ফেনী শহরের পশ্চিম উকিলপাড়ায় দুই শিশু সন্তানসহ মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলার এখনো বিচার হয়নি। এ হত্যাকান্ডের ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও উদঘাটিত হয়নি মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টে হত্যার আলামত মিললেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনাটিকে আত্মহত্যা হিসেবে উল্লেখ করে আদালতে স্বামীসহ দুইজনের বিরুদ্ধে চার্জশীট জমা দিয়েছেন। তবে মামলার বাদীর দাবি, হত্যার সুনির্দিষ্ট প্রমাণ থাকার পর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এটিকে আত্মহত্যা বলে চার্জশীট দিয়েছেন। মামলার ব্যাপারে বর্তমানে কিছু জানেন না তিনি। তদন্ত কর্মকর্তা তাকে না জানিয়েছে চার্জশীট দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শহীদ উল্যাহ জানান, দীর্ঘ সময় তদন্ত শেষে মুক্তার স্বামী নুর মোহাম্মদ তারেক আহমেদ ও তার আত্মীয় সাইফুল ইসলাম ইমনকে অভিযুক্ত করে গত ২০২২ সালের ১ এপ্রিল আদালতে চার্জশীট দেওয়া হয়েছে। কথা কাটাকাটির জেরে স্বামী নুর মোহাম্মদ তারেকের প্ররোচনায় দুই সন্তানকে হত্যা করে মুক্তা আত্মহত্যা করেছে। এ ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালের ২৪ মে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ধ্রুব জ্যোতি পাল চার্জশীট গ্রহণ করে বিচারের জন্য দায়রা জজ আদালতে প্রেরণ করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় এখনো সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করা হয়নি। আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য. গত ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর ফেনীর শহরের পশ্চিম উকিলপাড়া পানির ট্যাংকি সংলগ্ন মোশারফ হোসেনের পুরাতন বাড়ীর আবদুর রউফ ভূঞা নিবাসের নীচতলায় ভাড়া বাসা থেকে ইতালী প্রবাসী নুর মোহাম্মদ তারেক আহমেদের স্ত্রী মর্জিনা আক্তার মুক্তা (২৬) ও তার মেয়ে সেন্ট্রাল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী তাসনিম আহাম্মদ মাহিম (৮) ও ছেলে মহিম আহাম্মদের (৮) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
মামলার বাদী জানান, এ মামলায় পাঁচবার তদন্ত কর্মকর্তা বদল করা হয়েছে। তবে আসামীরা প্রবাসে আত্মগোপনে রয়েছেন। চট্টগ্রাম ফরেনসিক ল্যাবের সহকারি রাসায়নিক পরীক্ষক মো. নজরুল ইসলাম হত্যা করা হয়েছে বলে ভিসারা রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন।
মামলার বাদী নিহতের ভাই মাসুম জানান, বোন, ভাগিনা ও ভাগ্নীর হত্যার দ্রুত হত্যার বিচার চান তিনি। বিচারের আশায় থাকতে থাকতে গত ২০১৯ সালের ৫ জুন রোজার ঈদের দিন আমার বৃদ্ধা মা মারা গেছেন। আসামী তারেক অন্যত্র বিয়েও করেছেন।
মুক্তার পরিবারের দাবি, শুরুতে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা হিসেবে প্রচার করে পুলিশ। মামলাটি প্রথমে ফেনী মডেল থানার এসআই তাহমিদুর রহমান ও পরে ফেনী মডেল থানার তৎকালীন ওসি রাশেদ খান চৌধুরী তদন্ত করেন। এক বছর ধরে কোন মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর তদন্তের জন্য সিআইডিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিআইডি এসআই তারেক মাহমুদের তদন্তে তৃতীয় পক্ষ জড়িত বিষয় উঠে আসে এবং ভিসেরা রিপোর্টে হত্যার আলামত পাওয়া যায়। এ ফাঁকে সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা বিদেশে চলে গেছেন। পরে সিআইডির আরও তিনজন এসআই মামলাটি তদন্ত করলেও মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য আড়ালেই থেকে গেছে। সর্বশেষ ২০১৯ সালে সিআইডি’র এসআই শহীদ উল্যাহ মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান। দীর্ঘ সময় তদন্ত শেষে গত ২০২২ সালের ১ এপ্রিল ঘটনাটিকে আত্মহত্যা হিসেবে উল্লেখ করে ও আত্মহত্যার প্ররোচনায় মুক্তার স্বামী তারেক ও তার আত্মীয় সাইফুলকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দিয়েছেন।
এসআই শহীদ উল্যাহ জানান, মামলাটির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। এজন্য নুর মোহাম্মদ তারেক ভাগ্নি রুবাকে (১৬) কয়েকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জড়িতদের শনাক্ত করতে আরও কয়েকজন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।