ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের দক্ষিণ গোবিন্দপুর গ্রামের কামু ভূঞা বাড়ির মারজাহান আক্তার ঝুমুর হত্যা মামলার আসামী স্বামী ও শাশুড়িকে দুই মাসেও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। স্বামী সাইদুর রহমান তৌহিদ বিদেশে পালিয়ে যায়। শাশুড়ি ও স্বামীকে গ্রেফতার করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নিহতের পরিবার। গত ১২ মার্চ নিহতের বাবা আবদুল আলিম বাদী হয়ে ঝুমুরের স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র জানান, শাশুড়ি বিবি হাজেরাকে গ্রেফতার করতে একাধিকবার অভিযান চালিয়েও তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। স্বামী সাইদুর রহমান তৌহিদের বিষয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে আবেদন করা হয়েছে।

গত ১৮ মার্চ হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে সোনাগাজী পৌরসভার জিরো পয়েন্টে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে।
যৌতুকের দাবি নিয়ে কলহের জের ধরে ঝুমুর গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। মুমূর্ষু অবস্থায় শ্বশুর বাড়ির লোকজন হাসপাতালে নিলেও চারদিন পর তার পরিবারকে জানানো হয়।

গত ১৫ মার্চ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ফেনী শহরের রামপুর এলাকার একটি চা দোকান থেকে শ্বশুর সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন। হত্যাকাণ্ডে আলামত উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গত ৪ মার্চ যৌতুকের জন্য মারধরের শিকার হয়ে গলায় ফাঁস দেওয়ার চেষ্টা করেছে মারজান আক্তার ঝুমুর। ওইদিন ঝুমুরের স্বামীর পরিবারের সদস্যরা তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে তাকে প্রথমে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ১৫ মার্চ সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ দিন পর তার মৃত্যু বরন করেন। ১৮ মার্চ ময়নাতদন্ত শেষে বগাদানা ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামে পিতার বাড়ির পারিবারিক কবর স্থানে তাকে দাফন করা হয়। বিয়ের তিন মাসের মাথায় ঝুমুরের মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনার ঝড় ওঠে।

পুলিশ ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, সোনাগাজী উপজেলার আলমপুর গ্রামের মারজান আক্তার ঝুমুরের সঙ্গে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে বিবাহ হয় ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের দক্ষিণ গোবিন্দপুর গ্রামের কামু ভূঞা বাড়ির প্রবাসী সাইদুর রহমান তৌহিদের। ছেলে প্রবাসে থাকায় তখন মোবাইলে বিয়ে সম্পন্ন হয়। সম্প্রতি প্রবাস থেকে দেশে আসার পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ছেলে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ঝুমুরকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যায়। বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা তিন লাখ টাকা ও পাঁচ ভরি স্বর্ণ যৌতুক দাবি করে আসছিল। ঝুমুরের বাবা একজন নির্মাণ শ্রমিক হওয়ায় এ দাবি পূরণ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে ঋণ করে তিন লাখ টাকা দেয়। স্বর্ণ না দেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৪ মার্চ স্বামী সাইদুর রহমান, শ্বশুর সাহাব উদ্দিন ও শাশুড়ি বিবি হাজেরা মিলে ঝুমুরকে মারধর করে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে দ্রুতই হাসপাতাল থেকে পালিয়ে দুবাই চলে গেছেন স্বামী তৌহিদ।

ঝুমুরের মা ফরিদা আক্তার বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার চারদিন পর আমাদের জানানো হয়েছিল। পরে আমরা হাসপাতালে গেলে তার স্বামীসহ শ্বশুর বাড়ির লোকজন হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়। মৃত্যুর আগে ঝুমুর তার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির চালানো নির্যাতনের ঘটনার বিস্তারিত জানায়। আমি এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।