বাজারে ভোজ্য তেল সরিষার ব্যাপক চাহিদা থাকলেও দিনে দিনে বাড়ছে সরিষার তেলের দাম। আগে যেখানে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা দামে বিক্রি হতো সেখানে এখন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। ভোজ্য তেলের দাম বাড়ার জন্য দেশের বড় বড় তেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে উৎপাদিত সরিষা মজুত করে রাখাকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা। মজুত করে রাখাতে চাহিদা বাড়ায় বাজারে সরিষার তেলের সংকট দেখা দেওয়ায় দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন তারা।
এছাড়াও দেশীয় সরিষা ও বিদেশী সরিষার দাম বেড়ে যাওয়ায় তেলের দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মানুষ এখন সয়াবিন ছেড়ে সরিষার দিকে ঝুঁকছে কিন্তু দাম বাড়ার কারণে অনেকেই আবার পিছপা হচ্ছেন।
ফেনীর গুদাম কোয়ার্টারের মেসার্স করিম অয়েল মিলসের ম্যানেজার আশরাফুল ইসলাম আরজু বলেন, মানুষ সয়াবিন খেয়ে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিল। এখন মানুষ সয়াবিন ছেড়ে সরিষার দিকে বেশী ঝুঁকছে। আগে যেখানে দৈনিক ৫০ লিটার বিক্রি হতো এখন তার দ্বিগুন বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, বিগত ৬ মাসে সরিষার অনেক চাহিদা বেড়েছে। দেশীয় সরিষা হওয়াতে মানুষ এখন সয়াবিন ছেড়ে স্বাস্থ্যসম্মত সরিষার তেল বেশী ক্রয় করছে। কিন্তু দেশীয় বড় বড় তেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশীয় সরিষা মজুত করে রাখছে। যার কারণে চাহিদার তুলনায় বাজারে তেলের সংকট দেখা দিয়েছে তাই সরিষার দাম বাড়ছে বলে মনে করছেন এই ব্যবসায়ী।
হামিদিয়া অয়েল মিলসের ম্যানেজার মোশারফ হোসেন বলেন, সরিষার তেলের ব্যাপক চাহিদা ছিল। যেখানে দৈনিক ২৫০ লিটার তেল বিক্রি করতাম এখন দাম বাড়ানোর কারণে ১৫০ লিটার বিক্রি হয়। বর্তমানে বাজারে প্রতিলিটার সরিষা বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা দরে৷ যার কারণে দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় ভোক্তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
তিনি বলেন, যারা বাইরে থেকে আমদানি করে তাদের লাভ বেড়েছে৷ দেশের বড় বড় তেল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরিষা মজুত করে নেয়াতে তেলের চাহিদা বাড়লেও তেলের দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, আগে বিদেশী সরিষা ছিল ১ হাজার ৮৬০ থেকে ২ হাজার টাকা কিন্তু এখন ২ হাজার ৪৫০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা। দেশী সরিষা ছিল ২ হাজার থেকে ২ হাজার ১০০ টাকা৷ বর্তমানে ২ হাজার ৮৫০ টাকা প্রতি মণ সরিষা বিক্রি হচ্ছে৷ প্রতিমনে দাম বেড়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। যার কারণে সরিষার তেলের দাম বাড়ছে বলে জানান তিনি।
ফেনী বড় বাজারের ব্যবসায়ী রমনী সাহা স্টোরের সত্ত্বাধিকারী মিন্টু সাহা বলেন, আগের তুলনায় সরিষার চাহিদা বেড়েছে। আগে দৈনিক ১০ লিটার বিক্রি করলে এখন ৩০ লিটার বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, সে তুলনায় কমেছে সয়াবিনের চাহিদা। আগে ১০০ লিটার বিক্রি করলে এখন ৭৫ লিটার বিক্রি হয়।
মামুন নামে এক ভোক্তা বলেন, সয়াবিনে এখন পাম অয়েল। এটি খেলে গ্যাসট্রিক সহ নানান রোগের সম্মুখীন হয়েছি৷ এখন সরিষার তেল খাওয়ার পর থেকে এমন কোন সমস্যার মুখোমুখি হয়নি৷ তাই এখন সয়াবিন ছেড়ে সরিষাটা কিনছি
তবে সরিষার তেলের দাম বাড়ায় দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো মনে করছেন অর্থনীতিবীদরা। ফেনী সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক আখিনুর বেগম সাথী বলেন, যদি দেশীয় সরিষার দাম বাড়ে সে ক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই ভালো একটা দিক। দেশে পর্যাপ্ত সরিষা উৎপাদন হলে বিদেশী সরিষার আমদানি নির্ভরশীলতা কমবে। দেশের কৃষকরা লাভবান হবে।
তিনি বলেন, সরিষার দাম বাড়লেও দেশে এখন সরিষা অনেক ভালো উৎপাদন হচ্ছে। যার ফলে দেশের কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্য দাম পাবে। দেশের টাকা দেশেই থাকবে। সরিষার তেলের চাহিদা বাড়লে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ও ঠিক থাকবে বলে মনে করেন তিনি।