মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, তিনি (এটিএম আজহারুল) ন্যায়ের পক্ষে, অসত্য ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, আল্লাহর দ্বীনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। এজন্য তাকে ধরে নিয়ে শেখ হাসিনা মনের মতো করে ফাঁসির আদেশ জারি করেছেন।
গতকাল সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে ফেনী শহরের গ্র্যান্ড সুলতান কনভেনশন হলে অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার ও আহতদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুর রহমান বলেন, সকল দলের বিবেচনায় সিনিয়রদের মধ্যে বর্তমানে তিনিই এখনো জেলে আছেন। আমরা বিচারব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখতে চাই। কিন্তু ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না। যদি কেউ আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে চান, তাহলে বাংলাদেশ বিস্ফোরিত হবে। ন্যায় বিচারের মাধ্যমে আমাদের ভাইকে আমাদের বুকে ফিরিয়ে দেন। মেহেরবানি করে গড়িমসি করবেন না৷ যে জাতি মুক্ত করেছে রক্ত দিয়ে, সেই জাতি প্রয়োজনে আবার রক্ত দিবে।
চাঁদাবাণিজ্যের জন্য শহীদরা রক্ত দেয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি ওই ভাইদের দলীয় বা ধর্মীয় পরিচয় জানতে চাইনা। যদি বাংলাদেশের নাগরিক হন, দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসেন, তাহলে এ অপকর্ম ছেড়ে দেন। যদি এ অপকর্ম অব্যাহত রাখেন সেটি হবে শহীদদের প্রতি স্পষ্ট বিশ্বাসঘাতকতা ও আহতদের প্রতি বিদ্রুপ করা। যে বা যারা এসব করছেন সরে আসুন। একজনের দখল ও চাঁদাবাণিজ্য থেকে মুক্ত করে আবার আমাদের হাতে তুলে দিতে শহীদরা রক্ত দেয়নি। আমরা সবক্ষেত্রে ন্যায়বিচার চাই। কোনো বৈষম্য ও দুর্নীতি চাই না। সাম্য ও মানবিক বাংলাদেশ চাই। মানবিক ও সাম্যের বাংলাদেশ গড়া পর্যন্ত আমরা বিশ্রাম নেব না। এ লড়াই চলমান থাকবে।
আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা সরকারের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার উল্লেখ করে জামায়াতের আমির বলেন, ফ্যাসিবাদ এমনি এমনি বিদায় নেয়নি। এখানে শহীদ পরিবার ও আহত ভাইবোনরা আছেন। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা এ পরিবর্তন পেয়েছি। এ পরিবর্তনের পর বাংলাদেশকে আমরা কোথায় নিয়ে যেতে চাই, পরিবর্তনের নায়কদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে চাই-সেই পরীক্ষা-নীরিক্ষা চলছে। শহীদ পরিবারগুলো যেখানে হাহাকার করছে, এ সময়ে সাহায্য ও সহানুভূতির নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। এ মুহূর্তে আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা সরকারের সবচেয়ে বড় অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যে সংগঠনের লোকেরা শহীদ হয়েছেন সেই সংগঠনেরও দায়িত্ব এ শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, আহতদের প্রতি সম্মান দেখানো। এখন ক্রেডিট কাড়াকাড়ির সময় নয়। কোন দলের কতজন শহীদ, সেই ভাগ-বাঁটোয়ারার সময় এখন নয়। এ শহীদরা জাতির সম্পদ। তারা কোনো দলের সম্পদ নয়। আমরা এজন্য শহীদের দলীয় শহীদ হিসেবে কখনোই দাবি করিনি এবং করবও না।
অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের পাশে দাঁড়ানোর কথা তুলে ধরে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যখনই খবর পেয়েছি চেষ্টা করেছি ওই শহীদ পরিবার ও আহতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। সামর্থ্য সীমিত হলেও আমরা এটুকু নিয়ে বসে নেই। তাদের প্রতি এটি আমাদের কোনো দয়া নয়, কর্তব্য। যদি এ কর্তব্য পালন না করি তাহলে এটি হবে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা। এ দায়িত্ব আমাদের পালন করতে হবে। তারা আমাদের ঋণী করে গেছেন।
তিনি বলেন, রাষ্ট্র যেন তাদের উপযুক্ত সম্মান দেন সে দাবি করছি। সরকারকে বলব সকল কিছু বাদ দিয়ে আগে আহতদের চিকিৎসায় হাত দেন। আরেকটি জীবন পঙ্গু হোক আমরা সেটি চাই না। এতে যদি জনগণের কোনো সাহায্য লাগে, দলের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে বলছি প্রয়োজনে আমরা পাশে থাকব। তারপরও আমাদের সন্তানদের চিকিৎসা হোক।
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে জামায়াতের আমির বলেন, আপনি যাদের ফাঁসি দিয়েছেন, তারা হাশরের দিন হাসবেন। আর সেদিন আপনি ও আপনার খুনি চক্রের বিচার আল্লাহর দরবারে হবে। সেই বিচার অবশ্যই বাংলার মাটিতে হোক এটি আমরা চাই। প্রত্যেকটি গণহত্যার বিচার হতে হবে। প্রত্যেক শহীদের হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। সে যত বড় ব্যক্তি হোক আইনের আওতায় এনে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।
এর আগে দুপুরের ফেনীর পরশুরামের বল্লামুখা বাঁধ পরিদর্শন, ফুলগাজীতে শহীদ শ্রাবণের কবর জিয়ারত ও পথসভায় অংশ নেন জামায়াতের আমির। বিকেলে দাগনভূঞা উপজেলায় একটি পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেন তিনি।
ফেনী জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আবদুর রহিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতের আমির মাওলানা মুফতি আবদুল হান্নান।এতে আরও বক্তব্য দেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাসুম, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও জেলা জামায়াতের সাবেক আমির অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঞা, শহীদ মাসুদের বড়ভাই মঞ্জুরুল হাসান ও ছাত্রশিবিরের জেলা সভাপতি আবু হানিফ হেলাল।
এ সময় জামায়াতের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, আন্দোলনে নিহত শহীদ পরিবার ও আহতরা উপস্থিত ছিলেন।