলার কারণে হেয় হয়েছি অনেক। আমার ১৫ বছরের ছেলে স্কুলে যেতে পারে না। আমি ১০টা খুন করলেও এতো বড় সাজা হতো না। ৭০/৭৫ বয়সী আমার মা এ ঘটনায় খুবই মর্মাহত হয়েছেন। আমি কী অপরাধ করলাম! উনি (বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন) যদি ভিডিওটা পুরোপুরি দেখতেন, তবে এ মামলা করতেন না। উনি ভিডিও ঠিকমতো দেখেনই নাই।
তিনি বলেন, গত ৬ থেকে ৭ মাস আমাকে সারাবিশ্বে কলঙ্কিত করা হয়েছে। চাকরি থেকে আমাকে রংপুরে ক্লোজ করা হয়। আমার বিরুদ্ধে জুতা মিছিল পর্যন্ত হয়েছে। অথচ আমি এ মামলায় আইওকে (তদন্তকারী কর্মকর্তা) সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিয়েছি। আমার মোবাইল তার কাছে জমা দিয়েছি। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য এমন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে মামলা পড়েছে যিনি আইনানুযায়ী তদন্ত করেননি। উনি (আইও) নিজেই তদন্তের প্রয়োজনে ছবি তুলেছেন।
তখন বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, আপনার জবানবন্দি গ্রহণকালে আইও কোনো ভিডিও নিয়েছেন কি-না? জবাবে ওসি মোয়াজ্জেম বলেন, না।
ওসি মোয়াজ্জেম বলেন, আমার থানায় সিসি ক্যামেরা আছে। আমি তদন্ত কর্মকর্তাকে যে স্ক্রিন শট দিয়েছি, সেখানে তারিখ দেখে তিনি ঘটনার সময় উল্লেখ করেছেন। এডিশনাল ডিআইজি ফায়েজ স্যার আমার কাছ থেকে ভিডিও নিয়েছেন। সেটা আমি তাকে হোয়াটসঅ্যাপে দিয়েছি। আমি নিজে ফেসবুক ব্যবহার করি না। শুধু ঘটনার পরদিন রাতে এসপি সাহেব ফেসবুকে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে দেন। দুইদিন পরই আমি তা আবার ডিয়েক্টিভ করে দেই।
তখন বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, মামলা দায়ের বা তদন্তের জন্য ভিডিও রেকর্ডের কোনো নির্দেশ করে কোনো আইন আছে কি-না? জবাবে মোয়াজ্জেম বলেন, না সেরকম কোনো আইন নেই। তবে টেকনোলজির আপডেটের কারণে আমরা অনেক কিছু ভিডিও ধারণ করে রাখি। এটা আমাদের প্র্যাকটিস আছে এক্ষেত্রে পুলিশ হেডকোয়ার্টারের কিছু নির্দেশনাও আছে।
তখন বিচারক বলেন, বাদী, স্বাক্ষী তো দূরে থাক গ্রেফতারের পর আসামির ভিডিও বা ছবি না তোলার ব্যাপারে তো হাইকোর্টের নির্দেশনাই আছে।
তখন মোয়াজ্জেম বলেন, জ্বি তা আছে। এগুলো ভিডিও করে আমরা কাউকে দেই না। শুধুমাত্র আদালত চাইলে সাক্ষ্য হিসেবে তা উপস্থাপন করা হয়। আমরা এটা ফেসবুক বা ইউটিউবে পোস্ট করি নাই। কিভাবে গিয়েছে তা স্যোশাল মিডিয়ায় গিয়েছে তা আমি জানি না।
এসব বক্তব্যের সবিস্তার তিনি লিখিত আকারে আদালতে জমা দেন। তবে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে কোনো সাফাই সাক্ষী দেবেন না বলে জানান তার আইনজীবী ফারুক আহাম্মাদ। এরপর আদালত আগামী ২০ নভেম্বর এ মামলার যুক্তিতর্কের জন্য দিন ধার্য করেন।
এ মামলায় বাদী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন, নুসরাতের মা, ভাই ও দুই বান্ধবী, দুই পুলিশ সদস্য ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ মোট ১২ জন রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য দেন। গত ১২ নভেম্বর তদন্ত কর্মকর্তার জেরে শেষের মাধ্যমে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ওইদিনই আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারা অনুযায়ী আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য বৃহস্পতিবার দিন রেখেছিলেন। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার আসামি ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন আত্মপক্ষ সমর্থন করে আদালতে তার বক্তব্য তুলে ধরেন।
সূত্রঃ বাংলানিউজটুয়েন্টিফোরডটকম