ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে এক অভূতপূর্ব রঙিন ফুলেল রাজ্য। পিচঢালা এ ব্যস্ত মহাসড়ক যেন এখন প্রকৃতির নিজ হাতে আঁকা রঙিন ক্যানভাস। নান্দনিকতায় অনন্য মহাসড়ক সেজেছে নানা ফুলের রঙে। সড়কের বিভাজকে ফুটে থাকা এসব বাহারি ফুল একদিকে যেমন ক্লান্ত যাত্রীদের প্রকৃতির শুভেচ্ছা জানাচ্ছে অন্যদিকে লালচে-গোলাপী ফুলগুলো জানাচ্ছে উষ্ণ অভ্যর্থনা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফেনীর লালপোল থেকে মুহুরীগঞ্জ, ফাজিলপুর, কসকা বাজার হয়ে সমিতি বাজার পর্যন্ত মহাসড়কে ফেনীর সীমানাজুড়ে জারুল ও লাল সোনাইলের ফুলের পাশাপাশি কৃষ্ণচূড়া, সোনালু ফুলে শোভিত গাছগুলো এখন যাত্রীদের পাশাপাশি পথচারীদের মনও কেড়েছে। পাশাপাশি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন অংশে থাকা ফুলগুলোও মানুষকে মোহিত করছে প্রতিনিয়ত।
ঋতুচক্রে প্রকৃতিতে এখন গ্রীষ্মকাল। বাংলা বছর শুরুর এই মৌসুমে প্রকৃতিতে রঙ-বেরঙের বাহারি ফুলের মনমাতানো সৌরভ, রাঙিয়ে তুলেছে নান্দনিক রূপে। তেমনই মহাসড়কের বিভাজকে জারুল-লাল সোনাইলের ফাঁকে ফাঁকে ফুটে আছে নানা প্রজাতির ফুলও। কোথাও সোনালু আবার কোথাও কৃষ্ণচূড়া, কোথাও জারুল যার চোখজুড়ানো সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন চলাচলকারীরা।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় ২৭ কিলোমিটার ফেনী জেলা সীমানায়। কসকা বাজার এলাকায় কৃষ্ণচূড়া, সোনালু ফুল, জারুল আর লাল সোনাইল ফুল শোভা ছড়িয়েছে। এরমধ্যে কসকা বাজার থেকে মুহুরীগঞ্জ এলাকা পর্যন্ত লাল সোনাইলগাছে সারি সারি ফুলের মেলা। পিচঢালা এই মহাসড়কের পথ যেতে যেতে সারি সারি গাছে বর্ণিল ফুলের দৃষ্টিনন্দন রূপ দারুণভাবে মোহিত করছে মানুষকে।
সোহেল চৌধুরী পণ্যবাহী ট্রাক ড্রাইভার, যিনি এ পথে নিয়মিত ভ্রমণ করেন। তিনি বলেন, আমি সারাদেশ ঘুরি কিন্তু এমন রাস্তা খুব কমই দেখি। এখানে ফুলগুলো খুব সুন্দর। একপলক দেখলে মনটা ভালো হয়ে যায়। ফেনী ছাড়াও চট্টগ্রামের মিরসরাই, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামসহ মহাসড়কের বিভিন্ন অংশের ফুলগুলো অসম্ভব সুন্দর দেখতে।
স্থানীয় নিজকুঞ্জরা কেজি স্কুলের সহকারী শিক্ষক মশিউর রহমান মারুফ বলেন, প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার পথে যখন ফুলে ভরা এই রাস্তা দেখি তখন মনে হয়, দিনটা সুন্দর কিছু ঘটবে। এটি আমাদের মন মেজাজেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সুন্দর ফুলগুলো বসন্তের পরে গ্রীষ্মের দাবদাহ দূর করতেও সহযোগিতা করে। ফেনীতে আসা অন্য জেলার মানুষরা এসব ফুল দেখে মুগ্ধ হয়।
পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথনেটগ্লোবালের পরিবেশগত সুবিচার ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন বিষয়ক সমন্বয়কারী মোহাইমিনুল ইসলাম জিপাত বলেন, জারুল, লাল সোনাইল, সোনালু, কৃষ্ণচূড়া, কুরচির মতো বাহারি ফুলে এখন বর্ণিল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভাজক। মহাসড়ক সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এভাবে গাছ লাগানো একটি ভালো উদ্যোগ। পরিবেশের জন্য এটি খুবই ভাল। এখানে কিছু স্থানে গাছ মরে গেছে, সেসব স্থানে খালি জায়গায় আবার গাছ রোপণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া দরকার। তাহলে মহাসড়কের সৌন্দর্য আরও বাড়বে।
এ বিষয়ে ফেনীর সিনিয়র সাংবাদিক ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ফেনী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান দারা বলেন, ঢাকা থেকে ফেনী ফেরার পথে মহাসড়কের সৌন্দর্যটি বেশ উপভোগ করি। বিশেষ করে সোনালু ফুলগুলো চলাচলরত যাত্রীদের খুব মোহিত করে। এগুলা যারা পরিচর্যা করে তাদেরকে রক্ষণাবেক্ষনের জন্য আরও উদ্যোগী হতে হবে যাতে করে ফুলের সৌন্দর্য আরও বিকশিত হতে পারে।
ফেনী সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী সু চাকমা দৈনিক ফেনীকে বলেন, মহাসড়ক যখন ফোর-লেন করা হয় তখন বিপরীত পাশের গাড়ির আলো যাতে অন্যপাশে চোখে না পড়ে সেজন্য সড়ক ডিভাইডারে এ গাছগুলো রোপন করা হয়। এতে কৃষ্ণচূড়া, সোনাইল ফুল, জারুল ফুল, পলাশসহ নানাজাতের ফুলের গাছ লাগানো হয়। মৌসুমভেদে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফুল ফোটে যা মহাসড়কের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দেয়।
তিনি বলেন, সড়ক ও জনপদ বিভাগ বিভিন্ন সময় ডিভাইডারে জঙ্গল পরিষ্কার করা, গাছের মাটি সরে গেলে মাটি দেওয়া ও নিয়মিত পানি দেওয়ার কাজ করে। মহাসড়কের সৌন্দর্য যাতে বজায় থাকে এ গাছগুলো নিয়মিত পরিচর্যার আওতায় থাকে বলে জানান তিনি।