ফেনী জেলা কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করলে সাদা রঙের দ্বিতীয় ভবনটায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সেল। দুই তলা বিশিষ্ট ভবনের উত্তর পাশের শেষ কক্ষটি হলো ৮ নম্বর কনডেম সেল। জানালাবিহীন সেলটা বেশ অন্ধকার, স্যাঁতস্যাঁতে! এখান থেকে বের না হলে দিনের আলো বোঝা দুষ্কর! এই কনডেম সেলে রয়েছেন নুসরাত হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত প্রধান আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা।
তার সঙ্গে এই সেলে রয়েছেন নুসরাত হত্যা মামলার আরও দুই আসামি মোহাম্মদ জোবায়ের ও নুরু উদ্দিন।
সাদা-কালো ডোরাকাটা কয়েদি পোশাকে ছোট কক্ষটিতে সারাদিন বসে থাকেন তারা। এখানেই তাদের সকাল হয়, দুপুর আসে সন্ধ্যা নামে। মাঝে মাঝে দুপুরে সেলের বাইরে বের হওয়ার সুযোগ পান। তবে সেলের ভেতরে বা বাইরে কোথাও কেউ কারো সঙ্গে কথা বলেন না। ফাঁসির রায় শোনার পর থেকেই এমন নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন আসামিরা।
ফেনী জেলা কারাগারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, কারাগারে থাকা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ওই তিন আসামির আচরণে রায় ঘোষণার আগে ও পরে পার্থক্য দেখা গেছে। রায়ের পর থেকে একদম চুপচাপ হয়ে গেছেন নুরু উদ্দিন ও জোবায়ের। আগে কারাগারের ভেতরে খোলা মাঠে দেখা হলে কথা বলতেন। রায় ঘোষণার পর থেকে তারা কোনো কথা বলছেন না সিরাজের সঙ্গে।
অধ্যক্ষ সিরাজ নিজেকে কিছুটা অপরাধী মনে করলেও অন্যরা নিজেদের এখনও নিরপরাধ মনে করেন। তারা ভাবেন অধ্যক্ষ সিরাজের জন্যই তাদের এই পরিণতি। শুধু তার সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার কারণেই আজ তারা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। তাই সিরাজের ওপরই তাদের যত রাগ-ক্ষোভ!
নুসরাত হত্যার পরিকল্পনাকারী অধ্যক্ষ সিরাজ অনুশোচনায় ভুগছেন। তবে জীবনে যতটুকু সম্মান পেয়েছেন, তাতেই নাকি সন্তুষ্ট তিনি। এখন কারাগারের ভেতরে হাদিসের বই পড়ে সময় কাটান।
কিন্তু, এ মামলার অন্য আসামিরা কোনভাবেই তাদের এই পরিণতি মেনে নিতে পারছেন না। আক্ষেপ আর আফসোসে চুপসে গেছেন তারা। গত ২৪ অক্টোবর রায় ঘোষণার পর থেকে কেউ আর কথা বলছেন না, দেখা করছেন না পরিবারের সঙ্গেও। যদিও সেই সুযোগটাও এখন কম। বিশেষ করে সিরাজের সঙ্গে যাদের এক কক্ষে রাখা হয়েছে, তারা কেউ কারো মুখ পর্যন্ত দেখতে চান না।
নুসরাত হত্যা মামলার অন্য আসামিরা আছেন ৫, ৬ ও ৭ নম্বর সেলে। ৭ নম্বরে রাখা হয়েছে-মো.শামীম, মহিউদ্দিন শাকিল ও জাবেদ হোসেন ওরফে সাখাওয়াত হোসেনকে।
৬ নম্বর সেলে রয়েছেন-রুহুল আমিন, মাকসুদ আলম ওরফে মোকসুদ কাউন্সিলর, শাহাদাত হোসেন শামীম এবং ৫ নম্বর সেলে- হাফেজ আব্দুল কাদের, ইফতিখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন ওরফে মামুন এবং আফসার উদ্দিন। নারীদের জন্য আলাদা কনডেম সেল না থাকায় সাধারণ মহিলা ওয়ার্ডে রয়েছেন কামরুন নাহার মনি ও উম্মে সুলতানা পপি ওরফে তুহিন।
আসামিরা নিজেদের পরিণতির জন্য একজন আরেকজনকে দোষারোপ করছেন। একে অপরকে দোষারোপ করলেও একসঙ্গে রায়ের বিপক্ষে আপিল আবেদন জমা দিয়েছেন। তাদের আপিল আবেদন ইতোমধ্যে কারা কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই শুরু করেছে।
ফেনী জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলার মনিরুল ইসলাম বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৬ আসামি আপিল আবেদন করেছেন। সেই কাগজ আমাদের হাতে এসেছে। খুব শিগগিরই আপিল আবেদন হাইকোর্টে পাঠানো হবে।
২৪ অক্টোবর ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুন-উর-রশিদ নুসরাত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ১৬ আসামির প্রত্যেককে ফাঁসির রায় দেন।
কৃতজ্ঞতাঃ শাহরিয়ার হাসান/ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম