ফেনী শহরের প্রাণকেন্দ্র ট্রাংক রোডসংলগ্ন রাজঝির দিঘির পাড়ে নিম্নবিত্ত মানুষের ঈদের বাজার জমে উঠেছে। প্রতিবারের মতো এবারও সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতাদের ভিড়ে মুখর হয়ে উঠেছে এই অস্থায়ী বাজার। প্লাস্টিক, চট ও বাঁশের তৈরছোট ছোট দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগের ঈদের তুলনায় এবার বেচাকেনা কিছুটা কম। তবু শেষ মুহূর্তে বিক্রি বাড়বে বলে তারা আশাবাদী।
ঈদ উৎসব সবার জন্য হলেও নিম্নবিত্ত ও স্বল্পআয়ের মানুষের জন্য কেনাকাটা সবসময়ই চিন্তার বিষয়। বড় বিপণিবিতান কিংবা ব্র্যান্ডের শোরুম তাদের সাধ্যের বাইরে থাকায় রাজঝির দিঘির পাড়ের এই ঈদ বাজার হয়ে ওঠে তাদের প্রধান ভরসা।
গতকাল বুধবার (২৬ মার্চ) সরেজমিনে গিয়ে ঘুরে দেখা যায়, বড় বড় বিপণিবিতান কিংবা ব্র্যান্ডের শোরুমের তুলনায় কম দামে শাড়ি, পাঞ্জাবি, থ্রি-পিস, শিশুদের পোশাক, জুতা, কসমেটিকসসহ নানা পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। পাঁচশ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যেই ভালো মানের পোশাক কেনা সম্ভব। শিশুদের পোশাক ১৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে মিলছে, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত ক্রেতাদের জন্য স্বস্তির।
বাজারটি অবৈধ হলেও এটিকে কেন্দ্র করে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, প্রায় ২-৩ হাজার মানুষ এ বাজারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। তারা এখানে ব্যবসা পরিচালনা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। স্থানীয় অনেকেই এই বাজারকে তাঁদের আয়ের প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে অবৈধ হওয়ায় এটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।
এই ভাসমান বাজারে প্রায় ৬ কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের স্ত্রীদের নামে রয়েছে আশা, ব্র্যাক, ব্যুরো বাংলা ও স্থানীয় ঋণদানকারী এনজিও'র ঋণ।
ব্যবসায়ী নুর নবী জানান, প্রায় ৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে তিনি এ ব্যবসা শুরু করেছেন। তবে এখনও মূলধন ফিরে পাননি। ঈদকে সামনে রেখে ক্রেতাদের জন্য নতুন জামা-কাপড় তুললেও বিক্রি আশানুরূপ নয়। তবে তিনি আশাবাদী, রমজানের শেষের দিকে বিশেষ করে ঈদের আগের দিনগুলোতে বেচাকেনা বাড়বে।
জামাল হোসেন নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, আমি রাজাঝির দিঘির পাড়ে প্রায় তিন বছর আগে এই ব্যবসা শুরু করেছি। শুরুতে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে, তবুও হাল ছাড়িনি। ব্যবসাটিকে ভালোভাবে দাঁড় করানোর জন্য এখন পর্যন্ত প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছি। তবে এখানে ব্যবসা নির্ভর করে মৌসুমি ক্রেতাদের ওপর। বিশেষ করে ঈদের সময় কিছুটা ভালো বিক্রি হয়, তখন কিছু লাভের মুখ দেখা যায়। এ ঈদে এখনও আশানুরূপ ক্রেতা পাইনি। তবে ঈদের ২-১ দিন আগে ক্রেতা বাড়বে।
রফিক উদ্দিন অপর এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা সবসময় উদ্বেগের মধ্যে থাকি কখন প্রশাসন এসে আমাদের ব্যবসা উচ্ছেদ করে দেয়। কয়েক লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এ ব্যবসা শুরু করেছি, কিন্তু সারা বছর তেমন বিক্রি হয় না। ঈদের সময়ই একটু ভালো বিক্রির সুযোগ পাই। আজকে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। আশা করছি ঈদের আগের দিনগুলোতে বিক্রি আরও বাড়বে।
এদিকে, নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের জন্য ঈদের কেনাকাটার অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছে রাজঝির দিঘির পাড়ের ঈদ বাজার। কম দামে মানসম্মত পোশাক ও আনুষঙ্গিক পণ্য পাওয়ায় তারা এখানে ভিড় জমাচ্ছেন।
পরিবারের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন আইয়ুব মিয়া। পেশায় তিনি নির্মাণ শ্রমিক। দৈনিক মজুরির উপর তার সংসার চলে, তাই বড় মার্কেটের দামী পোশাক তার সাধ্যের বাইরে। রাজঝির দিঘির পাড়ের ঈদ বাজারেই তিনি স্বল্প মূল্যে পরিবারের সবার জন্য পোশাক কেনার সুযোগ পেয়েছেন। তিনি বলেন, বাচ্চাদের জন্য নতুন জামা কিনতে পেরে ভালো লাগছে। বড় মার্কেটে গেলে অনেক খরচ হতো, কিন্তু এখানে কম দামে মোটামুটি ভালো জিনিস পাচ্ছি।
নিজের মা, বাবা ও স্ত্রী-সন্তানের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন রিকশাচালক বাবুল। তিনি বলেন, বরিশালে আমার পরিবার থাকে। ঈদের কয়েকদিন আগে বাড়িতে যাবো তাই সকলের জন্য ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছি।
নিজের জন্য ঈদের পাঞ্জাবী কিনতে এসেছে ছাদু ভূঞা নামের একটি ছোট্ট মুদি দোকানের ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, এখানে সুন্দর সুন্দর পাঞ্জাবী দেখেছি যেগুলো কম দামে পাওয়া যায়। ৪৫০ টাকা দিয়ে একটি পাঞ্জাবী কিনেছেন বলে জানান তিনি।