জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী, পূরুষের তরবারি; প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়ালক্ষী নারী।’ এই প্রেরণা, শক্তি দেওয়া বিজয়ালক্ষী নারীরাই, প্রকৃত অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে যুগের পর যুগ ধরে। যেখানে পরিবার থেকে সমাজ, রাষ্ট্র গড়ায় নারীরা নিরব ভূমিকা রাখছে, সেইখানেই সরাসরি ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ‘নারী দিবস’ নিয়ে দৈনিক ফেনীতে নারীদের ভাবনার কথা তুলে ধরেছেন উম্মে রিপা

 



‘অধিকার ও নিরাপত্তায় নারীদের সোচ্চার হতে হবে’
‘নারী’ ২টা শব্দের গঠন মাত্র, নারী মাত্রই সে কোন না কোন ‘পুরুষের মা বোন অথবা কন্যা’। সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হোক, এতে কোন পুরুষের আপত্তি থাকতে পারে না। একজন নারী কোন না কোন ভাবে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে যা অনস্বীকার্য এবং এর সমাধান হওয়াটাও অপরিহার্য। বর্তমানে আমাদের দেশে নারীর অবস্থা এমন পর্যায়ে গিয়ে দাড়িয়েছে যেখানে তারা ঘর থেকে বের হতে গেলে পরিবার তাদের নিরাপত্তা নিয়ে সন্দিহান হয়ে থাকে। অবশ্য তার কারণও যুক্তিযুক্ত, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত এই সময়কালে দেশে মোট ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৭ হাজার ৪৭৯টি। কন্যাশিশুরাও রয়েছে নিরাপদের বাহিরে কারণ শুধু ১৬/১৭ বছরের নারী নয় ৬/৭ বছরের কন্যাশিশুও আজ ধর্ষণের শিকার। ২০২৪ সালে ২২৪টি কন্যাশিশু ধর্ষণের ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। যদিও অনেকেই মনে করেন, এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। বিভিন্ন কারণে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের করা নারীদের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক কাজ করে।
নারীরা ধর্ষণের পর মামলা করতে গেলে তাঁদেরকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। ফেনীর নুসরাত জাহানের ঘটনা আমাদের সবার মনে আছে। তিনি তাঁর মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন এবং থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে পুলিশ তাঁকে হয়রানি করে। পরে সেই শিক্ষক তাঁর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে নুসরাতকে হাত-পা বেঁধে পুড়িয়ে হত্যা করে। এ ঘটনা পুরো দেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল এবং নারী নির্যাতনের ভয়াবহ বাস্তবতা আবারও সামনে নিয়ে আসে। এ অবস্থা থেকে উন্নীতকরণের উপায় আমাদের নারীদের নিজেদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা, নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে সর্বপ্রথম নিজের অধিকার ও নিরাপত্তার দিকে সোচ্চার হতে হবে।

লেখক-
তাছপিয়াহ হক

শিক্ষার্থী, প্রাণীবিদ্যা ডিপার্টমেন্ট, ফেনী সরকারি কলেজ।

 

 


‘নারীরা সম্মান নিয়ে বাঁচতে চায়’
বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ নাহ আজ আর কবির ভাষায় বলবো না, আজ বলবো বিবেকের তাড়নায়, আজ বলবো চক্ষু লজ্জায়। আজ বলবো বাঁচতে চাই। নারী যাকে ইসলাম দিয়েছে রানীর সম্মান। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। হাদিসে এসেছে, স্ত্রীর সুপারিশ ছাড়া স্বামী জান্নাতে যেতে পারবে না। মহানবী (সা.) ঘোষণা করেন, ‘যার রয়েছে কন্যাসন্তান, সে যদি তাকে (শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে) অবজ্ঞা ও অবহেলা না করে এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয়; আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা নারীদের উত্তম উপদেশ দাও (উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করো)।’ হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘ইলম শিক্ষা করা (জ্ঞানার্জন করা) প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর প্রতি ফরজ (কর্তব্য)।

