চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কাজ শেষে ফেনীতে ফেরার পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাইজবাড়িয়া হাফেজিয়া এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ছয় নির্মাণশ্রমিক। গত রোববার (৩১ আগস্ট) এ ঘটনায় করা মামলায় কাভার্ডভ্যান চালক মো. মেহেদী হাসানকে (২৯) একমাত্র অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। তবে চার্জশিটের পূর্বে এ মামলার বাদী সবুজ শেখের সঙ্গে আপস করে কাভার্ডভ্যানের মালিকপক্ষ। মামলা আপসে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে মোট দেড় লাখ টাকা ও আহত দুইজনকে ৮০ হাজার টাকা দেওয়া হয় বলে জানান সবুজ শেখ।

মহিপাল হাইওয়ে পুলিশের ইনচার্জ হারুনুর রশিদ জানান, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ উপপরিদর্শক সুমন চন্দ্র নাথ অভিযুক্ত চালক লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের মৃত মাহফুজুল হকের ছেলে মো. মেহেদী হাসানকে অভিযুক্ত করে আদলতে চার্জশীট জমা দিয়েছেন। বাদী সবুজ শেখে সঙ্গে আপসের ভিত্তিতে কাভার্ডভ্যানটি (চট্ট মেট্রো-শ-১১-২০০৯) আদালত থেকে ছাড়িয়ে নেন মালিকপক্ষ। পরে তারা টাকার বিনিময়ে মামলাও আপস করেছে। সবুজ শেখ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেছিল। দুর্ঘটনার পর থেকে চালক পলাতক রয়েছেন।
প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক শ্রমিক বলেন, আমরা ১৮ জন শ্রমিক মিরসরাইয়ে কাজ শেষে ফিরছিলাম। লেমুয়া এলাকায় পিকআপটি হঠাৎ থেমে গেলে পেছন থেকে কাভার্ডভ্যান ধাক্কা দেয়। তখন আমরা রাস্তায় ছিটকে পড়ি। এরপর ভ্যানটি আমাদের ওপর উঠে যায়।

অদক্ষ চালক ও বেপরোয়া গাড়ি চালনার কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটছে বলে মন্তব্য করেন নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর জেলা সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান দারা। তিনি বলেন, এমন দুর্ঘটনায় আপস নয়, বিচার নিশ্চিত করা জরুরি। নিরীহ শ্রমিকের প্রাণ যাবে, আর দোষীরা পার পেয়ে যাবে-এটি মেনে নেওয়া যায় না।

এর আগে চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাইজবাড়িয়া হাফেজিয়া এলাকায় এ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ছয় নির্মাণশ্রমিক। আহত হন অন্তত আরও ছয় থেকে সাতজন। পরদিন নিহতদের মরদেহ ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গ থেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সেদিন দুর্ঘটনায় নিহত নির্মাণ শ্রমিকরা হলেন- ভোলা জেলার মনপুরা থানার চর ফয়জুদ্দিন এলাকার মো. ফারুকের ছেলে মো. আরিফ হোসেন (৩০), একই থানার দাসেরহাট গ্রামের মো. নুর হোসেনের ছেলে মো. জুবায়ের মনির (২৮) ও তার ভাই মহিউদ্দিন (২২), বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানার পাতাবাড়িয়া এলাকার সাবুল শেখের ছেলে নাজমুল হোসেন (২৮), একই জেলার শরণখোলা থানার দক্ষিণ রাজাপুর এলাকার সোবহান ফরায়জীর ছেলে মাকসুদ প্রকাশ সাদ্দাম (২১) ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার বালিগাঁও এলাকার আনার উদ্দিনের ছেলে মো. মারুফ মিয়া (১৯)। তারা সকলেই ফেনী শহরের সহদেবপুর এলাকায় কাশেম মিয়ার কলোনিতে থাকতেন।