পরশুরামের মুহুরী ও কহুয়া নদীর তীব্র ভাঙনে স্থানীয় মানুষদের মাঝে আতঙ্ক বেড়েছে। ইতোমধ্যে বন্যায় মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বেড়িবাঁধের ৯৫টি স্থানে ভাঙনের ফলে বহু বসতি বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া পরশুরামের পূর্ব অনন্তপুর ও দক্ষিণ কোলাপাড়ায় নদী ভাঙনে আরও বহু পরিবার ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কা করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে ওইখানে ভাঙনের বিষয়ে তারা জানে না।

গতকাল মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পরশুরাম বাজারে মুহুরী নদীর (গাঙ্গ হীরা) পাশে পুর্ব অনন্তপুর গ্রামে প্রায় ৪০টি পরিবারের বসবাস। এখানে কহুয়া নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে মুহুরী নদীতে মিশেছে। স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক বছরে ভাঙনে এখানকার প্রায় ৫০ একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া সাম্প্রতিক বন্যায় ঢলু মিয়া, মমতাজ মিয়া, মফিজুর রহমান, অহিদুর রহমান, নুর মিয়া, রবিউল আলম, শাহ আলম ও রিপনের ভিটেবাড়ি নদীতে বিলীন হওয়ায় পরিবারগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

ভিটেবাড়ি হারানো নুর মিয়া জানান, ঘরবাড়ি জমি নদীতে গেছে। গত দুই মাস ধরে পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় আছি। আয় নেই, ৬ সদস্যের পরিবার নিয়ে কষ্টে রয়েছি।

দক্ষিণ কাউতলী মৌজার ম্যাপে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে মুহুরী নদীর বেড়িবাাঁধের পাশে বিভিন্ন দাগের জমি মুহুরী নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। জমি, বাগান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে স্থানীয় মানুষ। প্রতিদিন ভাঙনের তীব্রতা বাড়ায় ভিটেমাটি হারানোর আশঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের।

স্থানীয় ব্যবসায়ী মোশারফ হোসেন জানান, গত কয়েক বছরে আমাদের দক্ষিণ কাউতলী মৌজার ৮/৯ কানি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এপারে ভেঙে ওপারে চর যে জেগে উঠেছে সেগুলো আমাদের জমি।

নদী পাড়ের বাসিন্দা কাজী নুরুল করিম জানান, যে কোনো সময় বাড়ি জমি নদীতে ভেঙে পড়তে পারে। আমরা খুব আতঙ্কে আছি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কহুয়া নদীর পাশে দক্ষিণ কোলাপাড়া গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবার ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। বন্যায় নদী পাড় ভেঙে কয়েকটি পরিবারের জমি, টিউবওয়েল ও টয়লেট নদীতে পড়েছে। কহুয়া নদীর পাশে জসিম উদ্দিনের বাড়ি। তিনি জানান, বাড়ির যে জায়গাটুকু বাকি আছে, তাও যে কোন সময় নদীতে ভেঙে পড়তে পারে।

দক্ষিণ কোলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৌলভী মো. নুরুল্লাহ জানান, কহুয়া নদীর পাশে যদি দ্রুত ব্লক বসানো না হয় তাহলে পরশুরাম থানা, স্কুলসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রাশেদ শাহরিয়ার দৈনিক ফেনী’কে বলেন, নদী ভাঙনের বিষয়টি আমাদের কেউ জানায়নি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একজন সেকশন অফিসারকে দায়িত্ব দিচ্ছি। সংশ্লিষ্ট ভাঙন এলাকা পরিদর্শনের পর প্রতিবেদন পেলে ভাঙনরোধে দ্রত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।