দীর্ঘ সময় দেশে বেকার থাকার পর গত ২০১৭ সালে হাউজ ড্রাইভারের ভিসায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবে পাড়ি জমায় ফেনীর পরশুরামের আব্দুল হক স্বপন। দীর্ঘ সাত বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে গত সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় একটি ফ্লাইটে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন আব্দুল হক। স্বাভাবিকভাবে প্রবাস থেকে কোন প্রবাসী দেশে আসলে তাকে আনতে বিমানবন্দরে ভিড় জমায় স্বজনরা। কিন্তু প্রবাস ফেরত আব্দুল হক স্বপনের বেলায় ঘটেছে ভিন্ন চিত্র। চারদিকে ঘুরাঘুরি করেও পাওয়া যায়নি হকের স্বজনদের। পরবর্তীতে অসুস্থতায় জর্জরিত এই প্রবাসী হতাশ হয়ে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন)-এর দারস্থ হন। পরে এপিবিএন কর্মকর্তারা আব্দুল হককে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের কাছে হস্তান্তর করেন। তার এমন পরিনতি নিয়ে তার পরিবারের নিকট ক্ষোভ প্রকাশ করছে সচেতন নাগরিকরা। সামাজিক মাধ্যমে চলে করেছেন নানা আলোচনা-সমালোচনা।

তবে প্রবাসী আব্দুল হকের পরিবারের অনুসন্ধানে নেমে ভিন্ন তথ্য পেয়েছে দৈনিক ফেনী। ওই প্রবাসীর পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে পাওয়া গেছে নানা ভিন্ন তথ্য। তার বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে স্বজনদের।

আবদুল হকের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় বেকার থাকার পর স্ত্রী রাবেয়া আক্তারের ভাই আবদুল মুমিনের সহযোগিতায় সৌদি আরব যান আবদুল হক। প্রবাসে যাওয়ার পর কিছুদিন সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও পরে সেখানে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে তিনি। বন্ধ হয়ে যায় পরিবারের সাথে যোগাযোগ। এসময় সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন তিনি। পরে শ্যালক মুমিন তাকে পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনেন। এরপরও আবদুল হক বিভিন্ন খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়েন। এতে দূরত্ব সৃষ্টি হয় পরিবারের সাথে। স্ত্রী রাবেয়াকে ভরণপোষণের অর্থ না দিয়ে উল্টো তাকে প্রতিনিয়ত তালাক দেওয়ার হুমকি দিতেন। এভাবেই চলতে থাকে বছরের পর বছর।

আবদুল হক স্বপনের শ্যালক আবদুল মুমিন দৈনিক ফেনীকে জানান, আব্দুল হককে আমি সৌদি আরব নিয়ে এসে কাজের ব্যবস্থা করে দেই। তারপর সে নানারকম অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে আমার বোনের সাথে যোগাযোগ ছিন্ন করে। এসবের প্রতিবাদ করতে যাওয়াতে তিনি আমাকে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেন।

আব্দুল হক স্বপনের স্ত্রী রাবেয়া আক্তার দৈনিক ফেনীকে জানান, আমার স্বামী বেশ কয়েকবছর আমাকে ভরণপোষণ না দিয়ে কথায় কথায় গালমন্দ করতো। মৌখিক তালাক দিতো, দেশে থাকাকালীন সময়ও সে নানান নারীদের সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিলো। প্রতিবাদ করলে আমাকে মারধর করতো। পরবর্তীতে এ নিয়ে গত বছরের মে মাসে আমি পরশুরাম থানায় ও মির্জানগর ইউনিয়নে দুটো অভিযোগ করেছি।

তবে প্রবাসী আব্দুল হক স্বপনের দাবি, দীর্ঘ সাত বছর প্রবাসে কাটিয়ে, আমার কষ্টার্জিত অর্থ পরিবারকে পাঠানোর পরও দেশে ফিরে নিজের ঘরে জায়গা হয়নি আমার। সৌদি আরবে শেষ এক বছরে অসুস্থতার কারণে কাজ করতে পারিনি। ফলে উপার্জনও বন্ধ হয়ে যায়। আর এখান থেকেই শুরু হয় সম্পর্কের অবনতি, আমি পরিবারের কাছে ফিরতে চাই।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার আল-আমিন নয়ন দৈনিক ফেনীকে জানান, প্রবাসীরা আমাদের দেশের অন্যতম সম্পদ। তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স এ আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে। আমরা চাই অসুস্থ আব্দুল হক স্বপন তার পরিবারের কাছে ফিরে যাক। সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে বেঁচে থাকুক, আমরা সকলের সহযোগিতা কামনা করি।