সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ফেনীতে সহায়তা পাচ্ছে ১ লাখ ৭ হাজার ৭শ ২০জন অসহায় ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষ। প্রসঙ্গক্রমে এ তথ্য জানিয়েছেন ফেনী জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মোস্তফা মোস্তাকুর রহিম খান।


জেলা সমাজ সেবা কার্যালয় হতে প্রাপ্ত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্যসূত্রে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট ১১টি খাতে ফেনীতে ১৭ কোটি ৭৭ লাখ ২০ হাজার ৮শ ৯৮ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। একই সূত্রে দেখা যায়, এতে নগদ হস্তান্তর, খাদ্য নিরাপত্তা ও কর্মসংস্থানসহ নানা কর্মসূচি রয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ফেনীতে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।


ফেনী জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় ৪২ হাজার ৯শ ৬০ জনকে বয়স্ক ভাতা, ১৬ হাজার ৮শ ৮২জন বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা মহিলা ভাতা, ১৫ হাজার ২শ ৬৪ জনকে অসচ্ছ্বল প্রতিবন্ধী ভাতা, ৯শ ১১ জনকে প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। এসব প্রকল্পে ১২ কোটি ৬২ লাখ ৭১ হাজার ৫০ টাকা মোট বরাদ্দের মধ্যে ১০ কোটি ৩৪ লাখ ৪ হাজার ৪শ ৫০ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।


উপপরিচালক আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে ১৪২টি সেবাখাত রয়েছে। যার মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, বিধবা ভাতা উল্লেখযোগ্য। তিনি জানান, এমন কিছু উদ্যোগ রয়েছে যেগুলো জেলার অবস্থানগত ভিত্তিতে সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন কর্মসূচি রয়েছে দেশের ৪ জেলায়। এছাড়াও হাওড় অঞ্চলের জীবনমান উন্নয়নে সরকারের কর্মসূচি রয়েছে।


ফেনী জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে কামার, কুমার, জেলে, মুচিসহ আরও কিছু পিছিয়ে পড়া পেশাজীবীদের সরকার ভাতা প্রদানের আওতায় আনছে।


জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মাধবী বড়ুয়া জানান, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় দুঃস্থ মহিলা উন্নয়ন (ভিজিডি) প্রকল্পে ৫ হাজার ৬শ ১৩জন মহিলাকে বিতরণের জন্য ২ হাজার ২০ মেট্রিক বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১ হাজার ৮ শ ৫২ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে।


তিনি জানান, এছাড়া ৬ হাজার ৪শ ৬২জন দরিদ্র মা ও কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা তহবিল কর্মসূচির আওতায় ২ হাজার ৭শ ৫০ জনকে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। এ দুই প্রকল্পে মোট বরাদ্দের মোট ৪ কোটি ৪২ লাখ ১৭ হাজার ৬শ টাকা সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।


যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ফেনীর উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আহম্মদ কবির মজুমদার জানান, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির আওতায় ২২০ জন বেকার যুবক ও মহিলাদের জন্য ৭০ লাখ ৬৪ হাজার ৭শ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ৪১ লাখ ৫৯ হাজার ৬শ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। তিনি জানান, ২০১৮ সালে ২৯৩জনকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়। তন্মধ্যে ২২০জন প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করার পর তাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংযুক্তি দেয়া হয়।


জেলা সমাজসেবা কার্যালয় হতে প্রাপ্ত প্রতিবেদনে জানা যায়, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্পে ১৬ হাজার ১শ ৯০ জন সুবিধাভোগীর জন্য ১ লাখ ৬৭ হাজার ৫শ ৪৮ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। তারমধ্যে ১ লাখ ৩০ হাজার ৮শ ৪৫ টাকা বিতরণ করা হয়েছে।


দুঃস্থ মহিলা উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় মাসে ৩০ কেজি করে চাল পাচ্ছেন ফেনীর ছাগলনাইয়ার মহামায়া ইউনিয়নের মনোয়ারা বেগম। তিনি জানান, স্বামীহীন সংসারে সরকারের চাল আমার ইজ্জত বাঁচিয়েছে।


মহামায়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গরীব শাহ হোসেন বাদশা চৌধুরী জানান, চলতি অর্থ বছরে ১৬০ জনকে ভিজিডি প্রকল্পের আওতায় এবং ২২০ জন অনগ্রসর ও প্রতিবন্ধী কোটায় ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় ৩ হাজার ৫শ জন ব্যক্তি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় সহায়তা পেয়েছে।


সোনাগাজীর পালগিরি গ্রামের মাতৃত্বকালীন ভাতা পাচ্ছেন মোমেনা বেগম। তিনি বলেন, সন্তান গর্ভে নিয়ে কাজ করা কষ্টকর। এ ভাতা আমার জীবন কাটাতে সাহায্য করছে।


সোনাগাজীর মতিগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ রবিউজ্জামান বাবু জানান, চলতি অর্থবছরে ইউনিয়নে ৭০জনকে মাতৃত্বকালীন ভাতা, ১১৬ জনকে ভিজিডি, ৬০জন বিধবাকে ও ৩৫জন প্রতিবন্ধীকে ভাতা প্রদান করা হচ্ছে।