দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যার প্রভাবে বেসামাল হয়ে পড়েছে ফেনীর সবজির বাজার। এক মাস ধরে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। গত মাসের শুরুতে সবজির দাম হাতের নাগালে থাকলেও শেষে এসে বেড়েছে সব ধরনের সবজির দাম। প্রতি কেজিতে সবজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। আর এ উর্ধ্বমুখী দামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা।
এই পুরো সময়ে সর্বোচ্চ দাম কাঁচামরিচের। ভালোমানের এক কেজি কাঁচামরিচ কিনতে এখন গুনতে হচ্ছে ৩০০ টাকা। তবে সাধারণ মানের আমদানি করা কাঁচামরিচ ২৪০ টাকা কেজিতে পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য সবজি বেশিরভাগ ৭০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইসঙ্গে দাম বেড়েছে দাম বেড়েছে শাকের বাজারেও। প্রতি আঁটি (মোড়া) কচুশাক ২০ থেকে ২৫ টাকা, লালশাক ২০ টাকা, মুলাশাক ৩০ টাকা, পালংশাক ৩০ টাকা, লাউশাক ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
দাম বাড়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্যায় দেশের অনেক এলাকার ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক এলাকায় পানি নামলেও সেখানেও অতিবৃষ্টির কারণে আবাদ শুরু হয়নি। তা ছাড়া আগে থেকেই করোনা সংক্রমণের কারণে এবার সবজির আবাদ কম হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে সবজির বাজার বেসামাল হয়ে পড়েছে।
রবিবার সকালে (৩০ আগস্ট) ফেনী পৌর হকার্স মার্কেটের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে চড়া দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা গেছে। বাজারে আড়াইশ গ্রাম কাঁচামরিচ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। এ হিসাবে কেজি ২৪০ থেকে ৩২০ টাকা পড়ছে। কাঁচামরিচের কেজি ছিল জুন মাসে ৬০, জুলাই মাসের শুরুতে ১০০ এবং শেষে ১৬০ টাকা। চলতি মাসের শুরুতে ২০০ টাকার মধ্যে থাকলেও এখন তা অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।
অন্য সবজির মধ্যে ঝিঙে, কাঁকরোল, বেগুন ও পটোল বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। প্রতি কেজি করলা ও ঢ্যাঁড়শের দাম চাওয়া হচ্ছে ১০০ টাকা। তবে ৯০ টাকা কেজিতেও বিক্রি করতে দেখা গেছে। চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, শসার কেজি ৬০ টাকা। প্রতিটি লাউ ও জালি ৫০ থেকে ৭০ টাকা। একইসঙ্গে টমেটো প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকা, বরবটি শিম ৮০ থেকে ৯০ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, আলু ৩৫ টাকা, পেঁপে ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
তেমনি বিভিন্ন শাক বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। গত মাসের শুরুতে এসব সবজি অর্ধেক দামে বিক্রি হয়েছে।
কাঁচা বাজারের সবজি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্যার কারণে সবজির আমদানি কমে যাওয়ায় পাইকারি আড়তে অনেক সময় সবজি কিনতে কাড়াকাড়ি করতে হয়। তখন দামের কোনো ঠিক থাকে না।
শহরের দাউদপুলের সবজি আড়তের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বাজারে এখন আগের তিনভাগের একভাগ সবজি আসছে। বাজারে উত্তরাঞ্চল থেকে সবজি বেশি আসত। বন্যার শুরুতে উত্তরাঞ্চলের সবজি আসা বন্ধ হয়েছে। এরপর এক মাস ধরে অতিবৃষ্টিতে জেলার সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এতে বাজারে সরবরাহ আরও কমেছে। তা ছাড়া গ্রীষ্মকালীন এই সময়ে সবজির আবাদ কম থাকে। এ কারণে অন্য এলাকার সবজিও তেমন আসছে না।
পাইকারি আড়তে এখন মুহূর্তে সবজির দাম ওঠানামা করছে। এতে বাজারে কোন সবজির কত দাম, তা সঠিকভাবে বলা কঠিন। আগে পাইকারিতে ১০ টাকা কেজি পেঁপে কিনে ১২ টাকায় বিক্রি করেছেন। এখন পেঁপের কেজি কখনও ৩০ টাকা আবার কখনও ৩৫ টাকায় উঠে যাচ্ছে। আবার ২৫ টাকায় বিক্রি হয়। অন্য সবজির বেচাকেনায় দাম এভাবে ওঠানামা করছে।
তবে মাছ, মাংস ও মুরগীর বাজারে স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করলেও সবজি কিনতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
বাজার করতে আসা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিদ্দিকুর রহমান জানান, ৭০ টাকা দিয়ে আড়াইশ গ্রাম কাঁচামরিচ কিনলাম। করোনাকালীন সময়ে এমনিতেই আয় রোজগার কমে গেছে। সবজির দাম এভাবে বাড়তে থাকলে হয়ত সবজি কেনাই বাদ দিতে হবে আমাদের।
দাম সহসা কমবে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীর কোন আশাব্যঞ্জক কথা শোনাতে পারলেন না। বাজারে শীতকালীন সবজি আসা পর্যন্ত দাম কমবে না বলে মনে করছেন তারা।