বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফেনীর মহিপালে হতাহতের ১৬ মামলায় ১৫২ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তাদের মধ্যে ৪৭ জন এজাহারভূক্ত এবং সন্দেহজনক ১০৫ জনকে আটকের পর এসব মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) এ তথ্য নিশ্চিত করে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মর্ম সিংহ ত্রিপুরা জানান, ফেনীতে গুলিতে ছাত্র-জনতা হত্যার ঘটনায় ৮টি মামলা এবং হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আরও ৮টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৫২ জন আসামিকে জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের ৪৭ জন আসামি এজাহারভুক্ত এবং বাকি ১০৫ জন আসামিকে পুলিশের তদন্তে ও সন্দেহজনক হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ওসি আরও জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে অনেককে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে ৫ জন দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন। এতে মামলা তদন্ত কার্যক্রম অনেকদূর এগিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, টমটম চালক জাফর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তারকৃত সাবেক সংসদ সদস্য হাজী রহিম উল্লাহসহ এমপি নিজাম হাজারীর পিএস হিসেবে পরিচিত ফরিদ মানিক, ফেনী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি লিটন এবং ফেনী সদরের ছনুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল হক রিফাতকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া সরোয়ার জাহান মাসুদ ও ওয়াকিল আহমেদ শিহাব হত্যা মামলায় ফরিদ মানিক ওরফে পিএস মানিককে দুই দফা রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এছাড়া মাসুদ হত্যা মামলায় মাতুভূঞা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন মেজুকে ৫ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ হত্যা মামলায় ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সম্রাটকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া ওয়াকিল আহমেদ শিহাব হত্যা মামলায় মেজবাহ উদ্দিন মেজুকে ৫ দিনের ও এনামুল হককে ২ দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
থানা সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিতে শিক্ষার্থী সরোয়ার জাহান মাসুদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রলীগ নেতা আবদুর রহিম হৃদয় দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। আরেকটি হত্যা মামলায় ফেনী সদর উপজেলার শর্শদি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সম্রাটও দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দী দিয়েছেন। শিক্ষার্থী মাহবুবুল হাসান মাসুম হত্যা মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন মুরাদ হাসান বাবু।
ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আনোয়ার হোসেন জানান, এ মামলায় ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত হচ্ছেন ৮জন ও বাকী ২২জন সন্দেহজনক।
জাহান মাসুদ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল হোসেন জানান, এ মামলায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে এজাহারভুক্ত হচ্ছেন ৩জন ও বাকী ২জন সন্দেহজনক। তাদের মধ্যে দুইজন দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন।
শিক্ষার্থী মাহবুবুল হাসান মাসুম হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন জানান, এ মামলায় পেয়ার আহমেদসহ (৬০) বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে মুরাদ হাসান বাবু নামে এক আসামি দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন।
আন্দোলনে মো. নাসির উদ্দিনকে হত্যাচেষ্টা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুস শুক্কুর জানান, এ মামলায় মো. ইকবাল হোসেন ওরফে সবুজসহ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।