সোনাগাজী পৌরসভায় ব্যবসায় আধিপত্য ধরে রাখার চেষ্টায় আব্দুর রহমান নামে এক নওমুসলিমের উপর হামলার অভিযোগ উঠেছে মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম নামে অপর এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে চাইলে পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ করছেন আব্দুর রহমান। শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ১১টার দিকে সোনাগাজী পৌরসভার তাকিয়া রোডে এই ঘটনা ঘটে।

আব্দুর রহমান নামে ওই নওমুসলিম সোনাগাজীতে সম্প্রতি এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এর আগে তিনি মোঃ মুজাহিদুল ইসলামের মুজাহিদ স্টোরের ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন।

আব্দুর রহমান জানান, মুজাহিদ স্টোরের মালিকের অনুরোধে তার দোকানে ম্যানেজারের চাকুরি করতাম। চাকুরীর শর্ত ছিলো ম্যানেজারের কাজ করা এবং মাঝে মধ্যে বাসা বাড়িতে সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু তিনি আমাকে দিয়ে সারাক্ষণ বাইরে সিলিন্ডার পৌঁছে দেওয়ার কাজ করাতো। এছাড়া বাকীতে বিক্রি করা গ্যাস সিলিন্ডারের টাকা আদায় করতে না পারলে আমার সাথে অসদাচরণ ও নওমুসলিম-মুনাফিক বলেও প্রতিনিয়ত তিরস্কার করতেন। এক পর্যায়ে আমি ওই চাকুরী ছেড়ে দিয়ে নিজের চেষ্টায় সোনাগাজীতে গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির ব্যবসা শুরু করি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মুজাহিদ এবং তার মা। আমার ব্যবসা বন্ধের জন্য পৌরসভা, বাজার বণিক সমিতি এবং ফায়ার সার্ভিসের কাছে অভিযোগ করে বন্ধের চেষ্টা চালান তারা। এতে কাজ না হওয়ায় আমার পারিবারিক বিষয় নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মাধ্যমে চাপ দিতে থাকে।

তিনি আরও জানান, গত শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সকালে মুজাহিদ স্টোরের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। এসময় মুজাহিদের মা আমাকে ডেকে মুজাহিদের নামে বদনাম করেছি বলেই দুটি থাপ্পড় লাগিয়ে দেন। এরপর দোকান থেকে একটি লোহার রড নিয়ে বের হয়ে মুজাহিদ আমাকে মারতে থাকে। পরে আশপাশের লোকজন আমাকে উদ্ধার করে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। ইতোমধ্যে ঘটনার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আব্দুর রহমান থানায় প্রতিকার চাইলে মামলা না নেওয়ার অভিযোগ করেন। আব্দুর রহমান বলেন, ঘটনার পর দুপুরের দিকে পুলিশ মুজাহিদকে আটক করে। সন্ধ্যায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে আমি থানায় মামলা করতে গেলে প্রথমে ওসি মামলা নেবেন বলে জানান। এসময় মুজাহিদের মা আয়েশা খাতুন উপজেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিনকে সাথে নিয়ে থানায় আসেন। পরে গিয়াস উদ্দিন ওসিকে মামলা নিতে নিষেধ করেন। ওসি তার কথামত মামলা না নিয়ে উল্টো আমাকে শাসায়। এরপরও আমি মামলার ব্যাপারে অটল থাকলেও গিয়াস উদ্দিনের লোকজন থানার ভেতরে আমাকে নানা হুমকি দেয়। পরে আমি থানা থেকে বেরিয়ে আসি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বাবু স্টোরের মালিক বাবু বলেন, নওমুসলিম আব্দুর রহমান গত ৭-৮ দিন আগে নতুন দোকান দিয়েছে। আমার দোকান থেকে গ্যাসের সিলিন্ডার নিয়ে তিনি বিক্রি করতেন। মুজাহিদ ব্যাপারটি জানার পর আমার দোকানে এসে আব্দুর রহমানকে মালামাল দিতে নিষেধ করেন। ঘটনার দিন মুজাহিদের মা গ্যাস কেন তার কাছে বিক্রি করি বলে চিৎকার করতে থাকে। এরপর আব্দুর রহমান মুজাহিদের দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তাকে ডেকে চড়থাপ্পড় দিতে থাকেন এবং মুজাহিদ লোহার রড দিয়ে তাকে পেটাতে থাকে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মুজাহিদের দোকানটি খালের পাড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের খাস জায়গার উপর অবৈধভাবে নির্মিত। দোকানটি উচ্ছেদ করা নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ইজারা গ্রহীতার সাথে একাধিকবার ঝামেলা হয়েছিল। দখল টিকিয়ে রাখতে মুজাহিদ ও তার মা আয়েশা খাতুন ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর কাছে গেলে রক্ষা পান। এছাড়া মুজাহিদের বিরুদ্ধে বন্যাকালীন সময়ে গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহ সংকটের অযুহাতে দ্বিগুন মুল্যে বিক্রির অভিযোগে একাধিকবার অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেছে প্রশাসন।

এ প্রসঙ্গে জানতে মুজাহিদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দোকান থেকে বের হওয়ার পর সে আমার ক্রেতাদের তার দোকানে টাকা কম রাখবে বলে নিয়ে যায় এবং আমার নামে বদনাম করে। আমার মা এসবের কারণ জিজ্ঞেস করায় তার গায়ে হাত তোলার কারণে আব্দুর রহমানকে মেরেছি। আমি তখন স্থির থাকতে পারিনি। আমার দোকানঘর খাস জায়গায় হলেও এটি আমার বাপ দাদার সম্পত্তি। আমার দখলে আছে। অন্য কেউ ইজারা নিলেও যাদের কাছ থেকে নিয়েছে তারা তাকে পারলে দখল বুঝিয়ে দিক। কাগজ আমার কাছে আছে। আব্দুর রহমান আমার দোকানের কর্মচারী ছিলো। বন্যার সময় আমার বিরুদ্ধে বেশি দামে গ্যাস বিক্রির অভিযোগ মিথ্যা। আমার কাছে সকল প্রমাণ রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াস উদ্দিন জানান, বিষয়টি সমাধান করা হয়েছে। সমাধানের ব্যাপারে জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিবেদককে বলেন, আপনাকে কৈফিয়ত দিতে হবে নাকি? এরপর তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

থানায় মামলা গ্রহণ না করার অভিযোগ প্রসঙ্গে সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুজ্জামান দৈনিক ফেনীকে বলেন, ঘটনার পর মুজাহিদকে থানায় আনা হয়। এরপর সন্ধ্যায় উভয় পক্ষের লোকজন বিষয়টি সমাধান করবেন বলার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মামলা রুজু করার জন্য দাবি করেলেও সেটি বিবেচনা করা হলো না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, মামলা করতে চাইলে এখনো নিবো।