আগস্টে ফেনীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কৃষিখাতে বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন কৃষক। নিত্য নতুন ফসল চাষের পাশাপাশি ফেনীতে গত মৌসুমের তুলনায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষা আবাদ করেছেন তারা। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি মৌসুমে সরিষা আবাদে ফেনীতে বাম্পার ফলন হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে। এতে বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সহজ হবে।

জেলায় চলতি মৌসুমে ৬ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ইতোমধ্যে ৬ হাজার ৬৪ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। এখন বিভিন্ন স্থানে সরিষা আবাদের কাজ হচ্ছে। অন্যদিকে অন্যান্য ফলনের তুলনায় সরিষায় লাভ বেশি পাওয়ায় কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফেনী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে ৩ হাজার ৪৯৪ হেক্টর, ২০২২ সালে ১ হাজার ৮০৬ হেক্টর, ২০২১ সালে এক হাজার ৯০৭ হেক্টর ও ২০২০ সালে এক হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছিল। সে হিসেবে ফেনীতে সরিষা আবাদের পরিমাণ দিন দিন বেড়েছে। গত মৌসুমের তুলনায় এ বছর সরিষা আবাদের পরিমাণ দ্বিগুণ বেড়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ফেনী ছয় উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশী সরিষা আবাদ হয়েছে সোনাগাজীতে। এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৬৪৮ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। গতবছরের এ উপজেলায় সরিষায় আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৪৭০ হেক্টর জমিতে। ফেনী সদর উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ২ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে। গতবছর আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৯৩০ হেক্টর জমিতে। ছাগলনাইয়া উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬২০ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রার ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৬৫০ হেক্টর জমিতে। সরিষা গতবছর আবাদ হয়েছে ৫৮০ হেক্টর। ফুলগাজী উপজেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬৮০ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ৬৮২ হেক্টর। সরিষা গতবছর আবাদ হয়েছে ৬৩৫ হেক্টর। পরশুরাম উপজেলা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২৪২ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ২০৫ হেক্টর। গতবছর আবাদ হয়েছে ২২৬ হেক্টর। দাগনভূঞা উপজেলায় আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২৪০ হেক্টর জমিতে। আবাদ হয়েছে ২০০ হেক্টর। গত বছর আবাদ হয়েছে ২২৫ হেক্টর জমিতে।

লেমুয়া ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ঝন্টু কুমার নাথ জানান, সদর উপজেলার মধ্যে লেমুয়া ইউনিয়নে সরিষা আবাদ বেড়েছে। প্রায় ১৫০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সষিরা চাষে আরো উৎসাহিত ও আর্থিকভাবে লাভবান হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ একরাম উদ্দিন জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সরিষা চাষ করে আর্থিকভাবে সাবলম্বী হতে পারবে। আমন ধান কাটার পর তেল জাতীয় বীজ ও ডাল জাতীয় বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে ১২ হাজার কৃষককে। প্রায় ১ কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৪০০ টাকা বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে। সরিষা চাষে ৫ হাজার কৃষকদের উৎসাহিত করতে সরকার বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ করেছে।

উল্লেখ্য, সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হিসেব অনুযায়ী আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় ফেনীতে কৃষিখাতে ৪৪৬ দশমিক ৪৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।