নশ্বর জীবনের মায়া কাটিয়ে অনন্তে পাড়ি জমালেন ফেনীর খ্যাতিমান প্রবীণ সাংবাদিক কবি এরশাদ মজুমদার। গতকাল সোমবার (৯ ডিসেম্বর) নামাযে জানাযা শেষে অন্তিম শয়ানে শায়িত করা হয়েছে ৮৪ বছর বয়সী এ কৃতি সাংবাদিককে। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। গতকাল সোমবার (৯ ডিসেম্বর) এক শোকবার্তায় তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতীয় প্রেস ক্লাব সদস্য প্রবীণ সাংবাদিক এরশাদ মজুমদার গত রোববার রাত ১১টার দিকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ডায়াবেটিস ও হার্টের সমস্যাসহ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন।
১৯৪০ সালের ৮ মার্চ ফেনীর উকিলপাড়ার মজুমদার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন এরশাদ মজুমদার। তিনি ফেনী কলেজ, জগন্নাথ কলেজ ও ঢাকা কলেজে লেখাপড়া করেন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ¯œাতক শেষ করে সাংবাদিকতা জগতে পা রাখেন তিনি। এরশাদ মজুমদার ১৯৬১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান অবজারভারের মাধ্যমে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন। ছোটবেলায় থেকেই কবিতার চর্চা শুরু করেন। ১৯৫১ সালে স্থানীয় কাগজে প্রথম তার কবিতা প্রকাশিত হয়। আশির দশকের শুরুতে নিজের সম্পাদনায় প্রকাশ করেন ‘রিপোর্টার’ পত্রিকা। ২০০০ সালে আমেরিকার আন্তর্জাতিক কবিতা পরিষদের ডিভাইন পয়েট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছেন তিনি। দি ভয়েস আউট অব ডার্কনেস-এ তার কবিতা প্রকাশিত হয়। তার ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ ‘দি লেটারস ফ্রম দি সোল’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই কাব্যগ্রন্থ ফরাসি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে।
এ দেশের অর্থনৈতিক সাংবাদিকতার অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন তিনি। এরশাদ মজুমদার দৈনিক সংবাদ, দৈনিক পূর্বদেশ, দৈনিক বাংলার বাণী, দৈনিক জনপদসহ বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করেছেন। ১৯৭৮ সালে সাপ্তাহিক রিপোর্টারের প্রধান সম্পাদক, দৈনিক ফসল ও দৈনিক রিপোর্টারের সম্পাদক ও পরে ডেইলি নিউজ এবং ডেইলি নিউ নেশন-এ ম্যানেজিং এডিটর হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৯৮ সালে সাংবাদিকতা পেশা থেকে অবসর নেন।
সাংবাদিকতা ও সম্পাদনার পাশাপাশি সফল অনুবাদক ও লেখক ছিলেন এরশাদ মজুমদার। রুমি ও মনসুর হাল্লাজের কবিতা অনুবাদ করেছেন। গল্প উপন্যাস কবিতা ছড়াসহ তার ১৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে রয়েছে মায়ের চিঠি, কবিতার বই, ছড়ার বই, উপন্যাস নায়িকা, অনুবাদ নিজেকে বিবস্ত্র করে, কালো কবিদের কবিতা, ডিমের খোসায় পথচলা, আত্মার শব্দাবলি, ঢাকার ৫শ’ বছর, ৪৮ নম্বর তোপখানা রোড, তুর্কি কবিতার অনুবাদ, উপন্যাস নর-নারী ও রমণী, কৃষ্ণকথা, স্মৃতিকথা পিতা পুত্রকে।
তার বিখ্যাত বই ‘বায়া দলিলের সন্ধানে’ বইটিতে লেখকের শ’দুয়েক কলাম সংযোজিত হয়েছে।
ফেনী ইউনিভার্সিটির শোক
ক্যাম্পাস প্রতিবেদক
প্রবীণ সাংবাদিক এরশাদ মজুমদারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে ফেনী ইউনিভার্সিটি। সোমবার (৯ ডিসেম্বর) এক শোকবার্তায় মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয় এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়।
শোকবার্তায় উল্লেখ করা হয়, ফেনী ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ের অন্যতম উদ্যোক্তা, বিশিষ্ট সাংবাদিক, কবি, অনুবাদক ও গবেষক এবং ফেনী ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সাবেক সদস্য নাজিয়া আক্তারের স্বামী এবং বোর্ড অব ট্রাস্টিজের বর্তমান সদস্য আসাদ জামিলের পিতা এরশাদ মজুমদার আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি শুধু একজন প্রথিতযশা সাংবাদিকই ছিলেন না, বরং মানবিকতা, সৃজনশীলতা ও সমাজসেবায় নিজেকে উজ্জ্বলভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে ফেনী ইউনিভার্সিটি তথা সমগ্র দেশ এক অমূল্য সম্পদ হারালো।