আমাদের গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ও নারীকে রানীর চেয়ে কোন অংশে কম রাখেনি। ভোটদানের অধিকার, অফিস-আদালতে একসাথে কাজ করার অধিকার, কাজের বিনিময়ে ন্যায্য ও সমান প্রতিদান বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি) পাবার অধিকার সম্পত্তি লাভের অধিকার, শিক্ষার্জনের অধিকার, সামরিক বাহিনীতে কাজ করার অধিকার, আইনগত চুক্তিতে অংশগ্রহণের অধিকার, এবং বিবাহ, অভিভাবক ও ধর্মীয় অধিকার। অনুচ্ছেদ নাম্বার ৯, ২৭, ২৮(১), ২৮(২), ২৮(৩), ২৮(৪), ২৯(১), ২৯(৩) ক,খ,গ, ৬৫(৩), সবই দিয়েছে সংবিধান, কিন্তু বাস্তবে সেই দেশের জনগণ হয়ে দিতে পারিনি সম্মান, জীবনের নিরাপত্তা।আজ সেই রানীকে আমরা বানিয়ে রেখেছি চাকরানী। বানিয়েছে লালসা, আর চাহিদার বস্তু।

এখনো বাবার সম্পত্তি মেয়েদের কপালে জুটতে কষ্ট হয়। এখনো স্বামীরা দেনমোহরের টাকা পরিশোধ না করে সংসার করছে আবার ডিভোর্স ও হচ্ছে, সেই বেলায়ও নারী তার পুরো দেনমোহরের টাকাও পায় না। এখনো ভাইরা তার বোনকে বিদায় দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে, দায়সারা হওয়ার জন্য তুলে দেয় কোন এক অত্যাচারক এর হাতে।

ইসলামে নারী পুরুষ উভয়ের জন্য পর্দা ফরজ। শুধুমাত্র আমাদের দেশে নারীর উপর পর্দা ফরজ। আবার সেই নাবালিকা মেয়ে ৭/৮ বছর যার বয়স, তার উপরও পর্দা ফরজ যে কিনা এখনো বুঝেই না পর্দা কি জিনিস। যার বুকে ওড়না পরার মত সময়ই হয় নাই তার উপর ও পর্দা ফরজ কেবল সেই বাংলাদেশি সাবালক পুরুষ এর উপর পর্দা ফরজ না। তাদের কাছে ফরজ তাদের যৌনতা যা তারা একটা বাচ্চা মেয়েকেও দেখে অনুভব করতে পারে। তবে আমি জানতে চাই হে পুরুষ আপনারা কি মুসলিম না? কুরআন কি আপনাদের জন্য না? তাহলে সুরা নিসা আমাদের কি শিক্ষা দিলো?

ঠিক তার বিপরীতে পৃথিবীর অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর কথা যদি বলি তার মধ্যে আমার দেখা মালেশিয়া একটা দেশ। যেখানে আমাদের মত তাদের কে নারীর অধিকার চাইতে হয় না, চাইতে হয় না নিরাপত্তা। কারন মালেশিয়া একটা মুসলিম প্রধান দেশ। এ দেশের জনগণ জানে নারী তাদের কাছে আমানত, নারী উত্তম মর্যাদাধারী। মালেশিয়া মাঝ রাতে যদি কোন সমস্যার কারনে কোন নারী রাস্তায় বের হতে হয় তবে পুলিশ সহ বাকি মানুষরা তার নিরাপত্তা নিয়ে সচেতন। অন্যদিকে বাংলাদেশের নারীর ঘরেই কোন নিরাপত্তা নাই সে রাতে বাহিরের নিরাপত্তা আশা করাই তো বেমানান।

তাই আজ নারী দিবসে, আমি এক নারী চিৎকার করে বলতে চাই, আমার সমান অধিকার চাই না, আমি আমার ধর্মের কুরআন, হাসিদ আর সাংবিধানিক অধিকার চাই। হে পুরুষ আমি বাঁচতে চাই, সম্মান নিয়ে বাঁচতে চাই।

-লেখক
মাহমুদা আক্তার অনামিকা
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, লিংক ইউনিভার্সিটি কলেজ, মালেশিয়া।

 


