ফুলগাজীর আমজাদহাট সীমান্তে গড়ে উঠেছে মাদক করবার, চোরাচালান ও অপরাধের অবাধ সাম্রাজ্য। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, এ চক্রের নেতৃত্বে রয়েছেন স্থানীয় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও স্থানীয় বিএনপিকর্মী রহিম উল্ল্যাহ।
দৈনিক ফেনীর অনুসন্ধানে জানা যায়, আমজাদহাট ইউনিয়নের খেজুরিয়া, হাড়িপুস্করনী, বসন্তপুর, উত্তর তারাকুচা, ফেনাপুস্করনী সীমান্ত এলাকায় প্রতিদিন মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত চলে ভারতীয় পণ্য, মানবপাচার, মাদকদ্রব্য ও গরু চোরাচালান। বর্তমানে উপজেলায় অবৈধ পথে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের নিরাপদ রুট হিসেবে পরিচয় লাভ করেছে এ রুট। যেখানে প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে কোটি টাকা। সর্বশেষ গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাতে ইউনিয়নের তারাকুছা এলাকায় জহির আলম রাহিম (২৫) নামে এক যুবককে ভারতীয় চকলেটসহ আটক করে ফুলগাজী থানা পুলিশ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার হাড়িপুস্করনী এলাকার সলিমুল্লাহ সলু, নবী, সোহাগ, সাইফুল, মনির; বসন্তপুর এলাকায় টিপু, উত্তর তারাকুছা এলাকার মাদকের ডিলারখ্যাত আনোয়ার, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও বিএনপিকর্মী রহিম উল্ল্যাহ, ফেনাপুস্করনী এলাকার রুবেল, সুজনসহ বেশ কয়েকজন সীমান্তে এসব অবৈধ কারবারে জড়িত। অনেকগুলো বিষয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনেই হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেই বলেও অভিযোগ করেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক বাসিন্দা দাবি করেন, প্রতিরাতে আমজাদহাটের সীমান্তে আনুমানিক ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার মদ-গাঁজা, ইয়াবার কারবার চলছে। ভোর হওয়ার আগেই এসব মাদকদ্রব্য ছাগলনাইয়া,পরশুরাম ও ফেনীর বড় বড় মাদক কারবারিদের হাতে চলে যায়। ৫ আগস্টের পরে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে একটি মহল এলাকায় এসব অপরাধের সাম্রাজ্য দখল করলেও ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। রহিম মেম্বারের এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে বিএনপির নেতারা অবগত থাকলেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
হাবিবুর রহমান নামে ইউনিয়নের আরেক বাসিন্দা বলেন, একসময় এ সীমান্ত এলাকায় ১৫০০ টাকার বিনিময়ে ভারতে পাচার করা হতো। এখন একটি চক্র ২০ হাজার থেকে লাখ টাকার বিনিময়ে মানবপাচারে জড়িত। এতে ঢাকা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য নারী-পুরুষ এখানে সীমান্ত পাড়ি দিতে আসেন। যাদের অনেকে দেশে নানা অপরাধমূলক কাজের সঙ্গেও জড়িত।
জাফর ইমাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ মজুমদার বলেন, সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদকদ্রব্য সহজলভ্য হওয়ার কারণে অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থী সহজেই মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়ছে। এখন এলাকায় হাত বাড়ালেই সব ধরনের মাদক পাওয়া যায়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি এখনই বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন, তাহলে আগামীর জন্য এটি বড় ধরনের হুমকিস্বরূপ হবে।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় উত্তর তারাকুছা এলাকার অভিযুক্ত আনোয়ারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি বাড়ি সীমান্ত এলাকায় হলেও কৃষিকাজ করে সংসার চলে। সীমান্তে এমন কোনো কর্মকাণ্ডে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই। তবে স্থানীয় বিভিন্ন চক্র এসব অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত রয়েছে।
জানতে চাইলে অভিযোগ স্বীকার করে ইউপি সদস্য রহিম উল্যাহ দৈনিক ফেনীকে বলেন, সীমান্তে মাদক কারবার, গরু চোরাচালান, মানবপাচারসহ এসব কাজ এখন আমরা পুরোদমে করছি। আমাদের পেশাই এটি। ভারত থেকে পেঁয়াজ-রসুন, চিনি, গরুসহ বিভিন্ন জিনিসপত্রও দেশে এনে বিক্রি করি। পরে কোনো সাংবাদিককে গুনেন না মন্তব্য করে চড়াও হয়ে কল কেটে দেন তিনি।
দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এসব কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে জানতে চাইলে ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ফখরুল আলম স্বপন দৈনিক ফেনীকে বলেন বলেন, অভিযুক্ত ইউপি সদস্য রহিম উল্যাহ স্থানীয় বিএনপিকর্মী। তবে এ ধরনের কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে দলের পক্ষ থেকে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ইউনিয়ন বিএনপিকেও এ ধরনের অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে স্থানীয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) তারাকুছা ক্যাম্পে যোগাযোগ করা হলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ফুলগাজী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ লুৎফর রহমান দৈনিক ফেনীকে বলেন, মাদক, চোরাচালান, মানবপাচাররোধে সীমান্তে আমাদের টহল জোরদার রয়েছে। উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনুকূলে রাখতে ও মানুষের নির্বিঘ্নে বসবাস নিশ্চিতে বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।