ফেনীর পৌর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফলেশ্বর এলাকার সাবেক কাউন্সিলর গোলাম ফারুকের ভাই গোলাম কিবরিয়া বকুলের বাসা থেকে গত বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধ নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকা-ের তিনদিন পার হলেও ঘতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত জড়িত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এখনও শনাক্ত হয়নি ঘটনার সময় সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাওয়া সে অজ্ঞাত যুবকের পরিচয়। এঘটনায় শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) নিহত মাসুদার ছেলে মো. জাফর বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটনে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করছে।

ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ৯ টা ১৩ মিনিটে কালো প্যান্ট ও সাদা চেক শার্ট পরিহিত অজ্ঞাত এক যুবক ওই ভবনে প্রবেশ করছে। আবার ৯ টা ১৭ মিনিটে ভবন থেকে দৌড়ে বের হতে দেখা যায় ওই যুবককে। নিহতের পরিবারের দাবি এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকা-। অজ্ঞাত যুবককে আইনের আওতায় আনা গেলে হত্যাকা-ের মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

মামলার বাদী মো. জাফর বলেন, আমার মা প্রায় ৮ বছর ধরে ওই এলাকার বিভিন্ন বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতেন। তিনি খুবই সহজ-সরল একজন মানুষ ছিলেন। হত্যাকা-ের শিকার হবার মতো কারও সাথে তার বিরোধ ছিল না। তবুও আমার মা নির্মম হত্যাকা-ের শিকার হলেন। কেন আমার মাকে হত্যা করা হল, কারা জড়িত পুলিশ চাইলে এটি বের করতে পারবে। আমি মায়ের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানাচ্ছি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। অজ্ঞাত সে যুবকের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। হত্যাকা-ের রহস্য উদঘাটনের জন্য ওইদিন ভবনে উপস্থিত অন্যান্য বাসিন্দাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই অজ্ঞাত সে যুবককে আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে সংগ্রহীত আলামত পরীক্ষণের জন্য পাঠানো হবে। আপাততঃ সিসিটিভির সে অজ্ঞাত যুবককে আটকের জন্য চেষ্টা চলছে।

ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯ টার দিকে বৃদ্ধ নারীর গলাকাটা মরদেহ পড়ে থাকার খবর পেয়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও পিবিআই, সিআইডির একাধিক টিম ঘটনাস্থল থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন। ঘটনার সময় ভবনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে এক যুবক ভবনে প্রবেশ করছেন এবং কিছু সময় পর সে যুবক দৌড়ে বের হয়ে যায়। এসময় ভবনের সিঁড়িতে রক্তমাখা জুতার ছাপ ও দেয়ালে লেগে থাকা রক্তমাখা হাতের ছাপ সংগ্রহ করা হয়েছে। তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলে হত্যাকা-ের আসল কারণ বেরিয়ে আসবে।

উল্লেখ্য গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ টার দিকে ফেনী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বিএনপি নেতা গোলাম ফারুকের ভাই গোলাম কিবরিয়া বকুলের বাসার সোফার নিচ থেকে বৃদ্ধা নারীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত মাসুদা বেগম ফেনী সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পিঠাপাশারী এলাকার মোস্তফা ভূঁঞা বাড়ির সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। তিনি গত ৮ বছর ফারুক কমিশনার বাড়িতে গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। শুক্রবার রাতে ময়নাতদন্ত শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।