পৌষের কনকনে শীতে হাড় হিম করা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে ফেনী জনপদে। গত দুইদিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি ফেনীতে। চারদিকে ঘন কুয়াশার প্রলেপ আর হিমেল বাতাসে জুবুথুবু হয়ে পড়েছে মানুষ। গতকাল রোববার (২৮ ডিসেম্বর) ফেনীতে বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে ফেনী আবহাওয়া অফিস। এ তথ্য জানিয়ে ফেনী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান জানান, এটি এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আগামী কয়েক দিন শীতের মাত্রা আরও বাড়তে পারে।

এর আগে শনিবার ১৩.৩ ডিগ্রি এবং শুক্রবার ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সোমবার এবং মঙ্গলবার সারা দেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা আরও সামান্য কমতে পারে। এছাড়া চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শৈত্যপ্রবাহের আওতা বাড়তে পারে বলেও আবহাওয়া জানিয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে শীতের ধরন বদলাচ্ছে। কখনো স্বল্প সময়ের তীব্র ঠাণ্ডা, আবার কখনো দীর্ঘ সময় ধরে শুষ্ক ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সরেজমিনে ফেনীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল সকাল শেষে দুপুর গড়িয়ে বিকালেও সূর্যের দেখা মেলেনি। দিনভর কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল শহরের পথঘাট। শহরের চেয়ে গ্রামাঞ্চলে শীতের তীব্রতা অনুভূত হচ্ছে বেশি। ঘন কুয়াশা আর হাড়কাঁপানো হিমেল হাওয়ায় ব্যহত হচ্ছে স্বাভাবিক জনজীবন। তীব্র ঠান্ডার কারণে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন শ্রমজীবী ও ছিন্নমূল মানুষ। বিশেষ করে রিকশাচালক ও দিনমজুরদের জীবনে শীতের প্রভাব পড়ছে বেশি।

শহর ঘুরে দেখা গেছে, শীতের তীব্রতায় মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা শহরের রাজাঝির দিঘির পাড় ও দোকান থেকে নতুন ও পুরাতন কম্বল, সোয়েটার, জ্যাকেটসহ বিভিন্ন শীতবস্ত্র ক্রয় করতে ভিড় করছেন। তীব্র ঠাণ্ডায় স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়েছেন বয়স্ক ও শিশুরা। প্রচণ্ড শীতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে।

আবদুল আহাদ নামে ফেনীর এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, তিন দিন ধরে হঠাৎ করে এমন শীত পড়েছে, যে ঘর থেকে বের হওয়া কষ্টকর।

শিক্ষার্থী মাহতাব অয়ন বলেন, সকালে কোচিং করতে যেতে হয়, কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে বেশ শীত পড়েছে এতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।

সদর উপজেলার কৃষিশ্রমিক তাহের ও খাদেম বলেন, তীব্র শীতে হাত-পা জমে যাওয়ার মতো অবস্থা। এই পরিস্থিতিতে মাঠে কাজ করা কষ্টকর।

শহরের সহদেবপুর এলাকার আলফাতুন নেছার ভাষ্য, ঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে ক্রমাগত ঠান্ডা বাতাস প্রবেশ করায় ২ থেকে ৩টা কাঁথা-কম্বল দিয়েও শীত মানানো যাচ্ছে না।

দিনমজুর মমিন হায়দার বলেন, যে শীত পড়েছে বাড়ি থেকে বেরই হওয়া খুব কষ্টকর। কিন্তু বাড়ি থেকে বের না হয়ে উপায়ও নেই।

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর চাপ, যাদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি। গতকাল হাসপাতাল ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রোকন উদ্দিন জানান, হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডের শয্যার তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যক রোগী ভর্তি রয়েছেন। অন্য ওয়ার্ডগুলোতেও শীতজনিত অসুস্থতা নিয়ে গড়ে ২৫০ রোগী অবস্থান করছেন। হাসপাতালের বহির্বিভাগেও রোগীর চাপ বেড়েছে।

শিশুদের প্রতি বাড়তি
নজর রাখার পরামর্শ
শীতে সুরক্ষায় গরম কাপড় ব্যবহারের পাশাপাশি জ্বর বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এ প্রসঙ্গে নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের সহকারি অধ্যাপক গাজী গোলাম মোস্তফা জানান, শিশুদের ঠাণ্ডার হাত থেকে রক্ষা করতে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। সন্ধ্যার সময় ও কুয়াশার মধ্যে শিশুকে ছেড়ে দেওয়া যাবে না। ধুলোবালি থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হবে এবং কুসুম গরম পানি ব্যবহার করে গোসল করাতে হবে। অনেক সময় গ্রামাঞ্চলে রোদের মধ্যে পানি গরম করে শিশুদের গোসল করানো হয়, যা উচিত না। প্রয়োজনে হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ফেনীর সিভিল সার্জন ডা. রুবাইয়াত বিন করিম জানান, ঠাণ্ডায় শিশুরা যেন বাইরে না আসে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে। একই সঙ্গে ঠাণ্ডা মনে করে শিশুদের অতিরিক্ত গরম কাপড় পরিয়ে রাখার কারণেও তাদের শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।