কৃষিবিভাগের তথ্যমতে আজ (৬ মে) থেকে ফলবাজারে মৌসুমী ফল আম সহজলভ্য হওয়ায় কথা রয়েছে। তবে, কৃষি বিভাগের নির্ধারিত সময়ের এক মাস আগেই ফেনীর বাজারে উঠেছে নানা রঙের নজরকাড়া পাকা আম। এই আগাম আম নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। গতকাল সোমবার (৫ মে) সরেজমিনে ফেনীর বিভিন্ন ফলের দোকান ঘুরে দেখা যায়, বাজারে হলুদ ও লালচে বর্ণের আমগুলো কেজি প্রতি ১৫০-১৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাইরের দৃষ্টিনন্দন রঙের বিপরীতে কাটার পর দেখা যায়, অনেক আম এখনো কাঁচা, কোনো অংশ শক্ত, আবার কোনো অংশ নরম।
বাজারে আসা এই আমের ব্যাপারে বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে দৈনিক ফেনী টিম। খুচরা বিক্রেতারা জানান, এপ্রিল মাসজুড়ে বাজারে আনুমানিক ৫ টনের বেশি এই আম ফেনীর বাজারে এসেছে। তারা আরও জানান, আড়ত থেকে সংগ্রহ করে এসব আম বিক্রি করে থাকে। তবে এ বিষয়ে আড়তদার বলছেন, এমন আম তারা বিক্রি করে না।
মহিপালের আম বিক্রেতা আজম দৈনিক ফেনীকে বলেন, আমরা এসব আম আড়ত থেকে সংগ্রহ করে বিক্রি করে থাকি। প্রয়োজনে আড়তে গিয়ে কথা বলতে পারেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বিক্রেতা বলেন, এপ্রিল মাসের শুরু থেকে এসব আম বাজারে আসতে শুরু করেছে। মানুষজন কিনে তাই আমরাও বিক্রি করছি। প্রতি কেজি আম বিক্রি করছি ১৫০-২০০ টাকার মধ্যে।
মহিপাল ফল আড়ত সমিতির সভাপতি ওমর ফারুক জানান, মৌসুমের আগে বাজারে বিক্রি হওয়া আমগুলো বেশিরভাগ সাতক্ষীরা থেকে আনা হয়। যেগুলোর বেশিরভাগই অপরিপক্ক অবস্থায় গাছ থেকে পড়ে যায়।
এসব আগাম আম নিয়ে ক্রেতাসাধারণের মধ্যে আগ্রহও লক্ষ্য করা গেছে। শহরের ফলের দোকানগুলোতে অনেক ক্রেতাকে এসব আম কিনতে দেখা গেছে, যদিও তারা পুরোপুরি সন্তুষ্ট নন। একাধিক ক্রেতা জানান, মৌসুম আসার আগেই বাজারে আম পাওয়া গেলে এক ধরনের কৌতূহল ও আগ্রহ কাজ করে।
জয়নাল আবেদীন নামের এক ক্রেতা বলেন, মৌসুম শুরু হওয়ার আগে থেকেই আম খাওয়ার জন্য আলাদা আগ্রহ সৃষ্টি হয়। তবে আমগুলো খেতে মৌসুমে যে আম পাওয়া সেগুলোর মতো মিষ্টি না। বাইরে থেকে দেখে পাকা মনে হলেও ভেতরে অনেক সময় নষ্ট ও শক্ত থাকে।
রুবেল হোসেন নামের আরেকজন ক্রেতা বলেন, আমের বাইরের রঙ দেখে মনে হয় পুরো পাকা, কিন্তু কাটার পর ভেতরে অস্বাভাবিক সাদা ও শক্ত দেখা যায়। তবে ছোট বাচ্চাদের আবদার রাখতে গিয়ে কিনতেই হচ্ছে।
আগাম এই আমের প্রসঙ্গে ডাক্তাররা বলছেন, এসব আম খেলে জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হতে পারে সাধারণ মানুষ।
মেডিসিন অভিজ্ঞ ডা. ইমাম হোসাইন মামুন বলেন, মৌসুম শুরুর আগেই বাজারে যেসব আম পাওয়া যায়, সেগুলোর অধিকাংশই ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে কৃত্রিমভাবে পাকানো হয়। এই ধরনের কৃত্রিমভাবে পাকানো আম খাওয়ার ফলে মানুষের শরীরে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সাময়িক এবং দীর্ঘমেয়াদি। সাময়িক প্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে গলায় প্রদাহ, বদহজম, ডায়রিয়া, বমি ও শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া। অন্যদিকে, দীর্ঘমেয়াদে এসব রাসায়নিকযুক্ত আম খাওয়ার ফলে লিভার ও কিডনির জটিলতা, গ্যাস্ট্রাইটিস, গ্যাস্ট্রিক আলসার এবং এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে।
অতিরিক্ত রাসায়নিক মিশ্রিত আম গর্ভবতী মায়ের শরীরেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এতে মাতৃগর্ভে থাকা শিশুর বিকলাঙ্গ হওয়ার ঝুঁকি পর্যন্ত থাকতে পারে।
এ বিষয়ে ফেনী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ দৈনিক ফেনীকে বলেন, ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় মৌসুম শুরুর আগেই অপরিপক্ব আম বাজারজাত করে থাকেন। তবে এসব আমে কোনো রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো হয়েছে কিনা তা অভিযান পরিচালনার সময় পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যাবে। আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি যেন তারা পরিপক্ব অবস্থায় ফল বাজারে সরবরাহ করেন এতে ফলের পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ন থাকে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আছাদুল ইসলাম বলেন, কৃষি বিপণন বিভাগ সম্প্রতি একটি ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছে, যেখানে উল্লেখ রয়েছে কোন প্রজাতির আম কোন মাসে বাজারে আসবে। এই নির্ধারিত সময়ের আগে রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে আম পাকিয়ে বাজারজাত করা প্রতারণার শামিল। এ ধরনের প্রতারণায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ফেনীর বাজারে কিছু দেশীয় আম পাওয়া যাচ্ছে, তবে হাঁড়িভাঙা, ঘোপালভোগসহ অন্যান্য উল্লেখযোগ্য প্রজাতির আম এখনো বাজারে আসেনি। কেউ যদি এসব আমের নাম ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে পাকানো আম বাজারে আনে, তাহলে তা ভোক্তার অধিকার লঙ্ঘনের শামিল হবে এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।