ফেনীতে আয়োজিত সর্বদলীয় মতবিনিময় সভায় দেশকে নিয়ে ভারতের ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে ঐক্যমত পোষণ করেছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এবি পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম, খেলাফত মজলিশসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। গতকাল সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ভাসানী স্মৃতি সংসদ ফেনীর আয়োজনে শহরের ট্রাংক রোডের আইনজীবী ভবনে সভায় একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সভায় বক্তারা বলেন, ভারতের আগ্রাসী মনোভাব ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থরক্ষায় এক কাউকে বিন্দুও ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা অতীতে যেমন স্বৈরাচার পরাজিত করেছি, তেমনই ভবিষ্যতেও দেশের স্বার্থে একসঙ্গে লড়াই করব।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ফেনীকে ভারতের সংবাদমাধ্যমে চিকেন নেক হিসেবে উল্লেখ করা এবং ফেনী দখলের পরিকল্পনার প্রতিবাদ জানাতে একমত পোষণ করছে ফেনীর সকল রাজনৈতিক দল। সকল দলের অংশগ্রহণে ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী সভার আয়োজন করেছে। সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এই উদ্বেগজনক বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে প্রধান উপদেষ্টার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে। এছাড়াও এর প্রতিবাদে সমাবেশের আয়োজন করা হবে।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুর রহিম বলেন, ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে হস্তক্ষেপ করছে৷ দেশের প্রতি তাদের যে আগ্রাসী মনোভাব এবং দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে সেগুলো বন্ধে আমরা দাবি জানিয়েছি।
তিনি বলেন, ফেনী বাংলাদেশের চিকেন নেক, তারা চট্টগ্রামকে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে আমরা প্রয়োজনে প্রশাসনের কাছে যাব। দরকার হলে সভা-সমাবেশও করা হবে। ভারতের উচিত তাদের রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলা, বিলোনিয়া সীমান্তে তাদের যে উগ্রতা সেগুলো বন্ধে আমরা সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যমতে পৌঁছেছি।
এ প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ফেনী জেলার সেক্রেটারি মুহাম্মদ একরামুল হক ভূঁঞা বলেন, ভারতের আগ্রাসনের প্রতিবাদে ভারতীয় পণ্য বর্জন করতে চাই। একইসাথে দেশের উৎপাদন বাড়িয়ে সক্ষমতা বাড়াতে চাই। পরবর্তী করণীয় হিসেবে মঙ্গলবার (আজ) জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী কর্মসূচি শীঘ্র চূড়ান্ত করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ওমর ফারুক বলেন, ১৯৪৭ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পরপরই পুরো ডিসেম্বর জুড়ে ভারত এদেশে লুটতরাজ চালিয়েছে। শহীদুল্লাহ্ কায়সার থেকে জহির রায়হান হত্যার পিছনে ভারতীয় চক্রান্ত, ভাসানী থেকে জিয়া ভারতীয় রাজনৈতিক আগ্রাসনের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, ভারতীয় রাজনৈতিক আগ্রাসনের ফলে এদেশের সর্বস্তরের মানুষ ১৫ বছর ভোটাধিকার হারিয়েছি। এখন ২৪শে এসেও তাদের চক্রান্ত থেকে আমরা মুক্ত হতে পারিনি। আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে যেভাবে স্বৈরাচারকে বিদায় করেছি, এখনো আমরা দলমত নির্বিশেষে দেশের সকল ষড়যন্ত্র রুখে দিবো ইনশাআল্লাহ।
সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক মোহাইমিন তাজিম ও আবদুল আজিজ উপস্থিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
ভাসানী স্মৃতি সংসদ ফেনীর সভাপতি এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন নান্নু সভাপত্বিতে ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী মোর্শেদের সঞ্চালনা করেন।