ফেনীতে উফশী আউশ ধান আবাদের হার গত তিনবছরে বৃদ্ধি পেলেও কৃষকের প্রণোদনার পরিমান কমেছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে ১৫ হাজার কৃষককে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ৭০২ হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও সেবছর আবাদ হয়েছিল ৪ হাজার ১৫৫ হেক্টর, যা লক্ষ্যমাত্রার ৬২ ভাগ। ২০২৪ সালে বেড়ে ৮০ ভাগ অর্জন হয়েছে। ওই বছরে উফশী আউশে প্রণোদনা পেয়েছেন ৬ হাজার কৃষক। আউশ আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৫৩ হেক্টর।
চলতি বছরে ফেনীতে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ১০০ হেক্টর। গতবছরের লক্ষমাত্রা ছিলো ৭ হাজার ৫৬৬ হেক্টর। তবে এবার আউশ আবাদে প্রণোদনা কমেছে। চলতি মৌসুমে ৫ হাজার কৃষককে প্রণোদনা প্যাকেজে ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৫০০ টাকার বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কৃষকের উৎপাদন ও আগ্রহ দু’টো বেড়েছে কিন্তু প্রণোদনা কমেছে।
কৃষকের প্রণোদনা কমে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিনিয়র এক কর্মকর্তা বলেন, বন্যাপরর্বতীতে কৃষকদের তিন ধাপে সহায়তা দেয়া হয়েছে। যার কারণে সরকার চলতি বছরে ফেনীতে আউশ আবাদে প্রণোদনার বরাদ্দ কম দিয়েছে। ২০২৩ সালে আউশ আবাদে বাড়তি প্রণোদনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই বছর ঘূর্ণিঝড়ে বোর ধান আবাদে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যার কারণে আউশ আবাদে প্রণোদনা সহায়তা বেশি দেওয়া হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ফেনী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মাদ আতিক উল্লাহ বলেন, জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বরাদ্দকৃত প্রণোদনা ৬ উপজেলার ৫হাজার কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। একজন কৃষক মোট ২৫ কেজি উপকরণ সহায়তা হিসেবে পেয়েছেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৭৫২.৫০ টাকা। আউশ আবাদ কম হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আউশ আবাদ আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে। এ মৌসুমে ফেনীতে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে কৃষকেরা আউশ আবাদে অনাগ্রহ দেখান। সরকারের উফশী আউশ প্রণোদনা কর্মসূচির মাধ্যমে জেলায় খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষকদের আর্থিক সহায়তাও নিশ্চিত করে থাকে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ফেনীর ৬ উপজেলায় ৫ হাজার কৃষকের জন্য বীজ বাবদ ১৬ লাখ টাকার বীজ ও ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার ১শ মেট্রিক টন সারসহ মোট ব্যয় করা হয়েছে ৩৭লাখ ৬২হাজার ৫০০ টাকা। একজন কৃষক প্রণোদনা হিসেবে ৭৫২ টাকার মধ্যে ৫ কেজি বীজ, ১০ কেজি এমপিও সার ও ১০ কেজি ডিএপি সারসহ মোট ২৫ কেজি পেয়েছেন। ফেনী সদর উপজেলার ১ হাজার ৩০জন কৃষক ৭ লাখ ৭৫ হাজার ৭৫ টাকার বীজ ও সার পেয়েছেন। এর মধ্যে ৫ হাজার ১৫০ কেজি বীজ, ১০ হাজার ৩০০ কেজি এমপিও সার ও ১০ হাজার ৩০০ কেজি ডিএপি সার। ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৪৭০ জন কৃষক ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬৭৫ টাকার বীজ ও সার পেয়েছেন। এর মধ্যে ২ হাজার ৩৫০ কেজি বীজ, ৪ হাজার ৭০০ কেজি এমপিও সার ও ৪ হাজার ৭০০ কেজি ডিএপি সার। ফুলগাজী উপজেলায় ৩২০ জন কৃষক ২ লাখ ৪০ হাজার ৮০০ টাকার বীজ ও সার পেয়েছেন। এর মধ্যে ১হাজার ৬০০ কেজি বীজ, ৩ হাজার ২০০ কেজি এমপিও সার ও ৩ হাজার ২০০ কেজি ডিএপি সার রয়েছে। পরশুরাম উপজেলায় ২৮০ জন কৃষক ২ লাখ ১০ হাজার ৭০০ টাকার বীজ ও সার পেয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০০ কেজি বীজ, ২ হাজার ৮০০ কেজি এমপিও সার ও ২ হাজার ৮০০ কেজি ডিএপি সার রয়েছে। দাগনভূঞা উপজেলায় ৭৩০ জন কৃষক ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৫ টাকার বীজ ও সার পেয়েছেন। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬৫০ কেজি বীজ, ৭ হাজার ৩০০ কেজি এমপিও সার ও ৭ হাজার ৩০০ কেজি ডিএপি সার রয়েছে। সোনাগাজী উপজেলায় ২ হাজার ১৭০ জন কৃষক ১৬ লাখ ৩২ হাজার ৯২৫ টাকার বীজ ও সার পেয়েছেন। এর মধ্যে ১০ হাজার ৮৫০ কেজি বীজ, ২১ হাজার ৭০০ কেজি এমপিও সার ও ২১ হাজার ৭০০ কেজি ডিএপি সার রয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের এ উদ্যোগ কৃষকদের আউশ চাষে আগ্রহী করে তুলবে এবং সামগ্রিকভাবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে। কৃষকরা যাতে সঠিক সময়ে এই সহায়তা পান, সে বিষয়ে প্রশাসন সজাগ রয়েছে বলে জানান কর্মকর্তারা।