ফেনীতে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছে নবাগত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম। সভায় রাজনন্দিনী দীঘির পাড়ের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত পুনর্বাসন, জমির টপসয়েল কাটা নিষিদ্ধকরণ, কিশোর গ্যাংয়ের লাগাম টানা, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন জটিলতা নিরসনে স্থানীয় সরকার বিভাগের কাজের পরিধি বৃদ্ধি করাসহ জনসম্পৃক্ত কাজের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে সম্মিলিতভাবে ফেনীর উন্নয়নে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন জেলা প্রশাসক। গতকাল সোমবার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে নিজ সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় এসব পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তিনি।

সাইফুল ইসলাম বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের আমরা এখনো সম্পূর্ণ পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে পারিনি। তবে আংশিক পুনর্বাসনের আওতায় বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত ১ হাজার ৭১৮টি পরিবারের তালিকা আমাদের কাছে এসেছে। ইতোমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে একটি বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক পর্যায়ে জেলায় ১১০টি কার্যক্রম বাস্তবায়িত হবে।
জেলা প্রশাসক বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক উপজেলা পর্যায়ে পুনর্বাসনের সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনা করে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়ন হওয়া চিত্রের একটি তালিকা করবেন। যারা বাদ পড়বে পর্যায়ক্রমে তাদেরও পুনর্বাসন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

ফেনীর বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, রাজাঝির দিঘীর পাড়ে অবৈধ দখলের বিষয়ে একটি অভিযোগ রয়েছে। অবৈধ দখল উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসন উদ্যোগ নেবে। এছাড়াও ফুটপাত দখলমুক্ত ও শহরের যানজট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়ে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ফেনীর সমস্যাগুলো নিরসনে সম্মিলিতভাবে কাজ করাই আমার লক্ষ্য। এ জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা আমাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করলে কাজ করা সহজ হবে। জেলা প্রশাসকের পদকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এমন সব কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে ও এ পদের মর্যাদা রক্ষা করাই হবে আমার অন্যতম উদ্দেশ্য।
স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জন্মনিবন্ধনসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার কথা উল্লেখ করে জেলা প্রশাসক বলেন, এ কাজে বিঘ্ন ঘটছে, কারণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অন্য বিভাগে কর্মরত। অনেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। এ পরিস্থিতি নিরসনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্মনিবন্ধন সংক্রান্ত যেকোনো জটিলতা দ্রুত ও জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করার নির্দেশনা দেন তিনি।
শীতের মৌসুমে জমির টপসয়েল না কাটার ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সাইফুল ইসলাম বলেন, শীত মৌসুমে একটি মহল অবৈধভাবে জমির টপসয়েল কাটতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এসব বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট থানাকে সজাগ থাকতে হবে।

অন্যান্য আলোচনায় জেলা প্রশাসক অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ, মাদক নির্মুল, রাস্তাঘাটের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে কার্যকরী উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনা, মুছাপুর রেগুলেটর পুনর্র্নিমাণ, বাজার মনিটরিং, ইউনিয়ন পরিষদের সকল নাগরিক সেবা দ্রুত সম্পন্ন করা, জেলা ক্রীড়া সংস্থা অফিস থেকে লুট হওয়া মালামাল উদ্ধার ও জেলা হেড কোয়ার্টারের সামনে থেকে মাছের আড়ত অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেন।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রায়হান মেহবুবের সভাপতিত্বে এসময় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইসমাঈলসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।