ফেনী শহরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলি ব্যানার-ফেস্টুন, পোস্টার এবং প্ল্যাকার্ডে ঢাকা পড়েছে, যেন বিজ্ঞাপনের শহরে পরিণত হয়েছে। রাস্তার বৈদ্যুতিক খুঁটি, ল্যাম্পপোস্ট, সড়ক ডিভাইডারের গাছ থেকে শুরু করে শহরের প্রতিটি স্থানে দেখা মিলছে প্রাতিষ্ঠানিক, রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক এবং ধর্মীয় আয়োজনের প্রচারণামূলক বিজ্ঞাপন। এতে যেমন শহরের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।
রোববার (২৪ নভেম্বর) শহরের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মহিপাল মোড় থেকে ট্রাংক রোড পর্যন্ত এবং মিজান রোড, কলেজ রোড, নাজির রোডসহ শহরের প্রধান সড়কগুলোর বেশিরভাগ অংশেই ব্যানার-ফেস্টুনের দখলে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম-সম্মলিত কাঠ ও বাঁশের কাঠামোতে লাগানো এইসব ব্যানার-ফেস্টুন শহরবাসীর জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলছেন শহরের বাসিন্দারা। শহরের সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি এইসব স্থাপনাগুলো সড়কে দৃষ্টিনন্দন ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে, যা দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে বলে অভিযোগ করছেন তারা।
শহরের বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনের যথাযথ নজরদারির অভাবে ব্যানার-ফেস্টুন লাগানোর প্রবণতা দিন দিন বাড়ছে। তারা বলছেন, প্রশাসন যদি যথাযথভাবে তদারকি করে তাহলে এই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
আব্দুল আজিজ নামের নাজির রোড এলাকার বাসিন্দা বলেন, শহরে আগের তুলনায় ব্যানার-পোস্টার বেশি ছেয়ে গেছে। বিশেষ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি হাসপাতালের বিজ্ঞাপন ও রাজনৈতিক ব্যানার বেশি চোখে পড়ছে। অতি মাত্রায় ব্যানার-পোস্টার লাগানোর কারণে শহরের সৌন্দর্য কমছে। প্রচার-প্রচরণার কারণে শহরের সৌন্দর্য যে কমছে সেদিকে আমাদের কারো খেয়ালই নেই বলে জানান তিনি।
শহরের মাস্টারপাড়া এলাকার বাসিন্দা নূরু মিয়া বলেন, ডিভাইডারে ব্যানার লাগানোর ফলে রাস্তার দৃশ্যমানতা কমে যাচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। ব্যানারের অতিরিক্ত চাপ আমাদের শহরকে অগোছালো ও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে।
শফিকুল ইসলাম নামের এক পথচারী দৈনিক ফেনীকে বলেন, রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় ব্যানার-পোস্টারের দিকে দৃষ্টি চলে যায়, ফলে হাঁটার সময় প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। শহরের যেভাবে ব্যানার-পোস্টারের ছড়াছড়ি বাড়ছে, তা অবশ্যই কমানো উচিত। এতে শুধু সৌন্দর্যহানি হচ্ছে না, মানুষের জীবনও ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
সমাজকর্মী নুর করিম মুন্না দৈনিক ফেনীকে বলেন, রাস্তায় ঝুলিয়ে রাখা ব্যানারগুলো সাধারণত ক্ষতিকর প্লাস্টিক দ্রব্য বা পিভিসি দিয়ে তৈরি, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এছাড়া এসব ব্যানার রাস্তার সৌন্দর্য নষ্ট করার প্রধান কারণ। এজন্য আমাদের উচিত ব্যানার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতনতা তৈরি করা। ব্যবহারের পর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি এগুলো অপসারণ করে, তাহলে এগুলো রাস্তায় পড়ে থাকবে না এবং রাস্তার সৌন্দর্যও অক্ষুণœ থাকবে। ব্যানারগুলো দ্রুত অপসারণের জন্য পৌরসভাকে উদ্যোগ নিতে হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর ফেনীর উপ-পরিচালক শওকত আরা কলি বলেন, সরকারি দপ্তরগুলোকে ইতোমধ্যে প্লাস্টিকের ব্যানার ব্যবহার বন্ধে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে এখনো এ বিষয়ে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। তিনি আরও বলেন, আমরা পলিথিন বন্ধে কাজ করছি এবং পর্যায়ক্রমে এ ধরনের পরিবেশ দূষণকারী উপকরণ বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে ফেনী পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মোঃ আবজর গিফরী বলেন, বর্তমানে পৌরসভার দায়িত্বে একজন প্রশাসক রয়েছেন। অতিমাত্রায় ব্যানার-ফেস্টুনের বিষয়টি জেলা প্রশাসকের নজরে আনা হয়েছে। নির্দেশনা পেলে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।