সামান্য বৃষ্টি হলেই ফেনী শহরের বেশ কয়েকটি এলাকায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। খানাখন্দের কারণে জমে থাকে পানি। কিছু সড়ক নিচু, কোথাও আবার নেই পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা কিংবা সড়কে গর্ত পরিণত হয়েছে জনদুর্ভোগে। বৃষ্টি হলে সড়কের এমন বেহাল দশায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় ফেনী শহরে বসবাসরত মানুষের। পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে খাল পরিচ্ছন্নতার কাজ চলমান, কিছুদিনের মধ্যে পাড়াভিত্তিক ড্রেন ও খাল সংস্কার কাজ শেষ হবে।
সোমবার (২১ এপ্রিল) সকাল বেলায় দু’দফায় টানা বৃষ্টি হয়। এতে শহরের শান্তি কোম্পানি রোড, পাঠানবাড়ি রোড, একাডেমির বনানী পাড়া, রামপুর এলাকাসহ বেশ কয়েকটি সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। বৃষ্টি হলেই এসব সড়কে থাকা খানাখন্দের কারণে পানি জমে থাকে। যা এলাকার মানুষের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠে। এছাড়াও ভারী বৃষ্টিপাত হলে শহরের শহিদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে জমে পানি। স্থানীয়রা বলছে, শহীদুল্লা কায়সার সড়কটি আশেপাশের স্থাপনার থেকে অনেক নিচু এবং এ সড়কের বৃষ্টির পানি পাগলিছড়ি খাল দিয়ে যাওয়ার কথা, সেটি দখল-দূষণে এ সড়কটিতে বৃষ্টিরপানি জমে যায়।
এদিকে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ইতোমধ্যে বেস্ট ইন হোটেলের পাশের পাগলিছড়া খাল থেকে মধুপুর খাল পর্যন্ত পরিষ্কারের কাজ চলমান রয়েছে। সেটি সম্পন্ন করতে আরও ১৫ দিন কাজ করা হবে। পরবর্তীতে শহরে জলাবদ্ধতা আর থাকবে না।
ফেনী পৌরসভার কর্মকর্তা সরওয়ার আলম জানান, পাগলিছড়া খাল থেকে মধুপুর খাল পর্যন্ত স্কেভেটর দিয়ে পরিষ্কারের কাজ চলমান। সেটি সম্পন্ন করতে আরও ১৫ দিন কাজ করা হবে। পরবর্তীতে পাড়াভিত্তিক শাখা ড্রেন ও ছোট ড্রেনগুলো পরিষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
সরেজমিনে শহরের বিভিন্ন সড়কে গিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৃষ্টি হলে পাঠানবাড়ি এলাকায় মসজিদসংলগ্ন সড়কে জমে থাকে পানি। সড়কে সৃষ্টি হওয়া খানাখন্দের কারণে রাস্তায় চলাচল করতে বেগ পেতে হয় পথচারীদের। পাশাপাশি রিকশা, সিএনজিসহ অন্যান্য গাড়ি চলাচলেও নানা সমস্যা সৃষ্টি হয় এ সড়কে। পানি জমে থাকায় আশেপাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কমে যায় বেচাবিক্রি। বাধ্য হয়ে বিকল্প রাস্তা হিসেবে মমিন জাহান মসজিদের সড়কটি ব্যবহার করতে হয় স্থানীয়দের।
একইচিত্র শহরের শান্তি কোম্পানি রোড এলাকায় মসজিদসংলগ্ন সড়কেও সৃষ্টি হয়। অল্প বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যায় সড়কটি। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষ ও গাড়ি চালকদের। একই দশা শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের পানি ট্যাংকের পাশ্ববর্তী বক্তিয়ার ভূঁইয়া সড়কে। স্থানীয়রা জানান, নূরীয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা সড়ক পর্যন্ত সড়কটিতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংকীর্ণ হওয়াতে বৃষ্টি হলেই জমে থাকে পানি। রাস্তায় খানাখন্দের কারণে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও বড়বাজারগামী মানুষদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ। এছাড়াও রামপুরের তাকিয়া রোডের সম্রাট ফ্লাওয়ার মিলের পাশ্ববর্তী সড়কেও ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল না থাকায় বৃষ্টি হলে তলিয়ে যায়।
পাঠানবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মামুনুর রশীদ বলেন, পাঠানবাড়ি সড়কটি বিগত সরকারের আমলে ঠিক করা হয়েছিল তবে ৬ মাসের মাথায় সেটি আবার নষ্ট হয়ে গেছে। পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিস পর্যন্ত সড়কের অবস্থা বেহাল দশা। সামান্য বৃষ্টি হলেই এখানে পানি জমে যায়। মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। ভারী বর্ষার আগে এ সড়কের ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও সড়ক সংস্কার যদি না করা হয় এ এলাকার বাসিন্দাদের অনেক কষ্ট করতে হবে।
১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বলেন, বৃষ্টি হলেই পানি ট্যাংকের সাথে সড়কটি তলিয়ে যায়। কিছুটা সংস্কার হলেও বন্যার পর থেকে এ সড়কের বেহাল দশা।রাস্তায় গর্ত হয়ে আছে। ড্রেন আছে কিন্তু ছোট।একটু ভারী বৃষ্টি হলেই পানি রাস্তার উপর দিয়ে যায়। এতে আমাদের কষ্ট পোহাতে হয়। বিকল্প সড়ক ব্যবহার করে চলাচল করতে হয়। এটির সংস্কার করা খুবই জরুরি।
ফেনী পৌরসভা প্রশাসক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন বলেন, পৌরসভা খাল সংস্কার কর্মযজ্ঞ চলছে তা খুব শীঘ্রই দৃশ্যমান হবে। যার সুফল এবারের বর্ষায় মানুষ পাবে। এখন বড় খাল গুলো খনন করে পরিষ্কার করা হচ্ছে পরবর্তীতে পাড়াভিত্তিক ড্রেনগুলোও সংস্কার করা হবে। অনেকগুলো কাজ চলমান রয়েছে, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সড়ক সংস্কার, ড্রেন সংস্কারসহ বিভিন্ন কার্যক্রম নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, গতবছর যে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল এ সমস্যা এবার আর থাকবে না। সংস্কার কাজ চলমান, আগামী ৬ মাসের মধ্যে দৃশ্যমান উন্নয়ন শহরের মানুষ দেখতে পাবে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ফেনী কার্যালয়ের উচ্চমান পর্যবেক্ষক মো. মুজিবুর রহমান জানান সোমবার ভোর ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।