জনবল, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের অভাবে প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবা মিলছে না ফুলগাজীর ৩১ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কাঠামো অনুযায়ী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৫ জন মেডিক্যাল অফিসার থাকার কথা। বর্তমানে মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ মোঃ আশরাফুজ্জামান ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে থাকলেও এখানে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) মেডিসিন, গাইনী ও সার্জারী কনসালটেন্ট নেই। একজন মেডিকেল অফিসার (এএম) আয়ুর্বেদিক ডাঃ গাজী আবদুল লতিফ গত বছর বদলি হওয়ায় এ পদটিও শূন্য রয়েছে। এছাড়া কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে স্বাস্থ্য কম্পপ্লেক্সের দুই চিকিৎসক ডাঃ এবিএম সানজিদ ও ডাঃ নাফিজা আনজুম বিদেশে রয়েছেন। ইউনিয়নে স্থাপিত উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ৬টি মেডিকেল অফিসার পদের বিপরীতে ৪ জন থাকলেও ২টি পদে রয়েছে চিকিৎসক সংকট। হাসপাতালের রোগীদের দেখভাল করার জন্য সেবক-সেবিকার ৪টি পদ খালি রয়েছে। মিডওয়াইফ পদে লোকবল নেই। আয়া ও ওয়ার্ড বয়ের ৫টি পদের বিপরীতে ৩ পদ খালি। পরিচ্ছন্নতা কর্মীর ৫টি পদের বিপরীতে ৪টিই শূন্য। ডেন্টাল সার্জন হিসেবে ডাঃ শাম্মি আক্তার দায়িত্ব পালন করলেও এ বিভাগের যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট। অফিস সহায়ক পদে লোক নেই। নেই প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা। হাসপাতালের নতুন অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেওয়া হলেও চালক নেই। সিকিউরিটি গার্ড ২ টির মধ্যে ২টি পদই শূন্য। অন্যদিকে মাঠ পর্যায়ে ১৮টি স্বাস্থ্য কর্মীর বিপরীতে ১২ জন নেই। স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে ১টি পদে লোক নেই। সহ-স্বাস্থ্য পরিদর্শক পদে ৪ জনের মধ্যে ২টি পদে জনবল নেই। প্রধান সহকারি অফিস সহকারী, পরিসংখ্যানবিদ, স্টোর কিপারে লোকবল নিয়োগ নেই। এছাড়া ৬ বছরের শেষ হয়নি হাসপাতালের নতুন ৬ তলা ভবনের নির্মাণ কাজ।
স্থানীয় মানুষরা জানান, জনবল সংকটে ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি এখন নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ৩১ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা বিভিন্ন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষকে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তিনজন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার পদায়ন ও বদলি করা হয়েছে। গত ১৮ ডিসেম্বর নবাগত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া যোগদান করেছেন।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীরা জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন বিভাগে জনবল না থাকায় উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ উন্নত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। হাসপাতালে সার্জারি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তথা সিনিয়র কনসালট্যান্টের পদে জরুরি লোকবল নিয়োগ প্রয়োজন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সবসময়ই ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এতে তাদের সেবা দিতে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও বাকিদের হিমশিম খেতে হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যথাযথ সেবা না পেয়ে অনেক রোগী চলে যাচ্ছেন স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কুকুর ও সাপের কামড়ে আহত রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই, নেই জলাতংকের ভ্যাকসিন। ইপিআই টিকার মধ্যে হাম-রুবেলা ও পোলিও টিকা দেওয়া হলেও তাও অপর্যাপ্ত। আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটিও বর্তমানে অকেজো।
অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে রয়েছে একটি পুরনো এক্সরে মেশিন, যা দিয়ে ঠিকমত এক্সরে করা যায় না। বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রত্যাশিত সেবা না পেয়ে অনেকে দালালদের মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে যান স্থানীয় ক্লিনিকে। ফলে তারা বিভিন্ন সময় অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে নবাগত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া জানান, ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারের পাশাপাশি জনবল সংকট চলমান। ফলে কাক্সিক্ষত সেবা প্রদান সম্ভব না হলেও সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমরা চেষ্টা করছি। সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সেবা দেয়া সম্ভব তা রোগীদের দিচ্ছি। জনবল সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাটে স্থাপিত ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালু করা হয়। এর দুই যুগ পরে জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দিতে ২০১৭ সালে হাসপাতালের কলেবর বৃদ্ধিতে ১৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০ শয্যার নতুন একটি ছয় তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ২০১৮ সালে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনটি নির্মাণের শর্তানুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমএস ডালি কনস্ট্রাকশন লিমিটেড ২০১৯ সালে তা বুঝিয়ে দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৬ বছর পরেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ৬ তলা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনটির নির্মাণের শেষ পর্যায়ে ফিনিশিং (লিফট ও রং) এর কাজ চলছে।