আওয়ামী লীগের তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর ৮২টি ব্যাংক হিসাবে ৫৪৮ কোটি টাকা মোট লেনদেনের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফেনী ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতির’ অনুসন্ধানে নেমে এসব তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি। এসব অ্যাকাউন্টে ২৮০ কোটি টাকার বেশি জমা পড়েছে, আর উত্তোলন করা হয়েছে ২৬৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা, বর্তমানে জমা আছে ১২ কোটি ৬১ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, অনুসন্ধান শেষে গতকাল বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) নিজাম হাজারীর বিরুদ্ধে ১৮ কোটি ৭২ লাখ ৮৪ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা ১ এ এই মামলা করেন সংস্থাটির উপপরিচালক মোহাং নূরুল হুদা।

এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, নিজাম উদ্দিন হাজারীর এসব ব্যাংক হিসাবে ৫৪৮ কোটি ৮০ লাখ টাকার সন্দেহজনক ও অস্বাভাবিক লেনদেনের প্রমাণ মিলেছে দুদকের অনুসন্ধানে।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নিজাম উদ্দিন হাজারী সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্বপালনকালে ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকা টাকা বৈধ করার জন্য তিনি তার বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে এসব সন্দেহজনক ও অস্বাভাবিক লেনদেন করেছেন। এসব ব্যবসাসমূহে যে পরিমাণ মূলধন বিনিয়োগ করেছেন, তার তুলনায় অনেক বেশি অর্থ সন্দেহজনক ও অস্বাভাবিক অসংখ্য লেনদেনের মাধ্যমে হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তর করেছেন বলে মনে করছে দুদক।

এজাহারে আরও বলা হয়, নিজাম হাজারী ২০১১ সালে ফেনী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। পরে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ২০১৪ সালের পর থেকে টানা তিন মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়েছে, অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’ ছিলেন এবং তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন জ্ঞাত আয় বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন, যার কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। আসামির বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২), ৪ (৩) ধারায় ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫ (২) ধারায় মামলাটি করেছে দুদক।

গত তিন সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে জয়লাভ করেন জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদ নিজাম উদ্দিন হাজারী। গত ১৫ বছরে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, নিয়োগ বাণিজ্য, দলীয় পদ–বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার, নিজ ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের সত্যতা মেলে দুদক’র গোয়েন্দা দলের অনুসন্ধানে।