অনৈতিক প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় হত্যার দুই বছরেও শুরু হয়নি ফুলগাজীর মাদরাসা শিক্ষার্থী জেমি আক্তার লিজার (৯) হত্যা মামলার বিচার কাজ। আদালত সূত্রে জানা গেছে, গত ২০২৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সিরাজ উদ্দিনের আদালতে এ মামলার চার্জশীট গ্রহণ করা হয়েছে। চার্জশীটে এ মামলার একমাত্র আসামী মোঃ সাইফুল ইসলাম প্রকাশ লিটন চন্দ্র দাসকে (৪৩) অভিযুক্ত করে গত বছরের ৩১ মে এ মামলার চার্জশীট প্রদান করেন মামলা তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলগাজী থানার তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ আসাদুজ্জামান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, ২০২২ সালের ১২ জুন এ হত্যা মামলার আসামি সাইফুল ইসলামকে (৪২) তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে রংপুর থেকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ড আবেদন করলে তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সিনিয়র জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাতেমাতুজ জোহরা মুনা। সাইফুল ইসলাম নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ থানার বাসিন্দা। সে ফুলগাজীতে ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা হিসেবে কাজ করে। লিজা হত্যার ঘটনায় তার জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালা হিসেবে সাইফুল ফুলগাজীতে কাজ করত।

তিনি আরও জানান, সাইফুল ইসলাম প্রকাশ লিটন চন্দ্র দাস একজন দুশ্চরিত্র প্রকৃতির লোক। লিজাকে দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে প্রলুব্ধ করে আসছিল সে। এ কারণে মামলার বাদী লিজার বাবা মমিনুল ইসলামের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়েছিল। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে লিজাকে হত্যা করে আমজাদহাট বাজারের ইউনিয়নের ভূমি অফিসের পূর্ব পার্শ্বে বাংলা পুকুরে কুচুরীপানার নিচে লুকিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। গত বছরের ১০ এপ্রিল এ মামলায় জামিনে মুক্ত হয় সাইফুল ইসলাম।

গত ২০২২ সালে ২ জুন সকালে নিখোঁজের এক সাপ্তাহ পর গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তেলিয়াপাড়ার মমিনুল ইসলামের মেয়ে মাদরাসা শিক্ষার্থী জেমি আক্তার লিজার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। এ ঘটনায় ওই বছরের ১০ জুন লিজার পিতা মমিনুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে ফুলগাজী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।

লিজার মা জেসমিন আক্তার জানান, ২০২২ সালে ২ জুন আমজাদহাট বাজারে জেঠার বাসায় যাওয়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয় লিজা। এরপর থেকে অনেক খোঁজাখুজি করেও না পেয়ে ৪ জুন শনিবার সন্ধ্যায় ফুলগাজী থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। পরিবারসহ আমজাদ হাট ইউনিয়নের দক্ষিণ তারাকুছা গ্রামে বসবাস করত লিজা। সে স্থানীয় নেয়াজ ফয়জুন্নেসা ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।

আড়াই বছরেও বিচার কাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মামলার বাদী লিজার বাবা মমিনুল ইসলাম জানান, বর্তমানে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।

এ প্রসঙ্গে জজ আদালতের সরকারি কৌসুলি (পিপি) এডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ জানান, জেলা ও দায়রা জজ বদলি হওয়ায় এ মামলার বিচার কাজ পিছিয়েছে। সদ্য নতুন জেলা ও দায়রা জজ যোগ দিয়েছেন। শীঘ্রই পুরাতন মামলাগুলোর চার্জ গঠন করে বিচার কাজ শুরু করা হবে।

উল্লেখ্য, সাইফুল ইসলাম প্রকাশ লিটন চন্দ্র দাস ১৫ বছর পূর্বে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে নিজ বাড়ী ছেড়ে স্ত্রী সন্তান নিয়ে প্রায় ৮-৯ বছর ধরে ছাগলনাইয়া উপজেলার পশ্চিম দেবপুর জনৈক বশরের বাড়ীতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বাস করত সে।