ফেনী পৌরসভার কামাল হাজারী জামে মসজিদ সংলগ্ন তিন নম্বর ওয়ার্ডের কামাল হাজারী রোড, দক্ষিণ বিরিঞ্চির কদলগাজী রোড এবং চার নম্বর ওয়ার্ডের আলম গাজী রোডের পাশে তৈরি হয়েছে ময়লার ভাগাড়। উন্মুক্ত স্থানে ময়লা ফেলে রাখায় ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, নাকমুখ চেপে দমবন্ধ করে রাস্তায় চলাচল করছেন পথচারী ও যাত্রীরা। উৎকট দুর্গন্ধ এবং ধোঁয়ায় চরম বিপাকে রয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ফেনী পৌরসভার কামাল হাজারী রোডের পাশে এই ময়লার স্তূপের সামনে রয়েছে কামাল হাজারী জামে মসজিদ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি। সড়কের মাঝে ময়লার স্তূপের সামনে দিয়ে মসজিদে মুসল্লীদের আসা-যাওয়ায় নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় বলে বলেন কামাল হাজারী জামে মসজিদের মোয়াজ্জেম মো. নাঈম। তিনি বলেন এই রাস্তার মাঝে ময়লার স্তূপ হওয়ায় রাস্তায় গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, প্রায়ই সড়ক দুর্ঘটনাও ঘটে।
দীর্ঘ চার পাঁচ বছর ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা ময়লার স্তূপ অপসারণের দাবি তুললেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. ফারুক। তিনি বলেন, দুর্গন্ধের জন্য দোকান করা যায় না, ময়লার দুর্গন্ধে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ছি। সময়মতো ময়লা নেওয়ার জন্য পৌরসভা থেকে কেউ আসেও না।
ইসমাইল নামের স্থানীয় আরেক বাসিন্দা বলেন, ময়লার স্তূপের ডাস্টবিনের বিষয় পৌরসভাকে জানানো হলে তাঁরা আমাদের ব্যক্তি উদ্যোগে ময়লা অপসারণ করতে বলেছে। ইতোমধ্যে আমরা স্থানীয় বাসিন্দারা মিলে ময়লা অন্য স্থানে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। আশা করি ঈদের পর পুরোপুরি এই সমস্যার সমাধান হবে।
অন্যদিকে ফেনী পৌরসভার পাঁচ নম্বর আতিকুল আলম সড়কের চার নম্বর ওয়ার্ডের সংযোগ সড়ক আলম গাজী রোড। আতিকুল আলম সড়কের পাশে আলম গাজী সড়কের শুরু দিকে শিশুদের খেলার মাঠে খোলামেলা জায়গায় তৈরি হয়েছে ময়লা ভাগাড়। এই ময়লা ভাগাড়ের বিপরীত পাশে রয়েছে মুক্ত জীবন মাদকাসক্ত পুর্ণবাসন কেন্দ্র। তার পাশে একটা আবাসিক কাওমী মাদ্রাসা, তাঁর অদূরে রয়েছে আলম গাজী সংলগ্ন রোডে মদীনাতুল উলূম কারীমিয়া ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা,ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসা-বাড়ি। এছাড়াও কিছুটা সামনে বিরিঞ্চি আর্দশ প্রাইমারি স্কুল, ব্র্যাংক ব্যাংকসহ জনগুরুত্বপূর্ণ অনেক গুলো স্থাপনা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এটি আগে শিশুদের খেলার মাঠ ছিল, আশেপাশের মানুষজন ময়লা ফেলার পর থেকে এটা পরিণত হয় ময়লার ভাগাড়ে। দীর্ঘদিন ধরে এই ময়লার ভাগাড় সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করলেও তা কোনোভাবে সরানো সম্ভব হচ্ছে না।
জয়নাল আবেদীন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, এখানে পৌরসভার কোনো ডাস্টবিন নেই, ময়লা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য পৌরসভার কোনো কার্যক্রম নেই। ভূমি মালিক যারা তাঁরা কোনো সংস্কার করছে না। তিনি আরো বলেন যে, তাঁর আগে স্থানীয় কাউন্সিলর সাহাবুদ্দিন কে বহুবার বলার পরও কোনো পদক্ষেপ নেই নাই। আমারা স্থানীয় বাসিন্দারা দুর্গন্ধে রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারছি না, আমরা এর চরম ভুক্তভোগী।
পরিষ্কার করার পর আশেপাশের মানুষজন আবার এনে ময়লা ফেলে বলে বলেন স্থানীয় বাসিন্দা ফেনী পৌরসভার মাষ্টার রুল সুইপার রেজাউল হক। তিনি বলেন, শুধুমাত্র ময়লার ভাগাড়ে ময়লা ফেলে না আশেপাশের ড্রেনগুলোতেও ফেলে ড্রেন বন্ধ করে রাখে। ড্রেনগুলো সকালে পরিষ্কার করলে বিকালে এসে আবার ময়লা ফেলে। নিষেধ করলেও কেউ শুনে না।
একইভাবে ফেনী পৌরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ বিরিঞ্চির মূল সড়ক কদলগাজী রোডের পাশে খেলার মাঠ পরিণত হয়েছে ময়লার ভাগাড়ে। এর পাশে রয়েছে বিরিঞ্চি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেড, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হক ডেকোরেশন। তাঁর কিছুটা সামনে রয়েছে মহিলা মাদ্রাসা, স্থানীয় হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের চেম্বারসহ গুরুত্বপূর্ণ কার্যালয়। রাস্তার পাশে ময়লার ভাগাড় হওয়াতে যানবাহনের যাত্রী, পথচারীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা রীতিমতো দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী আইয়ুব নবী মিন্টু বলেন, এখানে আগে ছেলেপেলেরা খেলাধুলা করত। তারপর দীর্ঘ সাত আট বছর ধরে এই খেলার মাঠে ময়লা ফেলে আসার কারণে খেলার মাঠটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধের কারণে এখানে দিয়ে মানুষ চলাচল করতে পারে না, পথচারীরা নাকমুখ চেপে চলাচল করে। ময়লার ভাগাড়ের কারণে রাস্তা দিয়ে চলাচল করার পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পৌরসভার ময়লার গাড়িকে খবর দিলে মাঝে মধ্যে এসে ময়লা নিয়ে যায় তবে এটা কোনো স্থায়ী সমাধান না।
এই ভূমির মালিক ডাঃ জাকির হোসেন বলেন, ময়লার দুর্গন্ধে পরিবেশের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। আমরা পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করব যে উনারা যেন ময়লাগুলো জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়। তিনি আরো বলেন, আমরা পৌরসভাকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাইনি, তবে আমরা পৌরসভায় আবেদন জানাব।
স্থানীয় বাসিন্দাসহ দূর-দূরান্তের পথচারীরা এসেও এখানে ময়লা ফেলে বলে বলেন শিক্ষার্থী ইফতেখার হোসেন ইয়ামিন। তিনি বলেন, আমাদের খেলার মাঠটি ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হওয়াতে আমরা এখন আর এখানে খেলাধুলা করতে পারি না। তাছাড়া স্কুল কলেজে শিক্ষার্থীদের জন্য এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করাটা স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
এ ব্যাপারে ফেনী পৌরসভার মেডিকেল অফিসার ডা. কৃষ্ণ পদ সাহা বলেন, কামাল হাজারী রোডের ডাস্টবিন অপসারণের বিষয়ে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া চেষ্টা করব। তিনি বলেন, খেলার মাঠ আমাদের সম্পদ, খেলা মাঠে ময়লার ভাগাড় থাকবে না। কদলগাজী এবং আলম গাজী রোডের খেলার মাঠের ময়লার ভাগাড় আমরা আগামী দুইদিনের মধ্যে পরিষ্কার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এ বিষয়ে আমরা স্থানীয় সুপারভাইজারদের অবগত করেছি যত দ্রুত সম্ভব এই ময়লার ভাগাড় পরিষ্কার করে খেলার মাঠে ফিরিয়ে আনতে।
পরিবেশ দূষণ রোধ এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ রয়েছে। এ ব্যাপারে ফেনী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোসম্মাৎ শওকত আরা কলি বলেন, এই আইনের অধীনে পরিবেশ দূষণকারী কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ময়লা বা বর্জ্য যেখানে সেখানে ফেলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। পরিবেশ দূষণের জন্য জরিমানা ও কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ যদি বজ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রক্রিয়াকরণ সঠিকভাবে না করে তাহলে অভিযোগের ভিত্তিতে পরিবেশ অধিদপ্তর পৌরসভার বিরুদ্ধে মামলা করে থাকে। এর আগেও আমরা ফেনী পৌরসভার বিরুদ্ধে খাঁজুরিয়ায় উন্মুক্ত স্থানে ময়লা ফেলায় মামলা করেছি।