ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুরসহ বৃহত্তর কুমিল্লার তিন জেলা নিয়ে কুমিল্লা বিভাগ গঠনে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অন্যতম সুপারিশ বাস্তবায়ন এখন অনেকটাই চূড়ান্ত পর্যায়ে। এ নিয়ে যেকোনো সময় আসতে পারে আসতে পারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।

বাংলাদেশ সচিবালয়ের একটি সূত্র হতে জানা যায়, ভৌগোলিক অবস্থান ও যাতায়াতের বিষয়টি বিবেচনা নিয়ে কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুইটি প্রশাসনিক বিভাগের প্রস্তাব অনুমোদন দিতে যাচ্ছে অন্তর্বকালীন সরকার। এতে ৩১টি রাজনৈতিক দল ও জোট একমত এবং একটি রাজনৈতিক দল দ্বিমত পোষণ করেছেন।

অন্যদিকে সরকারের এমন সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন ফেনীর বিভিন্ন মহলের মানুষ। তারা বলছেন, যেসব রাজনৈতিক দল এ সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেছেন তারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত কেউ নয়। জনগণের ম্যান্ডেট না থাকায় তাদের এমন ঐক্যমতকে একপ্রকার চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত বলছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে ফেনীর জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও স্বেচ্ছাসেবক আসাদুজ্জামান দারা ইতোপূর্বে দৈনিক ফেনীকে বলেন, চট্টগ্রামের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য ছাড়াও বিবিধ সম্পর্ক রয়েছে। ফেনীকে আলাদা করে প্রস্তাবিত কুমিল্লা বিভাগে নেওয়ার কোন কারণ থাকতে পারে না। আমরা চট্টগ্রাম বিভাগে থাকতে চাই। গত সরকার মেঘনা বিভাগ নাম দিয়ে সেখানে ফেনীকে যুক্ত করতে চেয়েছিল, তখন আমরা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলেছিলাম।

ফেনী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অর্থনীতিবিদ প্রফেসর তায়বুল হক বলেন, ফেনীর সঙ্গে চট্টগ্রামের বহুমুখী সম্পর্ক রয়েছে। দীর্ঘদিনের যোগসূত্র ছিন্ন করে নতুন বিভাগে ফেনীকে স্থানান্তর অপ্রয়োজনীয়। কেবল ফেনী নয়, বৃহত্তর নোয়াখালীও এমন সিদ্ধান্তে একমত হবেন বলে মনে হচ্ছে না। এর আগেও চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু তা মানুষের প্রতিবাদের মুখে বাস্তবায়ন সম্ভব করতে পারেনি বিগত সরকার।

রাশেদুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ২০২১ সালে মেঘনা বিভাগে ফেনীকে অন্তর্ভুক্তের প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছিল ফেনীবাসী। আমাদের দাবি ছিল, চট্টগ্রাম বিভাগেই ফেনী থাকুক। এর ব্যতিক্রম হলে সেটি হবে চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত।

এর আগে গত ২৮ আগস্ট এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে প্রজ্ঞাপনে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সভাপতি করে দশ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির কার্যপরিধির অন্যতম হলো-নতুন বিভাগ, জেলা, উপজেলা ও বিভিন্ন ধরনের থানার অধিক্ষেত্র ও সদর দপ্তর নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় ভূমি ও ভৌত অবকাঠামো সুবিধাদি প্রসঙ্গে সুপারিশ প্রদান। এছাড়াও নতুন মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, বিভাগ, জেলা বা উপজেলা গঠন এবং জনবল সংক্রান্ত অনুমোদনে সুপারিশ দিতে প্রাক-নিকার সচিব কমিটি গঠন করে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। অন্যদিকে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা ও মেঘনা নামে বিভাগ গঠনের পরিকল্পনা করেছিল। সংস্কার কমিশন একই সীমানা নিয়ে মেঘনা নাম পরিবর্তন করে কুমিল্লা বিভাগ গঠনের সুপারিশ করেছেন। উল্লেখ্য, এ বছরের জানুয়ারিতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনায় জনপ্রশাসনের প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত পুনর্গঠন শিরোনামে ষষ্ঠ অধ্যায়ের ৬ এর ১১-তে স্বল্পমেয়াদি প্রস্তাব হিসেবে কুমিল্লা ও ফরিদপুর বিভাগ গঠনের কথা বলা হয়েছে। এ প্রস্তাবনার সংযুক্তিতে সীমানাসহ প্রস্তাবিত মানচিত্র প্রকাশ করা হয়।

গত ১০ সেপ্টেম্বর 'জুলাই জাতীয় সনদ'র চূড়ান্ত ভাষ্য প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, ভৌগোলিক অবস্থান ও যাতায়াতের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুটি বিভাগ গঠন করা হবে। এরপর বিষয়টি ফের আলোচনায় গুরুত্ব পেতে থাকে।