ফেনীতে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সময় শহরের জেল রোডে টমটম চালক হত্যা মামলায় দায় স্বীকার করেননি ফেনী-৩ আসনের সাবেক সংসদ রহিম উল্লাহ। গতকাল মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) ৫ দিনের রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। একই মামলায় গ্রেপ্তারকৃত আসামি এমপি নিজাম হাজারীর পিএস হিসেবে পরিচিত ফরিদ মানিক, ফেনী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি লিটন এবং ফেনী সদরের ছনুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল হক রিফাতও রিমান্ডে জাফর হত্যার নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেছে।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানার উপপরিদর্শক নাজমুল হাসান তানিম জানান, গতকাল রিমান্ড শেষে তাদের ৪ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেননি।
রিমান্ডে রহিম উল্লাহ জাফর হত্যাকান্ডে নিজের জড়িত থাকার ব্যাপারে অস্বীকার করেছেন বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র দাবি করেছে, রিমান্ডে রহিম উল্লাহ জানিয়েছেন তিনি ঘটনার দিন ঢাকায় ছিলেন। স্থানীয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না, তিনি ত্যাগী নেতা ছিলেন। ফেনী সদর আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী বিরোধী ছিলেন ও জাতীয় সংসদেও তার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। এছাড়া এ হত্যায় অর্থ যোগানদাতার দায় রহিম উল্লাহ স্বীকার করেননি।
ওই সূত্রটি আরও জানায়, রিমান্ডে নিজাম হাজারীর পিএস হিসেবে পরিচিত ফরিদ মানিকও জাফর হত্যা নিজের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। রিমান্ডে নিজাম হাজারীর চাকুরী করতেন বলে জানিয়েছেন মানিক। এছাড়া এ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার অপর দুই আসামি ফেনী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি লিটন ও ফেনী সদরের ছনুয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল হক রিফাতও এ হত্যাকান্ডে নিজেদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তারা কেউ গণহত্যায় গুলি ছোঁড়েননি।
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর ফেনীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে টমটম চালক জাফর আহাম্মদ (৫৩) হত্যা মামলায় সাবেক এমপি হাজী রহিম উল্লাহসহ উক্ত চারজনের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ আগস্ট শহরের ট্রাংক রোডে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে টমটম চালক জাফর আহাম্মদ স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণ করেন। আন্দোলনে তার অংশগ্রহণের বেশ কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন অনলাইনে প্রকাশ হয়। ওইদিন শর্শদি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানে আলম ভূঁইয়াসহ আরও ১০-১১ জন আসামি জাফরের বাড়িতে গিয়ে তার অনুপস্থিতে হত্যার হুমকি দেন। ভয়ে স্ত্রী আছিয়া বেগম স্বামীকে সেদিন বাসায় আসতে নিষেধ করেন। জাফরও তার স্ত্রীর কথামতো সেদিন আর বাসায় যাননি। পরদিন ৪ আগস্ট দুপুরের দিকে জাফরকে ফেনী শহরের পুরাতন জেল রোডস্থ জেলা কারাগারের সামনে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়। স্থানীয়রা রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় গত ৫ সেপ্টেম্বর নিহত জাফরের স্ত্রী আছিয়া বেগম বাদী হয়ে ২০৫ জনের নামোল্লেখ ও আরও ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলায় উক্ত আসামীরা ছাড়াও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফেনী-৩ আসনের সাবেক এমপি লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও ফেনী-২ আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে।