ছাগলনাইয়ার ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওঃ রুহুল আমিন ও মোতাওয়াল্লী হাফিজ মাওঃ সাঈদুল হক কফিলের মধ্যে চলমান বিরোধের জেরে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। মুহতামিম মাওঃ রুহুল আমিন মাদ্রাসা পরিচালনায় বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগে শীর্ষ নেতৃবৃন্দের ছত্রছায় একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অভিযোগ ওঠেছে। অন্যদিকে, মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুণ্ণ করতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হস্তক্ষেপে মুহতামিমের বিরুদ্ধাচরণ করার অভিযোগ ওঠেছে মোতাওয়াল্লী হাফেজ মাওঃ সাঈদুল হক কফিলের বিরুদ্ধে। মুহতামিম ও মোতাওয়াল্লীর দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে গতকাল রবিবার (১৭ নভেম্বর) দুইটি পক্ষ মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী পালন করেছে।
মুহতামিম মাওঃ রুহুল আমিন বিগত ১৬ বছর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দে ছত্রছায়ায় থেকে মাদ্রাসার যাবতীয় সিদ্ধান্ত এককভাবে পরিচালনা করেছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাঁশপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সাহাব উদ্দিন। তার অভিযোগ, মুহতামিমের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের ফলে আমরা ঈদের নামাজ মাদ্রাসা ময়দানে আদায় না করে রাস্তায় আদায় করতে বাধ্য হই। এছাড়াও মাদ্রাসার জমা খরচের হিসাব তিনি কাউকে দিতেন না। মাদ্রাসার যাবতীয় সিদ্ধান্ত নির্দলীয়ভাবে পরিচালনার দাবি জানান সাহাব উদ্দিন। এসময় স্থানীয় মুসল্লীগন উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, মুহতামিম মাওঃ রুহুল আমিন আজিজিয়া মাদ্রাসার মোতাওয়াল্লী হাফেজ মাওঃ সাঈদুল হক কফিলের অপসারণে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়েরের অভিযোগ, বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়েরসহ মাদ্রাসা পরিচালনায় মোতাওয়াল্লীর সাথে পরামর্শ না করার অভিযোগ করেন হাফেজ মাওঃ সাঈদুল হক কফিল। তিনি বলেন, আমি আইনগতভাবে ছাগলনাইয়া আজিজিয়া মাদ্রাসার মোতাওয়াল্লী হওয়ার পর মুহতামিম মাওঃ রুহুল আমিন আমার বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। আদালত আমার পক্ষে রায় প্রদান করলে তিনি আমার দাদা আজিজিয়া মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওঃ আবু মুসা (র.) এর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করে ২০১৬ সালে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ তিনি উল্লেখ্য করেন, আমার দাদা ও জেঠা মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন বাঙালি নারীদের নির্যাতন করা শরীয়তে জায়েজ আছে বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন। অথচ এমন ফতোয়া প্রদানের কোন দলীল তিনি দেখাতে পারেননি। মাদ্রাসা পরিচালনায় মুহতামিম একক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আসছেন মন্তব্য করে হাফেজ মাওঃ সাঈদুল হক কফিল বলেন, আমি মাদ্রাসার মোতাওয়াল্লী হওয়া সত্ত্বেও তিনি আমার সাথে কোন পরামর্শ না করে বিগত আওয়ামী সরকারের টানা ক্ষমতাকালীন সময় সরকার দলীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পরামর্শে মাদ্রাসা পরিচালনা করেন যা নীতি বর্হিভূত। আগামী ২৩ নভেম্বর মাদ্রাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলের দিন ধার্য করা হলেও বিষয়টি মোতাওয়াল্লীকে জানানো হয়নি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
