স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে মৎস্য চাষিদের স্বপ্ন। উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় বন্যায় প্লাবিত হয়েছে ১ হাজার ৪৫১টি পুকুর। ৫০০ হেক্টর আয়তনের জলাশয় থেকে বন্যায় ৫৯৫ মেট্রিক টন মাছ ও ১ কোটি ৭০ লাখ পোনা মাছ ভেসে গেছে। এতে মৎস্য খামারিদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা।
স্থানীয মৎস্য চাষীরা জানান, বেশির ভাগ মৎস্য চাষি ব্যাংক, এনজিও ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করছিলেন।
কিন্তু হঠাৎ এমন ভয়াবহ বন্যা নিঃস্ব হয়ে পথে বসতে হবে এটা কখনও স্বপ্নেও ভাবেননি তারা।
পূর্ব চন্দ্রপুর মডেল ইউনিয়নের ঢেউয়ালিয়া গ্রামের স্বপ্ন মৎস্য খামারের স্বত্বাধিকারী আবদুর রহমান বলেন, ‘বন্যার পানিতে ভেসে গেছে আমার প্রায় ২৫ লাখ টাকার মাছ। ৬টি পুকুর (৪৫০ শতক) খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ব্যাংক লোন করে মাছ চাষে ব্যয় করেছি। এ বন্যায় কেড়ে নিয়েছে আমার সর্বস্ব। এখন কীভাবে ব্যাংক লোন শোধ করবো কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছি না।’
রামনগর ইউনিয়নের আজিজ ফাজিলপুর গ্রামের মৎস্য চাষি শহীদ উল্যাহ বলেন, বন্যায় আমার ১৩০ শতক পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। আমার প্রায় ১৫ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
সিন্দুরপুর ইউনিয়নের মৎস্য চাষি মোঃ জাকির হোসেন বলেন, ‘বন্যায় আমার প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে। কেড়ে নিয়েছে আমার পরিবারের স্বপ্ন। মাছ চাষের পেছনে আমার কাছে যতটুকু অর্থ ছিল সব ব্যয় করেছি। পাশাপাশি আত্মীয় স্বজনদের থেকে ধার-দেনা করেছি। এ বন্যা জীবনটা ল-ভ- করে দিয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবো কি না আল্লাহ ভালো জানেন।’
উপজেলার পূর্ব চন্দ্রপুর মডেল ইউনিয়নের নয়ানপুর গ্রামের মৎস্য চাষি মোঃ আবুল হাশেম হেলাল বলেন, বন্যায় পানিতে আমার ৬ একর পুকুরের প্রায় ২২ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। সরকার যদি মৎস্য চাষিদের একটু সহযোগিতা করে তাহলে হয়তো আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।’
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রিয়াংকা সাহা বলেন, উপজেলা মৎস্য চাষি ও খামারিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৮৪০ জনের তালিকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট তথ্য প্রেরণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে আরও প্রায় পাঁচ শতাধিক আবেদন জমা হয়েছে। কিছু বরাদ্দ এসেছে নির্দেশনা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের মাঝে পোনা বিতরণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় মৎস্য খাতের ক্ষতিগ্রস্ত খামারিদের জাতীয় পরিচয় পত্রের ভিত্তিতে উক্ত তালিকা করা হয়েছে। মৎস্য চাষিদের ক্ষতি নিরসনে মাঠ পর্যায়ে নিরলসভাবে মৎস্য দপ্তর কাজ করে যাচ্ছে।