আজ জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। দুই দিন আগে শহরে দুর্ঘটনায় ফেনী সরকারি কলেজের ছাত্র মাসুদ নিহত হয়েছে। পুলিশ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত এবং ৪৩ জন আহত হয়েছে। এসব ঘটনায় বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে ৪৩টি এবং সাধারণ ডায়রি হয়েছে ৫টি।

প্রতি বছর নিরাপদ সড়ক দিবসটি পালিত হলেও এর লক্ষ্য কতটুকু অর্জিত হয়েছে তার নির্ধারণ করা যায়নি। তবে, দৈনিক ফেনীর একটি জনমত যাচাইয়ের মতামত হচ্ছে, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে চালক ও পথচারীদের সচেতনতা কাম্য পর্যায়ে তৈরি হয়নি। চালকেরা সচেতন না হওয়ায় দূর্ঘটনায় প্রাণহানী ঘটছে। হাইওয়ে পুলিশের মাধ্যমে সুফল নিয়েও রয়েছে মিশ্রপ্রতিক্রিয়া। এ প্রসঙ্গে উল্টো সামনে উঠে এসেছে হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী ও হয়রানি অভিযোগ। এসব অভিযোগ করছেন চালক এবং পরিবহন মালিক সমিতি।

সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে না থাকার কারণ প্রসঙ্গে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ফেনী জেলার সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান দারা বলেন, দুর্ঘটনার জন্য প্রধানত চালক দায়ী। সকল চালকের যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকা, অনেক চালকের নুন্যতম শিক্ষা নেই, সড়কে যানচলাচলে ব্যবহৃত চিহ্নগুলো না চেনা দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়া সড়ক-মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি, আঞ্চলিক সড়কে বেপরোয়া অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা এবং চালকদের বেপরোয়া গতির মানসিকতা দুর্ঘটনাপ্রবণ করে তোলে। এরপর যাত্রীর অসচেতনতা।

দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে করণীয় প্রসঙ্গে নিসচা ফেনীর সাধারণ সম্পাদক বলেন, অস্থায়ী কার্যালয়ে চালকদের তথ্যগত প্রশিক্ষণ নিয়মিত চলছে। চালকদের সঠিকভাবে গড়ে তোলা গেলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমবে। তাদের বলা হয়ে থাকে, পথচারী সচেতন নয়, এটি বিবেচনায় রেখেই সড়কে গাড়ি চালাতে হবে।

সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে ডোপটেস্ট গান ও মাত্রাতিরিক্ত গতি নিয়ন্ত্রণে স্পীড গান রয়েছে মহিপাল হাইওয়ে পুলিশ ও ফাজিলপুর হাইওয়ে পুলিশের কাছেও। পুলিশ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এ যন্ত্রগুলো যথাযথ ব্যবহার করছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।

কুমিল্লা হাইওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মাসুম সরদার বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনা রোধে তৎপর রয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। তৎপরতার অংশ হিসেবে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে স্পিডগানের মাধ্যমে গাড়ির গতি পরীক্ষা করা হয়। ওই সময় অতিরিক্ত গতিতে চলাচলকারী গাড়ির চালকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। চাঁদাবাজীর প্রসঙ্গে তিনি বলেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সক্ষম সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। যেকারণে পুলিশ সদস্যের চাঁদাবাজী করা কোন সুযোগ নেই। এছাড়াও পুলিশের গায়ে বডি অন ক্যামেরা রয়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত মহিপাল হাইওয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহত হয়েছে। এর বিপরীতে ১৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি চার্জশীট প্রদান করা হয়েছে।

ফাজিলপুর হাইওয়ে পুলিশ চলতি বছরের ৯ মাসে ২৬ জন ছিনতাইকারী গ্রেফতার, ১ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবা ও ৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। ফাজিলপুর হাইওয়ে থানার ইনচার্জ মোহাম্মদ রাশেদ খাঁন চৌধুরী জানান, চলতি বছরে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১৯টি দুর্ঘটনার তথ্য রেকর্ড করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ১৮জন ও আহত হয়েছে ৩৫ জন। বিভিন্ন অপরাধে পরিবহণকে মামলা দেওয়া হয়েছে ১হাজার ৭২৬টি। সিএনজি আটোরিক্সা আটক করা হয়েছে ১হাজার ৭৩৪টি। দুর্ঘটনারোধে ডোপটেস্ট ও স্পীড গান ব্যবহার করা হচ্ছে।

মহিপাল হাইওয়ে পুলিশের ওসি মোঃ মোস্তফা কামাল বলেন, মহাসড়কে ছিনতাই ও ডাকাতি রোধে পুলিশ সংকট রয়েছে। চালক হয়রানি ও ক্যাশিয়ার নিয়োগ করে চাঁদাবাজি বিষয় অস্বীকার করেন। দ্রুতগতিতে গাড়ী চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। জনগন সচেতন না হলে দুর্ঘটনা রোধ করা অসম্ভব।