ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার পদে ১ হাজার ৮৬৬ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। কিন্তু পদে নিয়োগ দেওয়া হবে ৩২ জন। এ পদে পরীক্ষা দিতে গিয়ে ২০ জন ভুয়া পরীক্ষার্থী গ্রেপ্তার হয়েছে। গতকাল শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ১০ টায় শহরের চারটি কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরু হয়ে ১১টায় শেষ হয়। ৬০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষার দেওয়ার সময় ২০ জন ভুয়া পরীক্ষার্থীর গ্রেপ্তারের খবরে জেলাজুড়ে তুমুল আলোচনা ঝড় উঠেছে। মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার পদ এত লোভনীয় কেন এ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার মো. ফজলুর রহমান বলেন, এ পদ এত লোভনীয় কেন সে সম্পর্কে আমি অবগত নই। বর্তমানে বেকারত্বের কারণে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়ার সময় ২০ জনকে আটক করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পুলিশে সোপর্দ করেছে। এ ঘটনায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ওই পদে ৫ হাজার ২৫৫ জন আবেদন করে। এর মধ্যে ১ হাজার ৮৬৬ জন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তবে লোক নিয়োগ দেওয়া হবে প্রায় ৩২ জন। একইদিন দুপুরে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। উর্ত্তীণদের মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে।

ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অফিস সূত্রে জানা যায়, গত বছর ১২ নভেম্বর মিটার রিডার কাম মেসেঞ্জার পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আবেদন করে ৫ হাজার ২৫৫ জন। এ পদের বেতন প্রায় ২৫ হাজার টাকা। মিটার রিডার কাম ম্যাসেঞ্জার (চুক্তিভিত্তিক) এর কাজ হলো, বিদ্যুৎ মিটারের রিডিং গ্রহণ করা এবং প্রস্তুতকৃত বিল এর কপি গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেওয়া।

সূত্রে আরও জানা যায়, শনিবার সকালে শহরের চারটি কেন্দ্রে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি নিয়োগ পরীক্ষার আয়োজন করে। এতে ১ হাজার ৮৬৬ জন পরীক্ষার্থী এমসিকিউ পরীক্ষায় অংশ নেন। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্রের সঙ্গে ছবির মিল না থাকায় ফেনী সরকারি কলেজ ও সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে থেকে ৭ জন, সরকারি জিয়া মহিলা কলেজ কেন্দ্রে ৭ জন ও শাহীন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র থেকে ৬ জনকে আটক করা হয়।

এ প্রসঙ্গে ফেনী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা দৈনিক ফেনীকে বলেন, পরীক্ষায় পাশ করানোর উদ্দেশ্য প্রক্সি দিতে তাঁরা ফেনীতে আসে। পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে ভুয়া পরীক্ষার্থী ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এক পরিচালক বলেন, পদটি লোভনীয় কারণ হচ্ছে গ্রাহকের হয়রানি করে টাকা আদায় করা যায়। মিটার রিডার কাম ম্যাসেঞ্জার চাকুরি এক বছরের জন্য চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ হলেও পরে উৎকোচ দিয়ে চাকুরি স্থায়ী করা যায়। মিটার রিডাররা অনেক সময় টাকার বিনিময়ে কম ইউনিট দেখিয়ে বিল তৈরি করে গ্রাহকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নেয়। তিনি আরও বলেন, তাঁরা অনেক সময় ভুয়া বিল তৈরি করে গ্রাহকদের হয়রানি করে। মিটার স্থানান্তর করার সময়ও তাঁরা গ্রাহকের কাছ থেকে টাকা নেয়। টাকা না দিলে কাজ হয় না।

প্রক্সি পরীক্ষার গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যাচাই-বাছাই করা ছাড়া তারা পরীক্ষার কেন্দ্রে কিভাবে ঢুকেছে। এখানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন বা দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্ত করলে আরো অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে।