১১ জন বন্ধু ঈদ শপিং করতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে তিনজন বসেছিল ট্রেনের সামনে। পথিমধ্যে মুহুরীগঞ্জ এলাকায় পৌঁছালে ট্রেনটি একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিন বন্ধু। এ ঘটনায় সবমিলিয়ে প্রাণ হারিয়েছিল ছয় জন। গেল বছরের ৫ এপ্রিল ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুর মুহুরীগঞ্জ ব্রিজ সংলগ্ন বালুমহাল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। যা দেশজুড়ে রেলপথের নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনায় ছিল।

ওই ঘটনায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন, বরিশালের উজিরপুর উপজেলার কাউয়ারাকা গ্রামের আবুল হাওলাদারের ছেলে ট্রাকচালক মো. মিজান (৩২), কুমিল্লা জেলার লাকসাম মনোহরপুর এলাকার আমির হোসেনের ছেলে আবুল খায়ের (৩৮), তার ছেলে আশিক, একই জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার চিওড়া ইউনিয়নের শাকতলা গ্রামের তিন বন্ধু ইয়াসিনের ছেলে সাজ্জাদ, রুহুল আমিনের ছেলে রিফাত এবং আমেরুন্নেসার ছেলে দ্বীন মোহাম্মদ।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সেদিন দুর্ঘটনার সময় গেটম্যান ঘটনাস্থলে ছিলেন না। ফলে ওইসময় সিগন্যাল বারটি ফেলেননি কেউ। এ কারণে ট্রাকটি বিনা বাধায় রেললাইনে উঠে পড়ে। এরপর দ্রুতগতির ট্রেন ট্রাকের পেছনের অংশে ধাক্কা দেয়। এতে করে হতাহতের ঘটনা ঘটে।

নিহত দ্বীন মোহাম্মদের ফুফাতো ভাই ওমর ফারুক হৃদয় দৈনিক ফেনীকে বলেন, ওইদিন সকালের দিকে গ্রামের ১১ জন বন্ধু মিলে তারা ঈদ শপিং করতে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে নিহতদের তিনজন ট্রেনের সামনে বসে। পথিমধ্যে মুহুরীগঞ্জ এলাকায় পৌঁছালে ট্রেনটি একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। ঘটনাস্থলেই তারা মারা যান। ময়নাতদন্ত ছাড়াই ঘটনাস্থল থেকে তাদের মরদেহ বাড়ি নিয়ে দাফন করা হয়।

নিহত আবুল খায়েরের শ্যালক রুবেল বলেন, আশিক ও তার বাবা আবুল খায়ের ট্রেনের ইঞ্জিনে বসে চট্টগ্রাম যাচ্ছিলেন। এমন সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। তাদের মধ্যে আবুল খায়ের ঘটনাস্থলেই মারা যান। আর গুরুতর আহত অবস্থায় আশিককে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় দুর্ঘটনাস্থলের লেভেল ক্রসিংয়ের দায়িত্বে থাকা গেটম্যান মো. সাইফুল ইসলাম ও মো. রাশেদকে আসামি করে পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়। পরে ৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বামন সুন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গেটম্যান মো. সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

একইসঙ্গে ঘটনার সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে ৬ এপ্রিল ৬ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তদন্ত কমিটিতে আহবায়ক হিসেবে ছিলেন বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা (ডিটিও) আনিসুর রহমান। কমিটিতে অন্যদের মধ্যে ছিলেন- রেলওয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবদুল হানিফ, বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোকো) সাজিদ হাসান নির্জর, রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর কমানডেন্ট রেজানুর রহমান, রেলওয়ের বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার আনোয়ার হোসেন এবং বিভাগীয় টেলিযোগাযোগ ও সংকেত প্রকৌশলী জাহেদ আরেফিন তন্ময়।

চট্টগ্রাম রেলওয়ের তৎকালীন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাসান চৌধুরী বলেন, দুর্ঘটনার সময় সিগন্যাল বারটি ফেলা হয়নি বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি।

রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (পথ) রিটন চাকমা ইতোমধ্যে বলেন, গেটম্যানদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। তারমধ্যে আমি বাদী হয়ে লাকসাম রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করেছিলাম।