স্থানীয় সাহাব উদ্দিন ও মোতাওয়াল্লী হাফেজ মাওঃ সাঈদুল হক কফিলের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে মুহতামিম মাওঃ রুহুল আমিন দৈনিক ফেনীকে জানান, মাদ্রাসা পরিচালনায় সকল সিদ্ধান্তগ্রহণের আগে মোতাওয়াল্লীর সাথে আমি পরামর্শ করেছি যার প্রমাণ রেজুলেশনে তার স্বাক্ষর রয়েছে। তিনি আরো বলেন, মোতাওয়াল্লী হাফেজ কফিল মাদ্রাসার শুরা, এলমি ও আমেলার সদস্য হওয়া সত্ত্বেও কোন সিদ্ধান্তগ্রহণের পূর্বে তাকে ডাকা হলে তিনি ইচ্ছা হলে আসেন ইচ্ছা না হলে আসেন না।
অন্যদিকে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বহিরাগতদের হস্তক্ষেপ, শিক্ষক লাঞ্ছনার প্রতিবাদ ও মোতাওয়াল্লীর পদত্যাগের দাবিতে ছাগলনাইয়া আজিজিয়া মাদ্রাসার ছাত্রদের পক্ষ থেকে বিক্ষোভ ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। গতকাল রবিবার বিকালে মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মাদ্রাসার চাহরুম বিভাগের ছাত্র আবদুল মাজেদ ও দাওরায়ে হাদীস বিভাগের ছাত্র মোঃ নাহেদুল ইসলাম বলেন, ছাগলনাইয়া পৌরসভার বাঁশপাড়া গ্রামের হাজী নুর আহমদ মজুমদারের ছেলে টিটু মজুমদারের নেতৃত্বে ১৫/২০ জন গত ১৬ নভেম্বর মাগরিবের নামাজের পর জামেয়া ইসলামিয়া আজিজিয়া মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে এসে গালাগাল ও মাদরাসা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করে এবং আগামী ২৩ নভেম্বর ২০২৪ পূর্ব নির্ধারিত বার্ষিক মাহফিল করতে পারবে না বলেও হুমকি দেয়। তারা প্রথমে মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা রুহুল আমিনকে খোঁজাখুঁজি করে এবং এক পর্যায়ে তাঁকে না পেয়ে পরিচালকের কার্যালয়ের সামনে এসে অন্যান্য শিক্ষক ছাত্রদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও মাদ্রাসার মাহফিল হতে দেবে না বলে হুমকি প্রদান করে। এক পর্যায়ে জনৈক শাহাবুদ্দিন নামক ব্যক্তি পরিচালকের নম্বরে ফোন দিয়েও গালাগাল করে এবং মুহতামিম যেন মাদরাসা ছেড়ে চলে যায় এমন মন্তব্য করে।
প্রতিষ্ঠানের ভিতরে কোনো দালাল থেকে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও মন্তব্য করেন ছাত্ররা। এসময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, মাদ্রাসায় সন্ত্রাসী ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, ভবিষ্যতে কোনো বহিরাগত মাদরাসায় হস্তক্ষেপ করতে পারবেনা, মাদরাসা নিজস্ব গতিতে পূর্ব নীতিমালা অনুযায়ী মজলিসে শূরা কর্তৃক পরিচালিত হবে, বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ইন্ধন দাতা মোতাওয়াল্লি মাওঃ সাইদুল হক কফিল ও মাওঃ আব্দুল হালিম ও তাদের সহযোগীদের অবিলম্বে বহিষ্কার করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় নুর আহাম্মদ মজুমদারের ছেলে টিটু মজুমদার দৈনিক ফেনীকে জানান, ছাগলনাইয়া আজিজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার জন্য আমার দাদা মরহুম হাজী বদিউজ্জামান মজুমদার জমি দান করেছিলেন। আমাদের পরিবারের সদস্যরা ছাগলনাইয়া আজিজিয়া মাদ্রাসায় শুধুমাত্র বছরে দুই ঈদের চার রাকআত নামাজ আদায় করতে যাই। আজিজিয়া মাদ্রাসার উন্নয়ন কার্মকান্ড পরিচালনার জন্য আর্থিক অনুদানের প্রয়োজন হলে মাদ্রাসার শিক্ষকদের অনুরোধে আমরা ব্যক্তিগত তহবিল কিংবা শুভাকাক্সক্ষীদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করে মাদ্রাসা তহবিলে প্রদান করে আসছি। টিটু মজুমদার বলেন, ১৬ নভেম্বর আমাকে মুসল্লী সাহাবউদ্দিন ফোন করে মোতাওয়াল্লী হাফেজ মাওঃ সাঈদুল হক কফিলের কক্ষে আসতে বললে আমি সেখানে যাই। সাহাব উদ্দিন মাওঃ কফিলের রুম থেকে মুহতামিম মাওঃ রুহুল আমিন হুজুরকে ফোন দিলে হুজুর যোহরের নামাজের সময় আসবেন বললে আমরা মাদ্রাসা থেকে চলে আসি। তিনি জানান, আমি মাদ্রাসায় গিয়ে কারো সাথে কোন কথা বলিনি। এছাড়া আমি মাওঃ কফিল ছাড়া তেমন কাউকে চিনি না। তবে রুহুল আমিন হুজুরের পদত্যাগ ও বিচার দাবি করি কারণ হুজুর এই মাদ্রাসাকে রাজনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত করেছেন। সর্বশেষ বিনা ভোটের প্রচারণাও এই মাদ্রাসার মাঠে হয়েছিলো যা সবাই অবগত আছে।