সম্প্রতি রাজস্ব আয় বাড়াতে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তবর্তীকালীন সরকার। কিন্তু কর বাড়ানোর এই উদ্যোগে ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়েছে। তারা বলছেন, নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সামগ্রিক ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবাসায় জুলাই-আগস্টের প্রভাব এখনো কাটেনি। সেই ক্ষতি এখনো পোষানো সম্ভব হয়নি। কর বাড়ানোর এই উদ্যোগ কার্যকর হলে ক্ষতি পোষানোর বদলে উল্টো আরও ক্ষতি হবে। তারা আরও বলেন পোশাক, এলপিজি-এগুলো সবই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। সরকার দ্রব্যমূল্য না বাড়ার আশ্বাস দিলেও ব্যবসায়ীরা বলছেন বাস্তবতা ভিন্ন। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ভ্যাট না বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

জানা যায়, রেস্তোরাঁয় খেতে গেলে খাবারের বিলের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বাড়তে যাচ্ছে। আগে শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বা এসি রেস্তোরাঁয় খাবারের বিলের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হতো। সেটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হতে পারে। মিষ্টি কেনার ক্ষেত্রে ভ্যাট হার সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। ভ্রমণের ক্ষেত্রে নন-এসি হোটেল সেবার ভ্যাট হারও বাড়তে পারে। বর্তমানে নন-এসি হোটেল সেবার ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। সেটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রেস্তোরাঁর পাশাপাশি পোশাক কেনার ক্ষেত্রেও ভ্যাটের হার বাড়াতে পারে। বর্তমানে তৈরি পোশাকের আউটলেটের বিলের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। এটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। রেস্তোরাঁ, পোশাক, হোটেল ছাড়াও অন্য যেসব খাতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বসতে যাচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হলো উৎপাদন পর্যায়ে বিস্কুট, আচার, সিআর কয়েল, ম্যাট্রেস, ট্রান্সফরমার, টিস্যু পেপার ইত্যাদি।

মাহির চৌধুরী নামের এক রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী বলেন, সরকার কর বাড়ানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি থেকে সরে না আসলে আমরা এ সেক্টরের ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। রেস্টুরেন্টে খাবারের বিলের ওপর ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট নেওয়া হতো সেটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা আমাদের জন্য বড় ক্ষতি। কর বাড়ানোর কারণে আমরা যে ক্রেতা পেতাম, সেটি কমে যাবে।

ফরিদ ভুইঁয়া নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, পণ্যের দাম এমনিতেই বেড়ে গেছে, এর ওপর নতুন করে কর বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা আমাদের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি বড় আর্থিক ক্ষতি। কর বাড়ানোর কারণে ক্রেতাদের সংখ্যা আরও কমে যাবে, যা ব্যবসার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

রফিকুল ইসলাম নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, সরকার হুট করে কর বাড়ানোর যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি আমাদের ব্যবসায়ীদের জন্য অন্যরকম একটা চাপ সৃষ্টি করবে। পণ্যের দাম বৃদ্ধি, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিসহ সব মিলিয়ে ব্যবসায় করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের এই নতুন উদ্যোগ কার্যকর হলে আমরা বিপদে পড়ব।

এ প্রসঙ্গে ফেনী শহর ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান সোহেল বলেন, সরকারের কর বাড়ানোর উদ্যোগ ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ বাড়াবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তা সকলের জন্য ভাল হত। কিন্তু কর বাড়ানো হলে তার চাপ ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাকেই নিতে হবে। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কর বাড়ানোর উদ্যোগটি পরিহার করলে সকলের জন্য ভাল হবে।


ভোক্তার অস্বস্তি
সরকারের কর বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়ে একদিকে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা, অন্যদিকে অস্বস্তি প্রকাশ করছেন ভোক্তারা। তারা বলছেন, সরকার কর বাড়ানোর যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি কার্যকর হলে ব্যবসায়ীরা লাভ করার জন্য নিম্নমানের পণ্যে সরবরাহ করবে, এতে করে টাকা দিয়েও মানসম্মত পণ্য মিলবে না। এর ফলে বাজারে সঠিক মানের পণ্য পাওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে এবং অস্থিরতা তৈরি হবে।

ইসমাইল হোসেন নামের এক ভোক্তা বলেন, কর বাড়ানোর উদ্যোগ কার্যকর হলে ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে লাভ করতে নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ করবে। তখন টাকা দিয়েও আমরা মানসম্মত পণ্য কিনতে পারবো না।

আশরাফ উদ্দিন নামের আরেক ভোক্তা বলেন, বর্তমানে রেস্টুরেন্টে খাওয়ার জন্য ৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদান করতে হয়, কিন্তু সরকার এখন এই ভ্যাট ১৫ শতাংশে উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে। যদি এই উদ্যোগ কার্যকর হয়, তবে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা নিম্নমানের খাবার সরবরাহ করতে বাধ্য হবে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

শাহাদাত হোসেন বাদল নামের আরেক ভোক্তা বলেন, বিগত সরকারগুলো জনগণের প্রতি যথাযথ মনোযোগ দেয়নি, তবে বর্তমান সরকার জনগণের সরকার। সরকারের উচিত দেশে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা স্থিতিশীল করা। সরকারের উচিত জনগণের স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। বর্তমানে যে কর বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেটি সরকারের নিজস্ব স্বার্থের প্রতি মনোযোগী হওয়ার ফলস্বরূপ। আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, যেন তারা এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ক্রেতা ও ভোক্তার স্বার্থ বিবেচনায় নেয়।