প্রায় সাড়ে ৮ বছর ধরে একটানা একই চেয়ারে বসে জেলা পরিষদের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিজের একান্ত আপনজন হিসেবে সকলকে ভালোবেসেছিলেন সদ্য প্রয়াত চেয়ারম্যান আজিজ আহম্মদ চৌধুরী। সেই আপনজনকে হারিয়ে এখনও শোক-শূণ্যতায় ভুগছে জেলা পরিষদের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে জেলা পরিষদের ড. সেলিম আল দীন মিলনায়তন হল রুমে প্রয়াত চেয়ারম্যানের স্মরণে আয়োজিত স্মরণ সভা ও দোয়া মাহফিলে সেই শূণ্যতার কথা জানালেন তারা। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করলেন সকলের প্রিয় মানুষটিকে।
জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু দাউদ মোঃ গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ফয়জুল কবির, মরহুমের পরিবারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর ছোট ভাই ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আমির আহম্মদ চৌধুরী রতন, ছোট ছেলে ফেনী জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) চৌধুরী আহমেদ রিয়াদ আজীজ রাজীব।
বক্তব্য রাখছেন আমির আহম্মদ চৌধুরী রতন
সভায় বড় ভাইয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আমির আহম্মদ চৌধুরী রতন বলেন, আমাদের পরিবারের সবাই শোকাবহ অবস্থার মধ্যে আছি। আমি যদিও বাইরে থাকি কিন্তু পত্র-পত্রিকার লেখালেখি দেখে বুঝতে আমার কোন সমস্যা হয়নি উনি কতটা শ্রদ্ধেয় ছিলেন ফেনীর মানুষের কাছে। ওনাকে যে সম্মান টা আপনারা দিয়েছেন সে সম্মানের কথা চিন্তা করেও কিছুটা মানসিক শান্তিবোধ করছি। ফেনী জনপদের মানুষ আজকে সত্যি শোকাহত। তিনি বলেন, আমার বড় ভাই নিরহংকারী ছিলেন, সৎ ও দেশপ্রেমিক ছিলেন। এসময় সকলের তার জন্য দোয়া কামনা করেন তিনি।
সভায় স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে জেলা পরিষদ নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, এই জেলা পরিষদ উনার বাড়ির মতো ছিল। অনেক ভালোবাসতেন আমাদের। উনি যে টাইমে অফিস আসতেন কোন সরকারি কর্মকর্তাও এত তাড়াতাড়ি অফিসে আসেন না। উনি অফিসে আসতেন মানুষের কথা শুনতেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করতেন।
আবু দাউদ মোঃ গোলাম মোস্তফা বলেন, সত্যিকার অর্থে একজন জনপ্রতিনিধি বলতে যা বুঝায় উনি তেমন মানুষ ছিলেন। এই করোনার সময়ও উনি বাড়িতে বসে ছিলেন না, অফিসে চলে আসতেন। আমরা দোয়া করি আল্লাহ যেন ওনাকে বেহেশত নসিব করেন।
সভায় বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন তার ছোট ছেলে চৌধুরী আহমেদ রিয়াদ আজীজ রাজীব। তিনি বলেন, আমার বাবা পুরো ফেনী জেলার জন্য কাজ করে গিয়েছেন। ফেনী জেলার প্রতিটি উপজেলায়, ইউনিয়নে, ওয়ার্ডে ওনার উন্নয়নের কাজ রয়েছে। উনি শুধু একদলের নেতা ছিলেন না, সর্বদলীয় শ্রদ্ধেয় নেতা ছিলেন। আমার বাবার জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন যাতে উনি জান্নাতবাসী হোন।
সভায় উপস্থিতির একাংশ
সভা শেষে মরহুম আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন ছুফী ছদর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিম মাওলানা জাফর আহম্মদ চৌধুরী। এর আগে ১৫ জন মাওলানা সকাল ১১ টায় একযোগে পবিত্র কোরআন খতম করেন।
জেলা পরিষদের সদস্য মাহবুবুল আলম লিটনের সঞ্চালনায় এতে আরো উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সদস্য নুরুল আবছার আপন, বাদল হাজারী, হাজী জামাল উদ্দিন, ফয়েজ আহম্মদ, ফারুক হোসেন, আরিফুল ইসলাম, দেলওয়ার হোসেন, সালেহ আহম্মদ, মোহাম্মদ স্বপন, জেলা পরিষদের কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং আজিজ আহম্মদ চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা।
রবিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২ টা ২০ মিনিটের দিকে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান ফেনীর এ প্রতিথযশা রাজনীতিবিদ। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। মৃত্যুকালে তিনি ২ ছেলে ও ২ মেয়েসহ আত্মীয় স্বজন, অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখেন গেছেন। সোমবার সন্ধ্যায় তাকে ফুলগাজীর আন্দপুর ইউনিয়নের হাসানপুরে চৌধুরী বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।