ফেনী শহরে যানজট ও জনদুর্ভোগ নিরসনে যৌথ অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও ফেনী পৌরসভা। দুই দফা অভিযানে ১৫টি মামলায় মোট ২২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অভিযানের পর ফের ফুটপাত অবৈধ দখলে দেখা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিকালে ফেনী জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে শহরের ট্রাঙ্ক রোডের প্রধান সড়কে দুই দফা পৃথক অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে জেলা প্রশাসন ও পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রতিনিধি, অনির্বাণ কমিটির প্রতিনিধিরা অংশ নেন। তবে শহরের ট্রাঙ্ক রোড, বড় মসজিদ রোড, শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে অভিযানে ম্যাজিস্ট্রেট এলে দেখা গেছে বদলে গেছে রাস্তার দৃশ্য, আর চলে যাওয়ার পর আগের দৃশ্য দেখা গেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর হোসাইনের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ফুটপাত দখল ও রাস্তায় অবৈধ পার্কিং করায় ৩ ব্যক্তির ১১ হাজার টাকা ও হাজী বিরিয়ানি হাউজকে ৩ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই দিন বিকালে ফের অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদ। এ অভিযানে সড়ক পরিবহন, ভোক্তা অধিকার এবং স্থানীয় সরকার ও পৌরসভা আইন অনুযায়ী ১৪টি মামলায় সাড়ে ১১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। দুই দফা পরিচালিত এ অভিযানে শহরের ট্রাঙ্ক রোডের প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে শহীদ মিনার এলাকা পর্যন্ত রাস্তায় পার্কিং করা মোটরসাইকেল থেকে হেলমেট জব্দ করা হয় ও ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, অভিযানে অবৈধ ফুটপাত দখল ও অবৈধ পার্কিং বন্ধে জরিমানা করা হলেও ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাবার পরপরই রাস্তা ফের দখল হয়ে গেছে। এ বিষয়ে জানতে জেলা ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) এস.এম শওকত হোসেন বলেন, শহরে যানজট নিরসনের লক্ষ্যে এ অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযানে জেলা ট্রাফিক পুলিশ সহযোগিতা করছে।
অভিযানে পরপর রাস্তা ফের দখল হওয়া প্রসঙ্গে ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মানুষ এটিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। অনেকে ৩০ বছর ধরে রাস্তায় ব্যবসা করছে, তাদেরকে সহজে বুঝানো যাবে না। আগামী রমজান মাস পর্যন্ত এ অভিযান চলবে। প্রথমদিন সতর্ক করা হয়েছে। ধাপে ধাপে জরিমানা বাড়বে, সাজাও দেওয়া হবে। এভাবে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ফিরিয়ে আনা হবে।
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন (নিসচা) ফেনীর সমন্বয়ক জিয়া উদ্দিন জানান, যৌথ অভিযানে বেশ কয়েকজনকে সতর্ক করা হয়েছে, জরিমানা করা হয়েছে। তবে দেখা গেছে তারা আবার বসছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া, যানজট নিরসনে জেলাপ্রশাসনের সাথে আমরা কাজ করে যাব।
এ বিষয়ে জানতে হকারের সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না এই প্রতিবেদককে তারা জানান, আমরা গরীব মানুষ। এটি করেই সংসার চালাই৷ ম্যাজিস্ট্রেট আসার খবরে দিঘির পাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম, ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পর আবার ফিরে এসেছি।
শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কের এক ফল বিক্রেতা জানান, ফুটপাত দখল করা ঠিক না। তবুও জীবিকার তাগিদে বসতে হয়।
একই বিষয়ে মোটরসাইকেল চালকরা বলেন, শহরের কোন মার্কেটেই পার্কিং ব্যবস্থা নেই। পৌরসভার পার্কিংয়ের জায়গা কম। পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া হলে কেউ রাস্তায় গাড়ি রাখবে না।
শহরের বাসিন্দারা বলছেন, গত ৫ আগস্টের পর জেলা শহরের ট্রাফিক কার্যক্রম অনেকটাই ভেঙে পড়ে। এ সুযোগে গ্রামাঞ্চলের অবৈধ রিকসা, ইজিবাইক নির্বিঘ্নে শহরের রাস্তায় চলাচল শুরু করে। এতে শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
এর আগে যানজট নিয়ে ‘ফেনী শহরে অর্ধেকে পার্কিং, অর্ধেকে চলাচল শিরোনামে’ সংবাদ প্রকাশ করেছিল দৈনিক ফেনী।