ফেনী জেলা ক্রীড়া সংস্থার ঘোষিত অ্যাডহক কমিটিকে ‘বিতর্কিত’ উল্লেখ করে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে খেলোয়াড় ও সংগঠকরা। এ সময় অবিলম্বে বিতর্কিত এ কমিটি বাতিল করে ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের অন্তর্ভুক্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানান তারা। গতকাল শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে শহরের শহীদ মিনার সংলগ্নে ফেনী জেলার সম্মেলিত খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকের ব্যানারে এ আয়োজন করা হয়।
ক্রীড়া সংগঠক কপিল উদ্দিনের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য দেন জেলা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য আসাদুজ্জামান দারা, সাবেক জেলা ফুটবল দলের খেলোয়াড় তৌহিদুল ইসলাম তুহিন, ম্যানচেস্টার ক্লাবের সভাপতি আবুল কাশেম, ইলেভেন স্টার ক্লাবের সভাপতি রবিউল হক রবি, ক্রীড়া সাংবাদিক ওমর ফারুক, জোনাকী সংসদের সভাপতি মহিবুল হক রাসেল, ক্রিকেট কোচ রিয়াজ উদ্দিন রবিন, শরিফুল ইসলাম অপু, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ফেনীর সমন্বয়ক মোহাইমিন তাজিম, প্রথম বিভাগ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় মো. শাহাদাত, ইয়াং স্টার ক্লাবের সভাপতি শাহরিয়ার আলম, ড্রাগন কারাতের মাহফুজুর রহমান, আরাফাত রহমান স্মৃতি সংসদের আহবায়ক জাহিদুর রহমান, রামপুর গোল্ডেন সংসদের সভাপতি মো. রাসেল পাটোয়ারী, ব্রাদার্স ক্লাবের সভাপতি ও জেলা ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি মতিউর রহমান সোহেল, ফুটবল খেলোয়াড় গিয়াস উদ্দিন প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, খেলোয়াড় বা ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের বাদ দিয়ে যারা কখনো ক্রীড়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না এমন ব্যক্তিদের নিয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের পাঠানো প্রস্তাবিত কমিটি উপেক্ষা করে আবারও ফ্যাসিবাদী কায়দায় একটি গোষ্ঠী প্রভাব খাটিয়ে ঢাকা থেকে এ কমিটি নিয়ে এসেছে। শিগগিরই এ কমিটি বাতিল করে ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি ঘোষণা করতে হবে। অন্যথায় আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণা দেন তারা।
ক্রীড়া সংগঠক মহিবুল হক রাসেল বলেন, বিগত সরকারের সময়েও কোনো প্রতিবাদ করলে এমন ট্যাগ দেওয়ার রীতি প্রচলন ছিল। এখনো প্রতিবাদ করতে গেলে আরেকটি গোষ্ঠী জুলাই বিপ্লবের কথা বলে ট্যাগ দিয়ে দমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা তাদেরকে বলব খেলোয়াড়দের সঙ্গে খেলতে আসবেন না৷ এ কমিটি বাতিল না হলে আন্দোলন চলমান থাকবে।
সংগঠক ইমন-উল হক বলেন, ক্রীড়াঙ্গনের লোকদের নিয়ে ক্রীড়া সংস্থার কমিটি করতে হবে। আজ (রোববার) আমরা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেব। অবিলম্বে এ কমিটি বাতিল করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমন্বয়ক মোহাইমিন তাজিম বলেন, মানুষের কথার সঙ্গে না মিললে আবারও ট্যাগ দিয়ে দমিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি শুরু হয়েছে। এ বিতর্কিত অ্যাডহক কমিটি নিয়ে প্রতিবাদ করায় অনেককে ফ্যাসিবাদের ট্যাগ দেওয়া শুরু করেছে। এমন কাজ নতুন আওয়ামী ফ্যাসিবাদের অংশ। এ কমিটি বাতিল করে যোগ্যদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হোক।
মানববন্ধনের পরে একটি মৌন মিছিল নিয়ে শহরের খেজুর চত্ত্বর, বড় মসজিদ ও প্রেসক্লাব প্রদক্ষিণ করে আন্দোলনকারীরা। এ সময় জেলার বিভিন্ন ক্লাবের সাবেক-বর্তমান খেলোয়াড় ও ক্রীড়া সংগঠকরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব (যুগ্ম সচিব) মো. আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জেলা ক্রীড়া সংস্থার অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে পদাধিকারবলে জেলা প্রশাসককে আহবায়ক ও জেলা ক্রীড়া অফিসারকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন কফিল মাহমুদ রিয়াজ, মো. ফয়েজ করিম, শাহ ওয়ালী উল্ল্যাহ মানিক, মো. সুজা উদ্দিন, আবদুল কাইয়ুম সোহাগ ও শহীদুল ইসলাম।
একটি সূত্রে জানা যায়, গত ৯ জানুয়ারি জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার নয় সদস্যের অ্যাডহক কমিটি অনুমোদনের জন্য একটি তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছেন। কিন্তু চূড়ান্ত কমিটিতে ওই তালিকা উপেক্ষা করে ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয় এমন লোকদের নিয়ে অ্যাডহক কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।