২৫ নভেম্বর, ২০১৯ ।। ফেনী ডেস্ক ।।
কক্সবাজারের সোনাদিয়া, সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতে ডিম পাড়তে আসে বৃহদাকার সামুদ্রিক মা কাছিম। টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের সাগর সৈকতে দু’একটি কাছিম চোখে পড়লেও কক্সবাজার, হিমছড়ি, পেঁচার দ্বীপ, ইনানির সাগর সৈকতে সামুদ্রিক কাছিম আর ডিম দিতে আসে না। অপরিকল্পিত আবাসন, সৈকতে আলোর ঝিলিক ও পর্যটকের অনিয়ন্ত্রিত পদচারনায় কাছিমের ডিম দেবার পরিবেশ গত পাঁচ বছরে নষ্ট হয়ে গেছে।
কক্সবাজার, সোনাদিয়া, সন্দীপ, কুতুবদিয়াসহ বিভিন্ন উপকূল থেকে প্রায় বিশ হাজার ট্রলার মাছ শিকার করছে গভীর সমুদ্রে। জেলেরা ট্রলার থেকে ভাসাজাল, ডুবাজাল অনিয়ন্ত্রিত যন্ত্রচালিত ট্রলারসহ প্রায় ৪০ থেকে ৬০ ফুট লম্বা বিহুন্দী ও লাক্ষ্যা জাল পেতে রাখে সাগরতলে। গভীর সমুদ্রে জেলেদের জালে কাছিম আটকা পড়ে। জেলেরা ঝামেলা এড়াতে তাদের বৈঠা, বাঁশ, কাঠ ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করে।
অপরদিকে হাজার কিলোমিটিার পথ পেড়িয়ে সামুদ্রিক কাছিম মা’ হবার তাড়নায় ছুটে আসে এদেশের সাগর সৈকতে। কাছিমগুলো যখন সৈকতে এসে পৌঁছায় তখন তারা এক একটি মস্তকবিহীন লাশ। নিথর দেহ নিয়ে ভেসে আসে জোয়ারের পানিতে। শরীরে তাদের আঘাতের দাগ।
সামুদ্রিক কাছিম গবেষক জহিরুল ইসলামের গবেষনায় প্রতি বছর উপকূলবর্তী এলাকাতে ছয়’শ থেকে আট’শ মৃত কাছিম সৈকতে ভেসে আসে। উপকূলীয় এলাকায় উন্নয়ন, হোটেল-মোটেলের আলোর ঝলক, প্রবাল ধ্বংস, সৈকত দূষন কাছিমের বংশ বিস্তারে বড় প্রতিবন্ধকতা। সৈকতে আলো জ্বালালে এরা সহজে বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং ডিম না দিয়ে ফিরে চলে যায়। কখনও আবার বালুচরে উঠতে না পেরে পানিতে ডিম দিয়ে দেয়। তবে সে ডিমগুলো থেকে কখনও বাচ্চা ফুটে না। মা হবার আকাঙ্খা অপূরণ রেখে ফিরে যেতে হয় অন্য জায়গায়।
বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় এখন পর্যন্ত ৫ প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিমের উপস্থিতি রয়েছে। তবে সামুদ্রিক কাছিম গবেষনা প্রতিষ্ঠান ‘মেরিন লাইফ এ্যালাইন্স’ জানায় এ সংখ্যা কমে বর্তমানে শুধু ‘অলিভ রিডলে’ বালুচরে আসছে। একটি সামুদ্রিক কাছিম প্রাপ্তবয়স্ক হতে ২০ থেকে ২৫ বছর সময় লাগে। ওজন চল্লিশ থেকে ষাট কেজি হয়।
স্ত্রী কাছিম প্রজাতিভেদে বছরে তিন থেকে সাতবার ডিম পেড়ে থাকে। শুকনো বালু সরিয়ে ৫০-৬০ সে:মি বা ১০০-১১০ সে:মি গভীর কলসী আকারের গর্ত করে ১০০ থেকে ১৫০টি গোলাকার সাদা ডিম দেয়। সামুদ্রিক কাছিমের বাচ্চা প্রাকৃতিক নিয়মে ডিম ফুটে বের হয়ে সমুদ্রে চলে যায়। জীবন বাচাঁতে সাগরে নেমেই টানা ৪৮ ঘন্টার মতো সাঁতরে গভীর সাগরে যায়।
বর্তমানে সাগর সৈকতে মেরিন লাইফ এ্যালাইন্স নামের একটি সংস্থা সাগরের কাছিম নিয়ে ব্যাপক গবেষণা শুরু করেছে। বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় তারা কাছিমের ডিম সংরক্ষণ সহ কাছিমের জীবন বৃত্তান্ত আরও রহস্য উদঘাটন করছে।
সূত্রঃ এগ্রিবার্তাডটকম
ছবিঃ ইন্টারনেট