‘সর্বক্ষেত্রে নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে’
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে নারীর অবদান বাড়লেও বাড়ছেনা সম্মান। পাচ্ছে না নারী তার কাজের সঠিক মর্যাদা। বর্তমানেও নারীরা সর্বক্ষেত্রে পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে। দেশ- বিদেশে সুনাম কুড়িয়ে নিয়ে আসছে। কিন্তু নারী যে সম্মানটুকু পাওয়ার যোগ্য তা থেকে প্রতিনিয়তই বঞ্চিত হচ্ছে। দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, নারীদের আত্মহত্যা বেড়েই চলছে। পথে ঘাটে এখনো নারীরা অনিরাপদ। শকুনের কালো থাবা থেকে নারীদের রক্ষার্থে দেশের আইনকে আরও কঠোর হতে হবে। তবেই নারীরা শান্তিতে চলতে পারবে। দেশের শ্রমশক্তির অর্ধেক অংশ জুড়ে আছে নারীরা। এই নারী শ্রমিকদের যথাযথ মূল্যায়ন দেয়া হচ্ছে না। তবুও জীবনযুদ্ধে থেমে নেই নারীরা। কাজের দিক দিয়ে পুরুষের সাথে সমানভাবে এগিয়ে যাচ্ছে নারীরা। তারপরও আমরা নারীরা আমাদের প্রাপ্য সম্মান থেকে এখনো বঞ্চিত। সাধারণ ক্ষেত্রে, শিক্ষাক্ষেত্রে, কর্মক্ষেত্রে সব জায়গায় নারী যেন মুক্ত বাতাসের ন্যায় চলতে পারে সেই সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। নারীরা আঁধার ঘরের প্রদীপ। এই প্রদীপের আলো জ্বালিয়ে রাখা আমাদের সবার দায়িত্ব। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিশ্বের সকল নারীকে জানাই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।

-লেখক
উম্মে রুকাইয়া

শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, ফেনী সরকারি কলেজ

 



‘সমাজে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে হবে’
“কেউ নারী হয়ে জন্মে না, ক্রমশ নারী হয়ে উঠে”-হুমায়ূন আজাদ। নারীকে যুগযুগ ধরেই কেবল লৈঙ্গিক পরিচয়ের বাইরে মানুষ হিসেবে আখ্যয়িত করতে বাইনারী লিঙ্গের বিপরীত লিঙ্গের (পুরুষ) সমস্যা হয়েছে। তাই লৈঙ্গিক পরিচয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে তারা তৈরি করেছে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, যা নারীর মানুষ হিসেবে অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নানান নিয়মের গন্ডিতে আটকে নারী নামের লৈঙ্গিক পরিচয়ের মানুষকে করা হয় নিষ্পেষিত, অধিকার বঞ্চিত। ধর্ম হোক কিংবা সমাজ, সব নিয়ম যেন নারীকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে পুরুষদের আধিপত্য বিস্তারের জন্যই তৈরি! তবে মানুষ হিসেবে না হোক, নারী হিসেবে অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয় বারংবার, নানা উপায়ে, নানা বাহানায়।

শিক্ষা, কর্মসংস্থান, রাজনীতি বা অন্য ক্ষেত্র সবক্ষেত্রেই নারী তার অধিকার থেকে বঞ্চনার শিকার। বাংলাদেশে এই তথাকথিত নিয়ম ও নারী নিষ্পেষণ তুলনামূলক বেশি। গার্মেন্টস কর্মী হোক বা অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা—প্রত্যেক নারীকে কোনো না কোনোভাবে বৈষম্যের শিকার হতে হয়। যদিও বাংলাদেশে নারীশিক্ষার হার বেড়েছে, তবে দারিদ্র্য, বাল্যবিবাহ, সামাজিক ট্যাবু, এবং পারিবারিক অসচেতনতা অনেক মেয়ের শিক্ষাজীবন মাঝপথে থামিয়ে দেয়। বাংলাদেশে নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বাড়লেও, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তারা এখনও পিছিয়ে।

