ফেনী সদর উপজেলা ভূমি অফিস প্রাঙ্গণে অপেক্ষমানের নজর কাড়ছে মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থভিত্তিক পাঠাগার 'বর্ণমালায় ৭১'। ভূমি সংক্রান্ত সেবার জন্য আগতদের কাজের ফাঁকে অবসরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ঐতিহ্য ও বঙ্গবন্ধুকে জানার সুযোগ করে দিচ্ছে পাঠাগারটি। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মৌমিতা দাশ।
সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয় ভবনের সামনে পাঠাগারটির অবস্থান। জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙের পরিপূর্ণ ব্যবহার পাঠাগারের সৌন্দর্য বাড়িয়েছে বহুগুণ। পাঠাগারের উপরের অংশের টিনের চাল বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে রুপ দেয়া হয়েছে। ভিতরে অংশের দেয়াল গ্রামীণ ঐতিহ্য বাঁশের তৈরি ঘরের মতো করে সাজানো। ফ্লোরে বিছানো হয়েছে সবুজ কার্পেট। পাঠকদের বসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে লাল-সবুজ রঙের মোড়াতে। তিনটি দৃষ্টিনন্দন বুক শেলফ সেজেছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন গ্রন্থে।
বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনী নিয়ে রচিত বই ছাড়াও এখানে শোভা পাচ্ছে ফেনী-চট্টগ্রাম-নোয়াখালী জেলা নিয়ে লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই সমূহ।
পাঠাগারের উদ্যোক্তা মৌমিতা দাশ জানান, সদর উপজেলা ভূমি অফিসে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে সেবা গ্রহণের জন্য আসেন৷ অনেক সময় বিভিন্ন কারণে সেবা দিতে সময় লেগে যায়, তখন তাদের অপেক্ষা করতে হয়। অপেক্ষার এই সময়টি অনেকের জন্য বিরক্তিকর। অপেক্ষার সময়টিতে মানুষ বিরক্ত না হয়ে যেন কিছু শিখতে ও জানতে পারে তার জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি পাঠাগার গড়ার সিদ্ধান্ত নিই। জেলা প্রশাসক মোঃ ওয়াহিদুজ্জামান ও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরীন সুলতানার পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা ভূমি অফিসের একটি কক্ষকে পূর্ণাঙ্গ পাঠাগারে রূপ দেয়া হয়েছে।
মৌমিতা দাশ জানান, পাঠাগারে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, ৬ দফা : স্বাধীনতার অভিযাত্রায় বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর অপ্রকাশিত চিঠিপত্র, আমার ভালোবাসার দেশ,যুদ্ধ করেছি বিজয় এনেছি, ফেনী-বিলোনিয়া রণাঙ্গনের এক প্রান্তর, একাত্তরের দিনগুলি, সত্য মামলা আগরতলা, মূলধারা'৭১, আমি বিজয় দেখেছিসহ মোট ৫৫ টি গ্রন্থ সংগ্রহ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও বাড়ানো হবে। তিনি আরও বলেন, ফেনী জেলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও জেলার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গ্রন্থসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের দূর্লভ আলোকচিত্র সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। যাতে করে পাঠক এখান থেকে ফেনীর ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কেও ধারণা লাভ করতে পারেন। এক্ষেত্রে যাদের সংগ্রহে ফেনী জেলা সম্পর্কিত গ্রন্থ বা দূর্লভ আলোকচিত্র আছে তাদের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
মোঃ রাশেদ নামে একটা দর্শনার্থী বলেন, ভূমি অফিসে পাঠাগার স্থাপন একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কাজের ফাঁকে এখানে বসে বই পড়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যাবে। পাঠাগারের দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ পাঠককে বই পড়তে উদ্বুদ্ধ করবে। ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তিনি।
রিয়াজ উদ্দিন নামে আরেক সেবা গ্রহীতা বলেন, ভূমি সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রয়োজনে এখানে আসা হয়ে। অনেক সময় অপেক্ষা করতে হয়। অপেক্ষার সময়টিতে এখন অন্তত বই পড়ে কাটানো যাবে।
২৯ জুলাই বুধবার মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক পাঠাগার বর্ণমালায়'৭১ উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদ (এনডিসি)। অফিস চলাকালীন সময়ে সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকবে পাঠাগারটি।