সরকারি রাজস্ব আয়ের অন্যতম খাত হিসেবে পরিচিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট)। প্রতি অর্থবছরে এ খাতকে অন্যতম উৎস ধরে নিয়ে বার্ষিক আর্থিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন সরকার। তবে ফেনীতে প্রতিবছর ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়লেও তা পূরণ হয় না। এর পেছনে ভ্যাট প্রদানে ব্যবসায়ীদের অনাগ্রহকে উল্লেখ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা।

ভ্যাটদাতার দাবি, ভ্যাটদাতার সংখ্যা না বাড়িয়ে তাদের ওপর চাপ বাড়ে। জেলাজুড়ে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে, জেলায় মোট ২৭ হাজার ৫৪৮ জন ট্রেড লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী রয়েছেন। এদের মধ্যে ফেনী পৌরসভায় ১৫ হাজার, পরশুরামে ২ হাজার ৪, দাগনভূঞায় ৪ হাজার ৩১৭, সোনাগাজী ৩ হাজার ১২৬, ছাগলনাইয়ায় ৩ হাজার ১০১জন ট্রেড লাইসেন্সধারী ব্যবসায়ী রয়েছেন।

জেলা কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে ফেনীতে ২ হাজার ২৪৩ জন ভ্যাটদাতা রয়েছেন। চলতি অর্থবছরে জেলায় ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২৬৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। তার মধ্যে এখন পর্যন্ত ৫৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ২৫ শতাংশের বেশি।

একই সূত্র জানায়, জেলায় এবার নতুন নিবন্ধন করেছে ১১৬ জন ভ্যাটদাতা। এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে জেলায় ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা। যেখানে আদায় হয়েছিল ২২২ কোটি ৯৪ লাখ ৮ হাজার। ওই বছর ১০১ জন নতুন ভ্যাটদাতা নিবন্ধন করেছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ভ্যাট আদায়ে এসে সরকারি খরচের কথা বলে কর্মকর্তারা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে। আবার নানাভাবে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করে।

কামরুল ইসলাম নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ভ্যাটের বিষয়টি সবপর্যায়ে এখনো তেমন জানাশোনা নেই। তবে প্রতিবছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ব্যবসায়ীদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি ছাড়া আর কিছুই না। পরিবর্তিত বাংলাদেশে সরকারকে এ খাতে নজর ও ব্যবসায়ীবান্ধব সিদ্ধান্ত দেওয়ার দাবি করছি।

ভ্যাটের লক্ষ্যমাত্রা বাড়লেও অর্জন না হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাস্টমস্ এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. রিদুয়ান সরদার বলেন, আমাদের সমাজে এখনো সেইভাবে ভ্যাট দেওয়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি। এজন্য সচেতনতা সৃষ্টিতে আমরা কাজ করছি। দিবসকে উপলক্ষ্য করেও বিভিন্ন প্রচারাভিযান করা হচ্ছে।

ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছর এখানে ভ্যাট আদায় করতে গিয়ে কর্মকর্তাদের ওপর একটি হামলার ঘটনা ঘটে। তারপর থেকে কর্মকর্তাদের মধ্যে ভীতি কাজ করছে। এছাড়া আমাদের প্রয়োজনীয় জনবল সংকট রয়েছে। মূলত এসব কারণে ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে অভিযান কমে গেছে। বর্তমানে বিভিন্ন পর্যায়ে ভ্যাট সংক্রান্ত ১৩টি মামলার বিচার প্রক্রিয়া চলছে।

অভিযানে গিয়ে সরকারি ফি’র কথা বলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, এই ধরনের অর্থ আদায়ের কোনো নিয়ম নেই। ভ্যাট আদায়ে সরকারি ট্রেজারি চালান ব্যতীত অন্য কোন খাতে অর্থ নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে বাইরের কিছু প্রতারক চক্র ভ্যাট অফিসের কর্মকর্তা পরিচয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মুঠোফোনে মাঝেমধ্যে এ ধরনের প্রতারণামূলক কাজ করে থাকে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়াও আমাদের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিবছরের মতো আজ মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) ভ্যাট দিবস পালন করা হবে। আর ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর পালিত হবে ভ্যাট সপ্তাহ। এবারের ভ্যাট দিবসের প্রতিপাদ্য ‘ভ্যাট দিব জনে জনে, অংশ নিব উন্নয়নে’।