অন্যদিকে নিরাপত্তাহীনতা যেন নারীর নিত্যদিনের সঙ্গী! সে ঘরে হোক কিংবা বাইরে। নারীকে অপমান, অপদস্ত করার একটি সুযোগও যেন ছাড়ে না তারা। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলাচল তো নারীর জন্য যুদ্ধের মতো। যে পোষাকই পড়া হোক, কিছু চোখ গিলে খায় প্রতিনিয়ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘ওড়না পড়া’ নিয়ে উত্যক্ত করা মোস্তফা আসিফ অর্ণবকে ধর্মের দোহাই দিয়ে মব সৃষ্টি করে যে মূর্খতার পরিচয় দেওয়া হলো এটিই প্রমাণ করে নারীকে অসম্মান অপদস্ত করার পাঁয়তারা প্রতিনিয়ত করা হয়, যেখানেই সুযোগ পাওয়া যায়। অন্যদিকে শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউই পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়না, ধর্ষণের শিকার হয়। আশ্চর্যজনকভাবে ধর্ষকের কোন উপযুক্ত শাস্তি হয়না, বরং ধর্ষিতা নারীকেই সমাজ বহিষ্কৃত করে নানা সময়ে। দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে ধর্ম এখন শুধু নারীদের পোষাককেন্দ্রিক।

তবে সারাবিশ্বে নারীদের জন্য একটা দিন রয়েছে। নারীর অধিকার দেওয়া হয়নি, তবে স্বান্তনাস্বরুপ নারী দিবসে কিছু ভালো ভালো কথা দিয়ে নারীর মন গলানোর চেষ্টা করা হয়। নারীরাও খুশী হয়ে তাদের নারীত্ব প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। নারী বেঁচে থাকে নিজেকে বঞ্চনা করে, কেননা আত্মবঞ্চনাই পুরুষতন্ত্রের মতে নারীত্ব।

তবে আসল কথা হলো নারী দিবসের মৌখিক শুভেচ্ছা কারোই প্রয়োজন নাই। পারলে নারীর জন্য একটা সুরক্ষিত নিরাপদ স্বাধীন শান্তির পরিবেশ তৈরী করতে সাহায্য করেন একসাথে। নাইলে আপনাদের তথাকথিত শুভেচ্ছা আর লোক দেখানো কর্মসূচি দিয়ে কারো জীবন, সম্মান বাঁচবে না।

-লেখক
নাজমুন্নাহার মনি

শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 



‘সমাজে নারীদের প্রতি বৈষম্য দূর করতে হবে’
জাহেলিয়া যুগে কন্যা জন্মগ্রহন করলে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। কন্যা হিসেবে জন্মগ্রহন করা বড় অধিকার থেকে নারী বঞ্চিত। ছেলে ও মেয়ে বৈষম্য পরিবার থেকে শুরু। তা আমরা বাস্তবতায়, নাটক ও সিনেমায় অনেকে দেখেছি। একজন নারী বাবার কন্যা ভাইয়ের বোন স্বামীর স্ত্রী সন্তানের মা কতো সম্মানের আসন আল্লাহ দিয়েছেন নারীকে। আল্লাহতা নারীকে উর্ধ্বতন হিসেবে সৃষ্টি করেছে নিম্নতর নাহ। কিন্তু সেই সম্মান অর্জন করতে গিয়ে কত নির্যাতন থেকে বঞ্চিত নারীরা আজও। কৈশোর জীবন পেরিয়ে একজন নারী যখন স্বামীর ঘরে আসে তখন থেকে বাবার ঘরের রাজকন্যা আজ অন্যর ঘরের চাকরানী সম্মাননা পায়। বাবার আর্থিক অবস্থা যদি ভালো হয় তাহলে নির্যাতনের রুপ এক রকম আর যদি খারাপ হয় তাহলে তো কোন কথাই নেই নির্যাতনের পর্যায়ের। শ্বশুর বাড়ির নিয়ম আর দায়িত্ব বলে যে বোঝা মাথার উপরে চাপিয়ে দিয়ে ক্ষ্যন্ত হয়নাহ বাবার বাড়ীর ষোলো আনা হিসাব পাওনা নিয়ে শ্বশুরের পরিবার ব্যস্ত। স্বামী তখন নিরব ভূমিকা পালন করে কোন কিছু বুঝার কোন সুযোগ রেখে কাজ করে না তার পরিবার। মানসিক অত্যাচারে মা হওয়ার স্বাদটুকুও ভুলে যায় নারী। কার কাছে যাবে নারী কোথায় এর সমাধান? সামাজিক বিচার তো এখন দুর্নীতিবাজদের হাতের মোয়া, অসহায় দৃষ্টি তাদের দিকে তাকিয়ে চোখের ছলছল পানি ঝরে। সবদিক ভেবে যখন নারী ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত নেয় তখন এনজিও ইউনিয়ন গ্রাম্য আদালতে যায় তখন তারা আপোষ নিয়ে কথা বলে। পুরুষ শাসিত সমাজ ব্যবস্থা পুরুষ সুবিধা ও নীতি নিয়ে কাজ করে। প্রতিবাদী নারী আরও অসহায় যে না বাবার বাড়ীতে থাকতে পারে নাহ স্বামীর বাড়ীতে আবার যেতে পারে। সন্তানের ঐমায়া ভরা মুখের দিকে তাকিয়ে সারাজীবন এভাবে কাটতে হয় নারীদের জীবন। সামাজিক বিচার, ইউনিয়ন বিচার, উপজেলা গ্রাম্য আদালত, থানা সবকিছুই মিলিয়ে প্রকৃত নারীকে অধিকার ও নিরাপত্তা দেওয়া হোক এই হলো আমার নারী দিবসের সবচেয়ে বড় চাওয়া পাওয়া।

