কর্মহীন হয়ে পড়ায় গত বছরের লকডাউনের প্রথম তিন মাস সঞ্চিত অর্থ দিয়ে সংসার চালিয়েছেন তিনি। সঞ্চিত অর্থ শেষ হয়ে গেলে শুরু হয় ধার দেনা। এক সময় তাও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম দুর্দিনের মুখে পড়েন তিনি। এমন সময় এল যখন ঘরে একদানা খাবারও ছিল না। লজ্জায় কারও কাছে হাত পাততে না পেরে শেষমেষ ৩৩৩-তে ফোন করলেন তিনি। জানালেন গোপনে সহায়তা করার কথা। এরপর পরই তার দুয়ারে এসে পৌঁছে গেল সরকারের খাদ্য সহায়তা। সে সহায়তা দিয়ে এক সাপ্তাহের অভাব মিটল তার। এভাবেই ৩৩৩-তে সেবার পাবার বিষয়ে জানালেন ফেনীর একটি সুপার শপে কর্মরত বিক্রয় কর্মী হাবিবুর রহমান।
করোনাকালে আর্থিক সংকটে পড়েছেন সাধারণ মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের মানুষ। হাবিবুর রহমানের মত এমন অনেকেই সাহায্য পেতে ফোন করেছেন ৩৩৩-তে।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, কর্মহীনতার কারণে সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবার সবচেয়ে বেশি কষ্টে দিন যাপন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে সেবা নিশ্চিতকারী একাধিক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ৩৩৩-তে ফোন করে খাদ্য সহায়তা নিয়েছেন মানুষ, যারা প্রকাশ্যে কারও কাছে হাত পাততে পারছেন না।
চলমান করোনা প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতিতে জেলা জুড়ে কত মানুষ ৩৩৩-তে ফোন করে খাদ্য সহায়তা নিয়েছেন তার কোন পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই।
ফেনী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরীন সুলতানা জানান, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রথম ধাপে ফেনী সদরে ৩৩৩-তে ফোন করে সরকারি খাদ্য সহায়তার চাহিদা ছিল উল্লেখযোগ্য।
সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও নাসরীন সুলতানা জানান, সদরে এক হাজারেরও অধিক ব্যক্তি ফোন করে খাদ্য সহায়তা চেয়েছেন, তাদের প্রত্যেককেই সহায়তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যারা গোপনে সহযোগিতা চেয়েছেন, তাদের গোপনেই সহায়তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ফেনী জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহিদুজজামান বলেন, করোনাকালে সরকারের আর্থিক বরাদ্দ, চাল বরাদ্দ এবং সব ধরনের ভাতা চালু ছিল। দেশের কোথাও খাদ্য সংকট দেখা গিয়েছে এমন কোন নজির নেই। এরপরও ৩৩৩-তে ফোন করে যারা খাদ্য সহায়তা চেয়েছেন তাদের প্রত্যেকে পেয়েছেন। কিন্তু খাদ্য পৌঁছে দিতে গিয়ে দেখা গিয়েছে অনেকে অধিক পাবার আশায় ফোন করে সহায়তা চেয়েছেন।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, সরকারি তথ্য-সেবা এবং সামাজিক সমস্যার প্রতিকারে সহায়তায় দুই বছর আগে চালু হওয়া হেল্পলাইন ‘৩৩৩’ পরিষেবাকে দেশের জরুরি খাদ্য সেবায় যুক্ত করা হয়। এতে যিনি ফোন করে যে সেবা চেয়েছেন, তাকে সে সহায়তা করা হয়েছে।
সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অজিত দেব জানান, করোনা প্রাদুর্ভাবের প্রথম ধাপে উপজেলায় ৫০ জনের মত মানুষ ৩৩৩- তে ফোন করে খাদ্য সহায়তা নিয়েছেন। দ্বিতীয় ধাপে এখন পর্যন্ত কেউ ফোন করে নি। যদি কেউ করে থাকেন, তাহলে অবশ্যই তাকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে।
অন্যদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে দরিদ্রদের পাশাপাশি মধ্যবিত্ত যারা দরিদ্র হয়ে পড়ছেন, তাদেরও খাদ্য সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। লজ্জায় চাইতে না পারা এ জনগোষ্ঠী ৩৩৩ নম্বরে কল দিলেই সরকারের তরফ থেকে তাদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হবে। মহামারিতে লকডাউন এবং এর পরবর্তী সময়ে সরকারের সহায়তা নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান রোববার (২৫ এপ্রিল) সচিবালয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান।
জানা গেছে, করোনা ভাইরাসের এ সংকটের সময়ে দেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হেল্পলাইনে পরিণত হয়েছে কলসেন্টার ‘৩৩৩’। যে কোনো সময়ে ‘৩৩৩’ নম্বরে ফোন দিয়ে মানুষ করোনা ভাইরাস সম্পর্কে তথ্য, চিকিৎসকের পরামর্শ, খাদ্যসহ বিভিন্ন সহায়তা পাচ্ছেন। সরকারের এ ইতিবাচক উদ্যোগটি সাধারণ জনগণের মধ্যে বহুল প্রশংসিত ও গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে।