রাষ্ট্র সংস্কার করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে ফেনীতে প্রকাশ্যে প্রথমবার গণসমাবেশ করেছে আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি)। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) বিকালে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এ গণসমাবেশে বক্তারা বলেন, ভারতকে কঠিন জবাব দেওয়ার সময় এসেছে। সমাবেশে ফেনী নদীর পানি চুক্তি, ফেনী-মিরসরাই ইকোনমিক জোনে ভারতের একক আধিপত্য রোধ, ফেনী নদীর পানির ন্যায্য হিস্যাসহ ভারতের সাথে সকল অবৈধ চুক্তি বাতিলের আহবান জানিয়েছেন তারা।
সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু। বক্তব্যে তিনি বলেন, ভারতীয়দের সাথে কোন অবৈধ চুক্তি আমরা মেনে নেব না। এ দেশের টাকা লুটপাট করতে দেব না। বাংলাদেশের টাকা বিদেশে পাচার করতে দেওয়া হবে না। আর কোন ফেলানীর লাশ কাঁটাতারে ঝুলবে না। লড়াই করে জীবন দিয়ে হলেও আমরা দেশ রক্ষা করব।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দলের যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, সময় এসেছে ভারতকে কঠিন জবাব দেওয়ার। আপনাদের (ভারতের) লক্ষীদেবী (শেখ হাসিনা) পালিয়ে গেছে। তাকে নিয়ে আর স্বপ্ন দেখবেন না। অবিলম্বে ফেনী নদীর পানি নিয়ে যে গোপন চুক্তি হয়েছে তা প্রকাশ করুন। বন্যার পানি দিয়ে যারা আমাদের হত্যা করে তাদেরকে পানি দেওয়ার কোন এখতিয়ার রাষ্ট্রের নেই।
এবি পার্টির ফেনী জেলা শাখার আহবায়ক মাষ্টার আহছান উল্যাহ’র সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী শাহ আলম বাদল, ফেনী জেলার সদস্য সচিব অধ্যাপক ফজলুল হক, জনতার অধিকার পার্টির চেয়ারম্যান তারেকুল ইসলাম। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন এবি পার্টি ফেনী জেলা শাখার যুগ্ম আহবায়ক মোতাহের হোসেন বাহার, যুগ্ম সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম কামরুল,অর্থ সম্পাদক মাস্টার শাহ আলম শাহীন সোলতানী, অফিস সম্পাদক মীর ইকবাল ভূঞা, সমাজ সেবা সম্পাদক, এবি সিদ্দিক ভূঞা, নারী বিষয়ক সম্পাদিকা জাহানারা আক্তার মণি, ফেনী সদর উপজেলা আহবায়ক সাহাদাত হোসেন ভূঞা, পৌর আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ সেলিম, সোনাগাজী উপজেলা আহবায়ক অধ্যাপক রহমত উল্লাহ, সদস্য সচিব ওয়াসিউর রহমান খসরু, এবি যুব পার্টির জেলা আহবায়ক সফিউল্লাহ পারভেজ, সদস্য সচিব এস এম ইব্রাহীম সোহাগ, ফেনী পৌর শাখা সদস্য সচিব অধ্যাপক রিজওয়ানুল খায়ের, এবি যুব পার্টির নারী নেত্রী জোহরা আক্তার ডলি, এবি পার্টি ছাগলনাইয়া উপজেলা সমন্বয়ক নাফিজ ইমতিয়াজ, যুগ্ম সমন্বয়ক জহিরুল আলম মজুমদার, শরীফুল ইসলাম লিংকন, ফেনী সদর উপজেলা এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব হাফেজ কামরুল ইসলাম প্রমুখ।
‘ফেনীর দুর্নাম ঘোচাতে হবে’
-মজিবুর রহমান মঞ্জু
এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে ফেনীর যে দুর্নাম তৈরী হয়েছে তা ঘোচাতে হবে। ফেনী যেন আর কোন ব্যক্তি বা দলগত সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি না হয় তার জন্য সবাইকে এক যোগে কাজ করতে হবে। গতকাল ফেনীতে দলের গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মঞ্জু আরও বলেন, জাতির কাছে ফেনীর পরিচিতি পাওয়া উচিত ছিল শুভপুর ও বিলোনিয়া যুদ্ধের বীরত্বগাথায়। ফেনী যেন আর কোন ব্যক্তি বা দলগত সন্ত্রাসের কাছে জিম্মি হতে না পারে সেজন্য সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
সমাবেশে ভারতের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ভারত সরকার এতটাই খারাপ যে তারা ফেলানীকে হত্যা করে কাঁটাতারে ঝুলিয়ে রাখে। তারা পানি ছেড়ে দিয়ে বন্যায় ডুবিয়ে মারে। তারা বলছে এ দেশের মানুষ সেখানে হাসপাতালে সেবা নিতে পারবে না।
আগামীর নতুন সরকারকে উদ্দেশ্য মঞ্জু বলেন, ভারতীয়দের সাথে কোন অবৈধ চুক্তি আমরা মেনে নেব না। এ দেশের টাকা লুটপাট করতে দেব না। বাংলাদেশের টাকা বিদেশে পাচার করতে দেয়া হবে না। আর কোন ফেলানীর লাশ কাঁটাতারে ঝুলবে না। লড়াই করে আমরা জীবন দিয়ে দেশ রক্ষা করব। ফেনীতে অবিলম্বে সরকারি মেডিকেল কলেজ করতে হবে যারা শহীদ হয়েছে তাদের নামে। এসময় তিনি ফেনীতে ক্যান্টনমেন্ট স্থাপন করার দাবি জানান।
‘ফেনী নদীর পানিতে ভারতের অধিকার নেই’
-ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, মীরসরাই যাতে ফেনী থেকে আলাদা না হয় সেজন্য এবি পার্টি কাজ করছে। প্রয়োজনে ফেনীতে ক্যান্টনমেন্ট স্থাপনের জন্য আমরা কাজ করব সরকারের সাথে। ফেনীর স্বার্থ অনুযায়ী যেসব কাজ ভারতের আপত্তির জন্য থমকে ছিল সেগুলো চালু করার জন্য আমরা সরকারকে বলেছি। তরুণদের উদ্যোক্তা ও কর্মক্ষম করে তুলতে সরকারকে কাজ করতে হবে। ভারতের সাথে সব ধরনের অবৈধ চুক্তি বাতিল করতে হবে।
ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, সময় এসেছে ভারতকে কঠিন জবাব দেওয়ার। ভারতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনাদের দেবী লক্ষন পালিয়ে গেছে। তাকে নিয়ে আর স্বপ্ন দেখবেন না। অবিলম্বে ফেনী নদীর পানি নিয়ে যে গোপন চুক্তি হয়েছে তা প্রকাশ করুন। যারা আমাদের বন্যার পানি দিয়ে হত্যা করে তাদেরকে নদীর পানি দেওয়ার কোন এখতিয়ার রাষ্ট্রের নেই। ফেনী নদীর হিস্যা কেবলমাত্র ফেনীবাসীর। ফেনী-মিরসরাইয়ে যে ইকোনমিক জোন হয়েছে তা পুরোটাই ভারতকে দিয়েছে৷ কেউ ব্যবসা করতে চাইলে আমাদের আপত্তি নেই। ফেনী বাংলাদেশের চিকেন নেক, কৌশলগতভাবে চট্টগ্রামের ওই অংশ ভারতকে দিয়েছে। আমরা সেটির প্রতিবাদ জানিয়েছি, যাতে এককভাবে ভারতকে না দিয়ে সব দেশকে ব্যবসা করার সুযোগ যাতে দেওয়া হয়।
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা যেদিন বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করবেন তখন আবু সাইদ, মুগ্ধরা আবার ফিরে আসবে। যদি মনে করেন আবার আওয়ামী লীগের স্থান এদেশে হবে আপনারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছেন। কারণ এদেশে আওয়ামী লীগের কবর রচনা হয়ে গেছে। আজকে আওয়ামী লীগ ইসকনের নামে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করছে। ফেনীর বিলোনিয়া সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে।
সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়
‘এই সরকার আগে স্থানীয় নির্বাচন করতে পারে’
আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেছেন, সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক থেকে দেড় বছর লাগতে পারে। তবে এই সরকার আগে স্থানীয় নির্বাচন করবে বলে শোনা যাচ্ছে। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ফেনী শহরের একটি রেস্টুরেন্টে ফেনীতে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মঞ্জু বলেন, এবি পার্টি সরকারে যাবে না। গণঅভ্যুত্থানে ছাত্ররা সর্বাধিক ভূমিকা রেখেছে। তারা রাজনৈতিক দল গঠনের দিকে যাচ্ছে। আমরা তাদের সাথে জোট করতে পারি। তবে এবি পার্টি নতুন দল, ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া যাবে কিনা এখনো নিশ্চিত নই। এ মুহূর্তে ১৮০ আসনে প্রার্থী দেওয়া যাবে। আমাদের ইচ্ছে প্রথমবার বিরোধী দলে থাকা।
তিনি বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা চলছে। জামায়াতের ব্যাপারেও মানুষ কথা বলছে। মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার করে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বীকৃতি সম্পর্কে এবি পার্টি ব্যখ্যা চাইছে। কিন্ত সেটি সমস্যা সমাধান না করে আমাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। জামায়াতকে তার রাজনীতির বিশ্লেষণ করতে হবে। তাদের সুদিন আগেও ছিল। সময় অনুযায়ী রাজনীতিকে সংস্কার করতে হয়। শেখ হাসিনাও নিজের ভুল স্বীকার করেনি।
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে জামায়াতের অবস্থান প্রসঙ্গে মঞ্জু বলেন, ১৯৭১ সালে জামায়াতসহ যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিলেন তারা মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের শত্রু ও ভারতের দালাল বলতেন। এখন উনারা তাদের বলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান। ওনারা এখন মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা, জাতীয় পতাকা হাতে মিছিল ও স্বাধীনতা-বিজয় দিবস পালন করেন। এসব করে আপনি নিজেই তো উল্টে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তাদের (জামায়াতের) অবস্থান স্পষ্ট করা উচিত।
মঞ্জু বলেন, অবস্থান স্পষ্ট করে ভুল স্বীকার করে একটি ব্যাখ্যা দিতে হবে। অতীতে তাদের খারাপ বলেছি, স্বাধীন বাংলাদেশের বিরোধিতা করে ভুল করেছি-এটিতো বলতে হবে। মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান যেহেতু বলছেন এখন সেটি স্বীকার করতে হবে। এবারের জুলাই আগস্ট আন্দোলনে জামায়াত-শিবিরের লোকেরা অনেক ভূমিকা রেখেছে। তারা এখন স্বাধীনতা সংগ্রামী।
এবি পার্টির সদস্য সচিব বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া ভুল হয়েছে এমনটি পোষণ করলে এ দেশে কারো রাজনীতি করার অধিকার নেই। এখানে জিয়াউর রহমান, মতিউর রহমান নিজামীসহ অনেকে মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু তারা তো ভারতে যায়নি। ভারতের আধিপত্যের দিন আর নাই। ইতোমধ্যেই এটি ভুল প্রমাণিত হয়েছে।
দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা এতদিন কথা বলতে পারেনি তারা এখন স্বাধীনভাবে কথা বলতেছে। ৭০ থেকে ৮০ ভাগ লোক মানসিক চাপে নেই, যা অতীতে ছিল না। যারা রাজনৈতিকভাবে ভয় ভীতিতে ছিলেন তাদের সময়ের পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু যারা সাধারণ মানুষ তাদের জন্য পরিবর্তন হয়নি। কারা তারা পরিবর্তন বলতে বুঝে দ্রব্যমূল্যর দাম কমানো ও দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকা।
মিট দ্য প্রেসে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য প্রকৌশলী শাহ আলম বাদল, ফেনী জেলা আহ্বায়ক মাস্টার আহসান উল্লাহসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।