-লেখক
হোসনে আরা কাউসার নাহার

সভাপতি, ইয়ারপুর মহিলা কল্যাণ সংস্থা, দাগনভূঞা।

 


‘নারীদের প্রতি নারীদের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে’
নারীর সমঅধিকার বনাম ন্যায্য অধিকার- আমাদের দাবী মানতে হবে মানতে হবে, পুরুষ সম অধিকার চাই আমাদের দাবী মানতে হবে মানতে হবে, সত্যি কি তাই! ‘আমি একজন নারী’ পুরুষের মতো সমান লাইনে দাঁড়ানো, নিত্যনতুন ফ্যাশন করা, রাত-বিরেতে অবাধ বিচরণ করতে পারাটাই কি আমার স্বাধীনতা..! তাহলে এখনো কেন আমি নারী ধর্ষিত হই পথে ঘাটে লাঞ্ছিত হই কেন এতো অবজ্ঞা কেন আমি পড়ে থাকি বস্তায় করে ঐ ডাস্টবিনে সাথে মায়ের নাড়ী নিয়ে? এই কি আমার অধিকার শ্বশুর বাড়ির ফেলনা আর সমাজের তিরস্কার, বয়সটা তো পঁচিশ পাড় বিয়ে-থাহ্ কি হবে আর,বয়স আমার ত্রিশ পাড় বাচ্চাকাচ্চা তো বেজায় মুশকিল। আমি নারী...!! বয়স আমার পয়ত্রিশ স্বামীর কাছে কূর্নিশ, ছেলের আমার বিয়ে হলো ঘরে এবার লক্ষী এলো কদিন পর ছেলে বললো মা তোমায় নিয়ে তো বড় মুশকিল হলো। আমি নারী..!! মেয়ে আমার বড্ড লক্ষী বিয়ে হলো বড়ো বাড়ি বললো আমায় মা ছিলাম কি আমি অনেক ভারী দিলে যে আমায় ওমন বাড়ি! আমি নারী আমি অধীকারিনী সেখানে সমঅধিকার কথাটা আমার কাছে নিছক সামাজিক যুক্তি ছাড়া আর কিছুই না আর এই সমাজ নামক বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ গুলো দ্বারাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে নারীরা নিগৃহীত আর লাঞ্ছিত হচ্ছে যুগ যুগ ধরে। তাহলে কি আমার কোন অস্তিত্ব নেই...?? আছে আমার কাছে যখন আমি একজন নারী হয়ে নিজেকে ভালবাসা ও সম্মান করার পাশাপাশি অন্য একজন নারীকে ভালবাসবো ও সম্মান করবো বা করার চেষ্টা করবো তখন আমার সমঅধিকার চাওয়ার জন্য হাতে লাঠি নিয়ে রাজপথে নামতে হবে না। আমি নারী, আমিই সৃষ্টি।

-লেখক
সেঁজুতি সরকার

নারী উদ্যোক্তা, নরসিংদী

 

 

‘নারী মানেই আত্মত্যাগ’
পড়ুন এখানে...