গত এক বছরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে ফেনীতে জেলা প্রশাসন ও জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পৃথক অভিযানে ২৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এর আগের বছরের তুলনায় ফেনীতে ভোক্তা আইন লঙ্ঘণে জরিমানার অঙ্কের পরিমাণ বাড়লেও ভোক্তারা বলছেন, তবুও বাজারে প্রতারণা, ভেজাল এবং দ্রব্যমূল্যের অস্থিতিশীলতা কমছে না।
জেলা প্রশাসন হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০২৪ সাল জুড়ে জেলাজুড়ে ভোক্তা অধিকার আইনে ১৭৮টি অভিযানে ৩২৩টি মামলায় ১৩ লাখ ১৩ হাজার ৫০ টাকা জরিমানা করেছে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই বছর ৭২টি অভিযানে ১৪০টি প্রতিষ্ঠানকে ১১ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এ ব্যাপারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ফেনীর সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো: কাউসার মিয়া বলেন, ভোক্তা এবং ব্যবসায়ী কেউই সচেতন নয়। ব্যবসায়ীরা নৈতিকতার দিকে নজর দেন না, কেবল লাভ নিয়ে চিন্তা করে। অন্যদিকে ভোক্তারাও প্রতিবাদ করে না। যার কারণে ভোক্তা আইন যথাযথ বাস্তবায়িত হয়না।
এ প্রসঙ্গে শহরের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে প্রতিবেদকের কথা হলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অনেক ব্যবসায়ীরা আছে যারা আইন মেনে চলে না। জরিমানা করলেও তারা সচেতন হয় না। যার কারণে ভোক্তার আইন অরক্ষিতই থেকে যায়।
আইন বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: কাউসার মিয়া জানান, আইন বাস্তবায়নে ক্ষমতা দেয়া উচিত। মাঠ পর্যায়ে আইন বাস্তবায়ন না করতে পারলে তা লঙ্ঘিত হবে। আইনের প্রয়োগে ভোক্তা অধিকারকে সম্পূর্ণ ক্ষমতা দেয়া হয়নি। পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে লোকবল সংকট রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে অনেকগুলো দপ্তরের সম্পর্ক আছে। ভোক্তা অধিকার কেবল ভোক্তা আইন মানা হচ্ছে কিনা তা যাচাই করে দেখে। কিন্তু বাজারে আসার আগে এসব দেখার কথা কৃষি বিপনন কর্মকর্তার। এরপর ভোক্তা অধিকার ও জেলাপ্রশাসন দেখবে। সব দপ্তর একযোগে বাস্তবায়ন করলে ভোক্তার অধিকার বাস্তবায়ন হবে।
সায়েম উল্ল্যাহ নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, বাজারে গেলে শুনি শুধু অভিযান হয় তবুও কারও মধ্যে সচেতনতা দেখি না। সচেতনতা বাড়াতে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের ফেনী ফোকাল পারসন নাজমুল হক শামীম বলেন, ভোক্তা মুখরোচক খাবারের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। এক্ষেত্রে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন করে অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
এক বছরে ভোক্তা অধিকারের যত অভিযান
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যনুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭২দিন অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৪০টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে ১১ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। এর আগে ২০২৩ সালে অভিযান চালিয়ে ৯ লাখ ৬১ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
একই দপ্তরের তথ্যানুযায়ী, গত ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ৭ দিন অভিযান পরিচালনা করে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ফেব্রুয়ারিতে ৫ দিন অভিযান পরিচালনা করে ৭টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মার্চে ৭ দিন অভিযান পরিচালনা করে ১৬ টি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এপ্রিলে ৪ দিন অভিযান পরিচালনা করে ৬ টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। মে মাসে ৮ দিন অভিযান পরিচালনা করে ১০টি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ১২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
জুন মাসে ৫ দিন অভিযান পরিচালনা করে ৮ টি প্রতিষ্ঠানকে ৬১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জুলাই মাসে ৩ দিন অভিযান পরিচালনা করে ৬ টি প্রতিষ্ঠানকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আগস্ট মাসে ১ দিন অভিযান পরিচালনা করে ১ টি প্রতিষ্ঠানকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে ৭ দিন অভিযান পরিচালনা করে ১০ টি প্রতিষ্ঠানকে ৯৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অক্টোবর মাসে ৯ দিন অভিযান পরিচালনা করে ২৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৬ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। নভেম্বর মাসে ৯ দিন অভিযান পরিচালনা করে ২৬ টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং ডিসেম্বর মাসে ৭ দিন অভিযান পরিচালনা করে ১৪ টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।