ফেনী আলিয়া কামিল মাদ্রাসা নিয়ে বিতর্ক যেন কাটছে না। মাদ্রাসার সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসানকে নিয়ে তুমুল বিতর্কের পর এবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গাজী মীর মো. ইকবাল হোসাইন নিয়ে বির্তক তৈরি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ইকবাল হোসেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবিধান অমান্য করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়েছেন।
এ ব্যাপারে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে গত ২৭ নভেম্বর ফেনী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একই মাদ্রাসার সহকারি অধ্যাপক (আরবি) মাওলানা মো. ছালেহ আহমদ। ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবিধান ১২ এর ‘ক’ উপেক্ষা করে সহকারি অধ্যাপক (ইংরেজী) গাজী মীর মো. ইকবাল হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। প্রবিধানে সুস্পষ্ট উল্লেখ আছে— মাদ্রাসার অধ্যক্ষ পদ শূন্য হলে উপাধ্যক্ষ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। উপাধ্যক্ষের পদ শূন্য থাকলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে আরবি বা ইসলামি বিষয়ের শিক্ষক জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হবেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আলিয়া মাদ্রাসায় উপাধ্যক্ষের পদ শূন্য থাকায় আরবি বিভাগে জ্যেষ্ঠ সহকারি অধ্যাপক মো. সালেহ আহমদ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হওয়ার নিয়ম। প্রবিধান অনুসারে ইকবাল হোসেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হতে পারেন না। তিনি প্রবিধান লঙ্ঘণ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে প্রভাষক পদে নিয়োগের সময় অনিয়ম করা হয়েছে। বিধিমালা অনুযায়ী, তিনজন প্রার্থী হওয়ার কথা থাকলেও তিনি একক প্রার্থী ছিলেন। অর্থের বিনিময়ে তিনি নিয়োগ লাভ করেছেন।
উল্লেখ্য, নানা বির্তকের পর ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর মাহমুদুল হাসানাকে অধ্যক্ষের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এরপর ৫ অক্টোবর মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে ইংরেজী বিভাগের সহকারি অধ্যাপক গাজী মীর মো. ইকবাল হোসেনকে চিঠি প্রেরণ করে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার ড. মো. আবু হানিফ স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ইকবাল হোসেনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য বলা হয়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গাজী মীর মো. ইকবাল হোসেন দৈনিক ফেনীকে বলেন, আমি ইচ্ছা করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হইনি। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জেলা প্রশাসক আমাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে মনোনীত করেছেন। ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রবিধান অমান্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রবিধান লঙ্ঘণ হলে তো আমার কাছে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য চিঠি পাঠানো হত না। গত কিছুদিন আগে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেনী আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে অংশ নিয়েছি।
এ প্রসঙ্গে ইকবাল হোসেন আরও জানান, আলিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের বেতন সোনালী ব্যাংকে এ্যাপসের মাধ্যমে জমা নেওয়া হয়। যার কারণে কোন শিক্ষক বা অফিস সহকারি অনিয়ম করতে পারে না। এতে কিছু শিক্ষক বা অফিস সহকারি আমার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে।
এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আলিয়া কামিল মাদ্রাসার সভাপতি ও ফেনী জেলা প্রশাসক মনিরা হক দৈনিক ফেনীকে জানান, প্রবিধান লঙ্ঘণের বিষয়ে তার কাছে লিখিত অভিযোগ এসেছে। এটি তদন্তের করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (শিক্ষা ও আইসিটি) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ফাতিমা সুলতানা জানান, তিনি অভিযোগটি পেয়েছেন। শীঘ্রই এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
