বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেছেন, যারা পেশাদার সাংবাদিকতাকে দাফন-কাফন করে কবরস্থ করেছেন, তাদের অবশ্যই একটি হিসাব-নিকাশ হওয়া উচিত। আমরা যদি পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে পারতাম, তাহলে জাতীয় প্রেসক্লাবের মতো জায়গায় সাধারণ সম্পাদক কেন একবার একেক সীমান্তে ধরা পড়েন?

গতকাল মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ফেনী শহরের একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, আমরা যারা সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে থাকি, তাদের জন্য এটি লজ্জার বিষয়। আগামীতে আর যেন এমন ফ্যাসিবাদের উর্বর সাংবাদিক তৈরি হতে না পারে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

তিনি বলেন, আজ আমরা যে মুক্ত পরিবেশে কথা বলছি, সেটির জন্য অনেকেই জীবন দিয়েছেন। বিশেষ করে ঢাকার বাইরে একদিনে একক জেলা হিসেবে সর্বোচ্চ শহীদ হয়েছে এ ফেনীতে। তাদের শাহাদাৎ বরণের মধ্য দিয়েই মূলত এ মুক্তি লেখা হয়েছে। এটি সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে।
এই সাংবাদিক নেতা বলেন, ফেনীতে যেদিন নয়টি লাশ পড়লো, তার পরের দিনই বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছে। সেদিনের ঘটনা দেশ ছাড়িয়ে বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছিল। যারা এই হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিল, আজকে তারা কোন গর্তে পলায়ন করেছে?

মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আরো বলেন, সাংবাদিকতার উর্বর ভূমি ফেনী। সেই ঐতিহ্য রক্ষায় আমরা কতটুকু ভূমিকা পালন করেছি? আত্মসমালোচনা করলে আমিও হয় তো যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারিনি।

তিনি বলেন, যারা সাংবাদিকতায় পুরো জীবন বিলিয়ে দিয়ে শেষ বয়সে এসে অসহায় অবস্থায় থাকেন, সন্তানদের দ্বারা উপেক্ষিত হন, ওষুধপত্র কেনার মত যাদের সামর্থ্য থাকে না, তাদের অবসরকালীন এবং প্রবীণ সাংবাদিকদের মাসিক একটি ভাতা দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে ৬৫ না কি সত্তোরোর্ধদের এটির আওতায় আনা হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। বাস্তবায়ন করা গেলে এটি একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হবে।

মুহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, পেশাদার সাংবাদিকদের ডাটাবেজ তৈরির ব্যাপারে কথা চলছে। যদিও এর আগে প্রেস কাউন্সিল থেকে সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এ ধরনের একটি ডাটাবেজ তৈরি করার কথা বলেছিল। তবে আমরা সেজন্য করব না। পেশাদার সাংবাদিকদের কল্যাণে যেন সুদূরপ্রসারী একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা যায়, সেজন্য আমরা একটি তথ্য ভান্ডার তৈরি করব।

দৈনিক সংগ্রামের প্রতিনিধি একেএম আবদুর রহিমের সভাপতিত্বে ও যমুনা টিভির স্টাফ রিপোর্টার আরিফুর রহমানের পরিচালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক আবু তাহের, দৈনিক ফেনীর সময় সম্পাদক মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আনোয়ার হোসেন পাটোয়ারি, জেলা তথ্য কর্মকর্তা আল আমিন, জেলা জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আ.ন.ম আব্দুর রহিম প্রমুখ।

অনুষ্ঠান শেষে ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর জেলার ৩২ জন সাংবাদিককে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে অনুদান তুলে দেন অতিথিরা। এ সময় ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।